• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

অঙ্গীকার, ইশতেহার ও নির্বাচন

  • মামুন মুস্তাফা
  • প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারের একটি যোগসূত্র রয়েছে। যার মাধ্যমে ওই দলগুলোর মনোইচ্ছা প্রকাশ পায়। দেশ ও জাতিকে তারা কীভাবে সেবা দিতে পারে, উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে শুধু অঙ্গীকারের ফুলঝুরি ছড়ালেই হবে না, থাকতে হবে সদিচ্ছা। আর তাই নির্বাচনের পরে গঠিত নতুন সরকারের ক্ষেত্রে অতীতে দেখা গেছে যে, অনেক অঙ্গীকারই পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে আরো একটি বড় অন্তরায় হচ্ছে অপরিকল্পিত বাস্তববর্জিত প্রতিশ্রুতিমালা।

মূলত এসব কারণেই রাজনৈতিক ইশতেহারে গুণগত মান নিশ্চিতে সংস্কারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর এক অনুষ্ঠানে। সেখানে বিভিন্ন বক্তার আলোচনায় উঠে আসে যে, টেকসই ও গুণগত উন্নতি নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কারে হাত দিতে হবে। বর্তমান উন্নতি মূলত বিভাজিত উন্নয়নের ফল। যার দরুন প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও সামাজিক নিরাপত্তায় উন্নতি হয়েছে কেবল সংখ্যা ও পরিমাণের বিচারে। গুণগত মানের বিচারে আগের অবস্থানেই রয়েছে অর্থনীতি। সুতরাং আর্থ-সামাজিক বৈষম্য রুখতে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। নতুবা আগামীর তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবীতে আজকের প্রজন্মকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা দুষ্কর হয়ে পড়বে। অথচ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সেরকম কয়েকটি অঙ্গীকারমালা রয়েছে যা চোখ ধাঁধানো কিংবা মন রাঙানো বটে; কিন্তু তা বাস্তবসংলগ্ন কতটুকু, বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে বলা হয়েছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা থাকবে না। এটা কতখানি যুক্তিযুক্ত তা বিবেচ্য বিষয়। ঠিক একইভাবে ঐক্যফ্রন্টের অংশীজন হিসেবে বোধহয় বিএনপিও কিছুটা সংশোধনের মাধ্যমে বলেছে— দেশরক্ষা, পুলিশ ও আনসার ব্যতীত শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা থাকবে না। বিষয়টি অবশ্যই জনগুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা দরকার। আবার আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে জানিয়েছে— ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের উপরে সবাইকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে। এটি করতে হলে স্বাস্থ্য সেক্টরে যে উন্নয়ন ও সংস্কার জরুরি তা আছে কি-না, সেটি বিবেচনায় আনতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। যার ঘাটতি রয়েছে বিস্ময়করভাবে। গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে।

সেখানে শিশু ও সিনিয়র সিটিজেনদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি শুভচিন্তার প্রতিফলন বটে কিন্তু তা কতখানি বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি। একটু বিশ্লেষণী দৃষ্টি দিয়ে দেখলে এরকম ভোটার আকৃষ্ট করার মতো আরো অঙ্গীকার বিভিন্ন দলের ইশতেহারেই পাওয়া যাবে। যার বাস্তবায়ন কার্যত দুরূহ হয়ে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে। আর তাই শুধু ইশতেহার দেখে নয়— সুশাসন, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র রক্ষায় বিবেচনাপ্রসূত প্রার্থী বাছাই করতে হবে দেশের নাগরিকদের।   

রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ইশতেহারের পরিবর্তে একুশ শতকের পৃথিবীতে টিকে থাকতে দেশ ও জাতি গঠনে কার্যকর প্রতিশ্রুতি এখন প্রয়োজন। তথ্য-প্রযুক্তি ও অর্থনীতিনির্ভর এই পৃথিবীতে তাই প্রয়োজন দেশের যুবসমাজকে সঠিক কর্মপন্থায় উদ্বুদ্ধ করা এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। মনে রাখতে হবে, বছর বছর উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের উৎপাদনমূলক কাজে সম্পৃক্ত করা না গেলে জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে আমরা পিছিয়ে পড়ব। সুতরাং কেবল বড় প্রতিষ্ঠান নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। কেননা এসব প্রতিষ্ঠানে বেশিসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাছাড়া অনলাইন, ই-কমার্সের মতো ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, শিক্ষা ব্যবস্থাকে উদ্যোক্তা সৃষ্টির উপযোগী করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

রফতানি-আমদানি সূচকে কিংবা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়তো আশার সঞ্চার করছে; কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুণগত অবনমন হয়েছে। বিভাজিতভাবে বৈষম্যের ধারা দ্রুততম হয়েছে। এরও কারণ হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থানের অভাব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে এসব বিষয়ে জোর দেওয়া না হলেও নির্বাচিত সরকারকে এগুলোর ক্ষেত্রেই মনোনিবেশ করা উচিত বলে মনে করছি।

এ তো গেল ইশতেহার প্রসঙ্গ। কিন্তু আগামীর সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। অথচ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই যে সাংঘর্ষিক অবস্থানে রয়েছে প্রতিপক্ষ দলগুলো, সেখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। নির্বাচন কেবল ক্ষমতার পালাবদল নয়, একই সঙ্গে নাগরিকের মৌলিক অধিকারসহ সুশাসন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠারও ক্ষেত্র। আর সেটি সম্ভব না হলে বাহ্যিক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হতে পারে; কিন্তু সর্বজনীন কল্যাণ আসে না। আর তখনই রাষ্ট্র তার প্রকৃত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যাত্রারথ থেকে বিচ্যুত হয়।

আর তাই প্রচারণার শুরুতেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেভাবে সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তাতে দেশবাসী উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। যারা এসব ঘটনা সংঘটন করছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি যেসব প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বিরোধী দল হিশেবে বিএনপি সর্বত্র যেভাবে হামলা-মামলা, গুলিবিদ্ধসহ নাজেহালের শিকার হচ্ছে, তেমনি আওয়ামী লীগও কোথাও কোথাও প্রতিপক্ষের হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। দল কিংবা প্রার্থীর পরিচয় দেখলে চলবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিহিংসাপরায়ণতায় জড়িত সব পক্ষেরই দোষীদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি।

এসব অঘটনের জের ধরে পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখা যতটুকু না প্রশাসনের দায়িত্ব, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ব প্রার্থী কিংবা সমর্থকদেরও। কারণ যত রকমের আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়ে থাকে, তা কোনো না কোনো প্রার্থীর সমর্থনে অথবা অন্য কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সংঘটিত ঘটনা থেকে হয়ে থাকে। প্রার্থীরা যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেকে ও কর্মী-সমর্থকদের এই আচরণবিধি লঙ্ঘন থেকে বিরত রাখতে না পারেন, তাহলে প্রশাসনের পক্ষে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই অবস্থা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা, সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন ঘিরে যে কোনো সংঘর্ষ ও সংঘাতের ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনা সৃষ্টকারীর রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করা তথা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে সব প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো উচিত। প্রার্থীরাও বিধিবদ্ধ আচরণ করবেন। অন্যথায় আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধের তাৎক্ষণিক আইনি প্রতিবিধানের ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই। দেশবাসী চায় একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। আমরাও সেটাই প্রত্যাশা করি।

ইতোমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন নির্বাচন কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে নির্দেশনামূলক এক কর্মশালারও আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। কর্মশালায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের বলেছেন, ‘দল, পক্ষ, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রজ্ঞা ও মেধা খাটিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে হবে। কমিশন চায় একটি আস্থার নির্বাচন।’ হ্যাঁ, দেশবাসীও চেয়ে আছে সেই আস্থার নির্বাচনটি দেখার জন্যে। এটি স্বতঃসিদ্ধ যে, নির্বাচনকালীন সকল প্রশাসনযন্ত্র নির্বাচন কমিশনের অধীন ন্যস্ত থাকে। তাদের পরামর্শ, আদেশ-নির্দেশেই পরিচালিত হয় এই সময়ের সরকার ব্যবস্থা। তা-ই যদি হয়, তা হলে এত হিংসা, বিদ্বেষ, হামলা-মামলা নির্বাচনী রেশে থাকার

কথা নয়।

 একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার দায়িত্ব রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ভোটার, সমর্থকের দায়িত্বও অনেক। সেখানে অবশ্যই প্রধান ভূমিকা নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনার ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে যেসব কথা বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে অবশ্যই তা পালন করতে হবে। প্রশাসন যেন কোনো রকমের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় অবতীর্ণ না হয় সেটিই দেখতে চায় দেশের মানুষ। সিইসি ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে আরো দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যে, সংবিধান, জাতি, রাজনৈতিক দল ও ভোটারের কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন দায়বদ্ধ। নির্বাচনে ৬ শতাধিক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি মাঠে থাকবেন। বৈষম্যের ঊর্ধ্বে থেকে রাগ অনুরাগ প্রশ্রয় না দিয়ে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞা ও মেধা খাটিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে হবে।

একইভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে দেশের সব জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদেরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঠান্ডামাথায় বিচক্ষণতার সঙ্গে সবারই দায়িত্ব পালন করা উচিত। এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ বা সিদ্ধান্ত যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম না দেয়। সেদিকে যথাযথ নজর রাখতে হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ভোটাররাও শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার মানসে ধৈর্যসহকারে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সবমিলিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেশবাসীর আজ প্রত্যাশা। আর তা না হলে একটি কল্যাণকামী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

 

লেখক : কবি, সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads