• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স আতঙ্কের এক নতুন নাম

  • প্রমিত বনিক
  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাংলাদেশের মতো নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য খুব উদ্বেগের একটি বিষয়। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে কি আমরা যথেষ্ট সচেতন? অ্যান্টিবায়োটিক হলো অণুজীব বিশেষত ব্যাকটেরিয়াঘটিত বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহূত জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন স্কটিশ চিকিৎসক স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৯ সালে। বিংশ শতাব্দীর এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের ফলে আমরা সংক্রামকঘটিত রোগগুলোকে পরাস্ত করে একদিকে রোগগ্রস্তের সংখ্যা অন্যদিকে মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। সংক্রমণকারী অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়ার ওপর নির্ভর করে কোন চিকিৎসায় কোন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহূত হবে। কিন্তু আমাদের যথেচ্ছ ব্যবহার ও ভুল প্রয়োগের ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস না হয়ে বরং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে, যাকে বলা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। এটি এমন একাট অবস্থা নির্দেশ করে, যখন শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না।

১৯৪৫ সালে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তি-পরবর্তী ভাষণ প্রদানকালে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ওষুধটির অতিব্যবহার ও কম মাত্রায় ব্যবহারের ফলে জীবাণুরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে। আজ সাত দশক পর তার এ-কথা সত্য হতে চলেছে। বিশ্বের মোট ব্যবহূত ওষুধের ২১ দশমিক ৩ শতাংশই হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। আর মোট অ্যান্টিবায়োটিকের ৩০ শতাংশ ব্যবহূত হয় মানবদেহে এবং বাকি ৭০ শতাংশ ব্যবহূত হয় প্রাণীর স্বাস্থ্য চিকিৎসায়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১১টি দেশে বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে কতজন মানুষ মারা যায়, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সজনিত রোগে আক্রান্ত হয় ও প্রায় ২৩ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সজনিত কারণে প্রায় ৩০ কোটি লোক মৃত্যুঝুঁকিতে থাকবে। অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ায় গণোরিয়া, ক্যানসার, অস্ত্রোপচারসহ জটিল রোগের চিকিৎসা ক্রমাগতভাবে কঠিন হয়ে পড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ অবস্থাকে তুলনা করছে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হওয়ার আগের যুগের সঙ্গে। অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন, ওষুধ সেবনের পর ভালো বোধ করলে পূর্ণমাত্রায় সেবন না করা, সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা, অন্য কারো ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সেবন করা ছাড়াও নানা কারণে জীবাণুরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিকে রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়াগুলো শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ইতোমধ্যে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। তাই খুব দেরি হওয়ার আগেই সরকার ও সচেতন সমাজের উচিত সচেতনতা কার্যক্রম বেগবান করা এবং তা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়া। সেটি করতে ব্যর্থ হলে, আমাদের অবতীর্ণ হতে হবে জীবাণুর বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ের জন্য, যেখানে রোগগ্রস্ত ব্যক্তি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য কার্যকর ওষুধ পাওয়া যাবে না, ফলে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাবে ব্যক্তিটি। তাই আসুন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের এই আতঙ্ক থেকে দূরে থাকতে সচেতন হই এখনই।

 

লেখক : চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads