• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

ইশতেহারে কিঞ্চিত আলোকপাত

  • মহিউদ্দিন খান মোহন
  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ইশতেহার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো ইশতেহারের মাধ্যমে ভোটে জিতলে তারা কী করবে তার বিবরণ জনগণের সামনে উপস্থাপন করে থাকে। বিশ্বব্যাপী এটা এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ফলে নির্বাচন এলেই মানুষ উন্মুখ হয়ে থাকে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারে কী বলে তা জানার জন্য। ইশতেহার থেকেই জনসাধারণ আন্দাজ করার চেষ্টা করে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কোন দল কী করবে। বলা যায়, ইশতেহার থেকে রাজনৈতিক দলগুলো দৃষ্টিভঙ্গির একটি চিত্র জনগণের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

অতীতের মতো এবারো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। দেশবাসী মূলত প্রধান দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ইশতেহারের অপেক্ষায় থাকে। তবে এবার এ ক্ষেত্রে বাড়তি যোগ হয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার। গত ১৭ ডিসেম্বর হোটেল পূর্বাণীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। পরদিন সকালে সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে আওয়ামী লীগ এবং ওইদিনই বিএনপির ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। এ তিনটি ইশতেহার এখন আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু। দলগুলো তাদের ঘোষিত ইশতেহারের কতটা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে বা আদৌ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে কি-না, তা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। একই সঙ্গে চলছে ঘোষিত ইশতেহারগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ। অবশ্য নির্বাচনী ইশতেহারে কোন রাজনৈতিক দল কী প্রতিশ্রুতি দিল না দিল তা নিয়ে আমজনতার তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হলো কোন দল তাদের ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা দিতে পারবে, সমাজকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে পারবে, জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারবে ইত্যাদি। ইশতেহারে বর্ণিত মুখরোচক প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। তারপরও রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষিত ইশতেহারের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। সাধারণ মানুষের কাছে তা তেমন গুরুত্ব না পেলেও এর প্রভাব যে নির্বাচনে পড়ে না তা নয়। বরং ইশতেহারভিত্তিক প্রচারণা অনেক সময় ভোটের বাজারের হাওয়া ঘুরিয়ে দেয়। 

ঘোষিত তিনটি নির্বাচনী ইশতেহারের বিস্তারিত বিশ্লেষণ সঙ্গত কারণেই এখানে সম্ভব নয়। তবে মোটা দাগে কিছু আলোচনা করা যায়। তাছাড়া বিশেষ কয়েকটি বিষয় ছাড়া জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে সবগুলো ইশতেহারে প্রায় একই কথা বলা হয়েছে। যেমন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার সুরক্ষা, তরুণদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার, বৈদেশিক সম্পর্ক, শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তাদের ইশতেহারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ রেখেছে। অবশ্য এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দলগুলোর নিজস্ব চিন্তাভাবনার পার্থক্য ইশতেহার ফুটে উঠেছে। তবে সেটা কোনো সমস্যা নয়। কোন খেলোয়াড় গোল কীভাবে দিল সেটা বড় কথা নয়, গোল কয়টা দিতে পারল সেটাই বিবেচ্য বিষয়। কেউ গোল দেয় ডান পায়ের শটে, কেউ দেয় বাঁ পায়ে। তাতে কী?  গোল দেয়াই যেখানে খেলার মুখ্য উদ্দেশ্য, সেখানে সরাসরি শট হোক কিংবা হোক কর্নার শট থেকে তা দেখার বিষয় নয়। তেমনি জাতীয় ইস্যুগুলোকে কোন দল কীভাবে দেখছে বা তা বাস্তবায়নে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে তা নিয়ে বিতর্কের কিছু আছে বলে মনে হয় না। দেখার বিষয় হলো তারা জাতীয় তথা জনগণের সমস্যা দূরীকরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টিকে কতটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে দুটি বিষয় বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রথমত তারা বলেছে, ঐক্যফ্রন্ট সরকার গঠন করতে পারলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ব্যতীত সরকারি সব চাকরিতে প্রবেশের কোনো বয়সসীমা রাখবে না। এ ঘোষণাকে প্রায় সবাই অবিবেচনাপ্রসূত ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে অভিহিত করেছেন। কেননা এর ফলে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নতুন জটিলতা দেখা দেবে। যে কোনো বয়সের মানুষ যদি সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়, তাহলে শিক্ষিত তরুণদের জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশের দরজা আরো সঙ্কুচিত হবে। দ্বিতীয়ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখা। এক্ষেত্রে অনেকেই স্ববিরোধিতা দেখছেন। কেননা ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে যে দলকে অভিহিত করা হয়, সে জামায়তে ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় অংশীদার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত। নিবন্ধন না থাকায় তারা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। যদিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাদের প্রার্থিতা স্থগিত আছে। রিটের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ওপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। যাহোক, ঐক্যফ্রন্ট সরকার গঠন করতে পারলে ধানের শীষে নির্বাচিত জামায়াত নেতারাও সে সরকারের অংশীদার হবেন। তো সে সরকার কীভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখতে পারবে তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। অবশ্য ‘রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার’ অঙ্গীকার করে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহারে একটি নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে বলা যায়। যদিও সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণই। তাছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে কোনো ব্যক্তি পর পর টানা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকেই এ প্রস্তাবনাকে ওয়ান-ইলেভেনের সময় উত্থাপিত কথিত সংস্কার প্রস্তাবের প্রতিফলন হিসেবেই দেখছেন। যদি তা বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। আবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার বিষয়টিও একই জায়গায় আটকা। এটা করতে গেলেও সংবিধান সংশোধন করার প্রয়োজন পড়বে।

এদিকে বিএনপি ঘোষিত ইশতেহারের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের প্রায় হুবহু মিল থাকার বিষয়টি কারো নজর এড়ায়নি। তবে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ প্রসঙ্গে তাতে কিছু বলা হয়নি। এর কারণ অবশ্য অনুমান করা কষ্টকর নয়। এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য, দুই মেয়াদের বেশি কারো প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত না হওয়া, গণভোট পদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তন, সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নেওয়া, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না রাখা ইত্যাদি প্রস্তাবনা ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারেরই প্রতিধ্বনি যেন।

আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে, তাতে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার দিকে তাদের খেয়াল রাখতে হয়েছে। ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন ভুলত্রুটির জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এছাড়া ইশতেহারে অন্যান্য যেসব বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে তা এখানে সবিস্তারে উল্লেখ প্রয়োজন বোধ করছি না। কেননা, দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, আইনশৃঙ্খলা, নিরাপদ সড়ক, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ার যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে তারা গত দশ বছর কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতে আরো করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিগত দিনগুলোতে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তারা যেসব কাজ করেছেন দেশবাসীর কাছে তা দৃশ্যমান এবং তার ভিত্তিতেই জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত ভোটের মাধ্যমে ব্যক্ত করবে।

ঘোষিত ইশতেহারগুলো নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা এ সম্পর্কে তাদের সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন,‘ ইশতেহার হচ্ছে জনগণের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার। যদিও এসব অঙ্গীকারের পুরোটা বাস্তবায়ন হয় না। তবে যারা সরকার গঠন করে তারা লক্ষ্য অনুযায়ী দীর্ঘ মেয়াদে প্রশাসন সাজিয়ে নিতে পারে। আবার জনগণও উন্নয়নের একটা ধারণা পেয়ে থাকে।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সুযোগ হয় জনগণের সামনে অঙ্গীকার করার। দলগুলো সুন্দর সুন্দর বিষয় সাজিয়ে গুছিয়ে জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করে। বিভিন্ন দেশেও এমন হয়। বাংলাদেশেও হচ্ছে। সম্প্রতি এটা বেড়েছে। তবে নির্বাচনী ইশতেহার বা অঙ্গীকারের কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা দেখার বিষয়’ (সমকাল, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮)।

মূলত কথাটা সেখানেই। নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণকে স্বপ্ন দেখানো যতটা সহজ, তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ততটা সহজ হয় না কখনোই। তাছাড়া জনগণকে দেওয়া ওয়াদা ভুলে যাওয়া রাজনীতিকদের অভ্যাসের মধ্যেই পড়ে। এজন্য কথার বরখেলাপের উদাহরণ হিসেবে অনেকে ‘নির্বাচনী ওয়াদা’ শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্ট-বিএনপি তাদের ইশতেহার ঘোষণা করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নিঃসন্দেহে। জনসাধারণ এখন পর্যালোচনা করে দেখবে যেসব প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে ব্যক্ত করা হয়েছে, তা কে কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে। তাছাড়া দুই পক্ষই একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। অবশ্য ঐক্যফ্রন্ট না থাকলেও তাদের মূল রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি তো ছিলই। ফলে দুই পক্ষের অতীত কার্যকলাপও জনসাধারণের জানা আছে। সুতরাং কথার ফুলঝুরি সাজিয়ে বাজিমাত করা বোধহয় অতটা সহজ হবে না। আবার এটাও ঠিক যে, ক্ষমতায় গিয়ে দলগুলো ‘রাষ্ট্রীয় কাজে’ এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে, নির্বাচনের আগে ইশতেহার মারফত তারা

জনগণের কাছে কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, অনেক সময় তা বিস্মৃত হয়ে যায়।

একটি বিষয় উল্লেখ্য মনে করছি। যে ইশতেহারগুলো ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে দল বা জোটগুলো ভোটে জিতে সরকার গঠন করতে পারলে কী কী করবে, সে বিষয়গুলোই তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু যদি তারা হেরে যায় অর্থাৎ সরকার গঠন করতে না পারে, তাহলে কী করবে তা বলা হয়নি। বিরোধী দলে গেলে তারা কি সরকারকে সহযোগিতা করবে, নাকি সরকারকে বিব্রত করা বা গদি থেকে টেনে নামানোর জন্য নেতিবাচক রাজনীতির অনুশীলন করবে, জনগণের তা গোচরে থাকা দরকার। কেননা নির্বাচনে জয়ের অপর পিঠেই রয়েছে পরাজয়। জয়ী হলে কী করবে তা জানানোর পাশাপাশি পরাজিত হলে তারা কোন ভূমিকা পালন করবে, সে ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত।

ভোট পাওয়ার জন্য প্রার্থী কিংবা দল বা জোট জনগণকে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলে সেসব ওয়াদার কথা তারা ভুলে যান। এই ভুলে যাওয়াটা জনগণের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। নির্বাচনে জয়-পরাজয় যা-ই হোক, রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের কাছে তাদের দায়বদ্ধ থাকার কথাটি স্মরণে রাখে, তাহলে আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক বায়ুপ্রবাহ শুরু হতে পারে- এমনটি মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

 

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads