• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

প্রতীকী ছবি

মতামত

শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

  • এ. টি. এম. মোসলেহউদ্দিন
  • প্রকাশিত ০২ জানুয়ারি ২০১৯

ঋতুর পরিক্রমায় এসেছে শীত। ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাস দিয়েছে আসন্ন শীত মৌসুমে দুটি শৈত্যপ্রবাহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। যার একটি জানুয়ারি মাসে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ওই সময় দেশের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে। তাই শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। গত বছর তীব্র শৈত্যপ্রবাহে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল। গত বছরের ৮ জানুয়ারি সোমবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী এটাই এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৮ সালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। শীতের এই তীব্রতায় দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষজন একটু বেশি আক্রান্ত হয়, এমনকি জীবনহানির মতো ঘটনাও ঘটে।

এখন বাংলা পৌষ মাস। মূলত পৌষ-মাঘ— এই দুই মাসেই আমাদের দেশে শীতের তীব্রতা অনুভূত হয় বেশি। তীব্র শীতের কারণে সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নানাভাবে বিঘ্নিত হয়। দেশের উত্তরাঞ্চল, হাওরাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকাগুলো তথা গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ অনেক কষ্ট পায়। বেড়ে যায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ। ফলে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে যে দুর্গতি নেমে আসে তা বর্ণনাতীত। বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারীদের কষ্টের সীমা থাকে না। খোলা আকাশের নিচে থাকা মানুষজন শীতের কষ্টে সারা রাত আগুন জ্বালিয়ে দিন পার করে। শীতের কারণে তাদের চোখের ঘুম যেন হারাম হয়ে যায়। দুস্থদের মধ্যে থাকে শীতবস্ত্রের জন্য হাহাকার।

তীব্র শীতের কারণে তৃণমূলের মানুষজন ঠিকমতো কাজে বের হতে পারে না। অনেকে ঠান্ডার ঝুঁকি নিয়ে বের হলেও কাজ করতে পারে না। ঘন কুয়াশার কারণে নদীপথ, আকাশপথ, মহাসড়কগুলোতে ঠিকমতো যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারে না। তাছাড়া যাত্রাপথে মানুষকে পড়তে হয় ঠান্ডাজনিত নানাবিধ প্রতিকূলতায়। শীতকালে বিকেল থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকার কারণে সন্ধ্যার পর পরই ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে চায় না মানুষজন। কাজে বের হতে না পারা বা কাজ করতে না পারার কারণে শ্রমজীবী মানুষজন তিন বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খায়। শ্রমজীবী নারীদের অবস্থাও করুণ রূপ ধারণ করে, সেই সঙ্গে শ্রমজীবী নারীদের মধ্যে যাদের ছোট ছোট বাচ্চা থাকে, তাদের কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এর মূল কারণ তাদের শীতবস্ত্রের নিদারুণ অভাব। আমাদের দেশ মধ্যম আয়ের দেশ হলেও ছিন্নমূল ও বিত্তহীনদের অবস্থার পরিবর্তন খুব একটা ঘটেনি, ফলে বাড়েনি তাদের ক্রয়ক্ষমতা। 

শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শীতবস্ত্র বিতরণের মতো সহযোগিতামূলক কার্যক্রম শুরু করে। শীত এলে গরিব মানুষজন এই সহায়তার আশায় থাকে। আমরা সাধারণত শীতকালে যে শীতবস্ত্র বিতরণ করি, বেশিরভাগই শহরাঞ্চল ও শহরাঞ্চলের কাছাকাছি এলাকাগুলোয়। গ্রামাঞ্চলে না যাওয়ার কারণে জেলা-উপজেলা সদরের কাছাকাছি অবস্থান করা কিছু লোক একাধিকবার এই সহায়তা পেয়ে থাকে। তাই এই সহায়তা কার্যক্রমের সুবিধা তৃণমূলের মানুষকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষের কাছে যেতে হবে। গ্রামাঞ্চলের গরিবদের কাছে শীতবস্ত্র পৌঁছানোর উদ্যোগ হাতে নিতে হবে। তাহলে এর সুফল সমভাবে পাওয়া যাবে।

প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য ঋতুর মতো শীতকালের আগমন ঘটে। মানুষের সাধ্য নেই প্রকৃতির এই নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসার। তবে শীতের প্রকোপের কারণে যেসব দুর্যোগময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা মোকাবেলা করার মতো শক্তি-সামর্থ্য সৃষ্টিকর্তা মানুষকে দিয়েছেন। যেহেতু শীতের তীব্রতায় প্রতি বছরই দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, সেহেতু এই সময়টায় ওই নির্দিষ্ট এলাকার মানুষসহ সারা দেশের অন্যান্য শীতার্ত মানুষের সহায়তায় সংঘবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যাশা থাকবে, যারা বিত্তশালী রয়েছেন, তারা সামর্থ্য অনুযায়ী শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্রসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবাসহ প্রয়োজন অনুসারে খাদ্যসামগ্রীও বিতরণ করবেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টা কখনো বৃথা যায় না। সবার প্রচেষ্টা হোক শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads