• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
অসহায় সুবর্ণচর, এ লজ্জা কার

গণধর্ষণ

প্রতীকী ছবি

মতামত

অসহায় সুবর্ণচর, এ লজ্জা কার

  • সেলিম আহমেদ
  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০১৯

ঘটনাটি যখন ঘটে ঠিক তখই পুরো বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে নৌকা প্রতীকের দল আওয়ামী লীগ। দেশে ২৯৯টি আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জোটগতভাবে ২৮৮ আসনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করেছে। হ্যাটট্রিক জয় করে রেকর্ড ভেঙে সরকার ঘটন করতে যাচ্ছে দলটি। দেশের জনগণ বিশেষ করে তরুণ সমাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অগাধ আস্থা ও বিপুল প্রত্যাশা রেখে অভূতপূর্ব রায় দিয়েছে। তারা আশা করে, নতুন সরকার তাদের প্রত্যাশা পূরণে অবিচল থাকবে। নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। পরপর তিনবার শপথ নেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন একজন, যা রেকর্ড। বিরোধী শিবিরের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সুষ্ঠু এ নির্বাচনে খুশি বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও।

জাতির এই আনন্দের মুহূর্তেই ন্যক্কারজনক এক ঘটনার জন্ম হলো সুবর্ণচরে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ওই গৃহবধূকে পাংখারবাজার ১৪নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে দেখে হুমকি দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন সমর্থক। পরে রাত ১২টায় তারা গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে। দরজা খুললেই স্থানীয় সন্ত্রাসী মোশারেফ, সালাউদ্দিন, সোহেল, হেঞ্জু মাঝি, বেচু, আবুল কালামের ছেলে সোহেল, জসীম, আবু, স্বপন, আনোয়ার, বাদশা আলম, হানিফ, আমির হোসেনসহ ১৫-১৬ সন্ত্রাসী ওই গৃহবধূকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য গালাগালি করে এবং তার স্বামীও ছেলে-মেয়েকে বেঁধে ফেলে। পরে অস্ত্র দেখিয়ে জোর করে গৃহবধূকে ঘরের বাইরে নিয়ে যায় এবং সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। মারধর করে তার স্বামী, সন্তানদেরও। সন্ত্রাসীদের চিনে ফেলায় তারা ওই গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যারও চেষ্টা করে। গৃহবধূকে ধর্ষণের এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এর বিচার হবে কি না তা সবারই অজানা।

আমাদের দেশে বিচার হয় শুধু সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করলে তার। সাংবাদিকরা যদি কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করে তাহলেই তড়িৎগতিতে হাতকড়া পরানো হয় হাতে। নেওয়া হয় রিমান্ডেও। এই তো বছরের ১ম দিন মঙ্গলবার ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্লাকে। নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সঠিক ও তথ্যভিত্তিক না হওয়ার অভিযোগে পত্রিকাটির খুলনা প্রতিনিধি হেদায়েত হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন খুলনার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী। ওই দিন দুপুরেই খুলনা প্রেস ক্লাবের বাইরে থেকে সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্লাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সাংবাদিক পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তাকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারক হেদায়েতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অথচ, এদেশের কত ব্যাংক লুটকারী, হত্যা মামলার আসামি, মাদক সম্রাট আর দুর্ধর্ষরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে। আইনের মারপ্যাঁচে পার পাচ্ছেন তারা। গ্রেফতার হন শুধু সাংবাদিকরা।

আমি সুবর্ণচরের ওই গৃহবধূ ধর্ষণের বিচার চাই না, চাইব না। কারণ, আমি সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার চেয়ে পাইনি। বিচার চেয়ে পাইনি তনু হত্যাকাণ্ডের, বিচার পাইনি মিতুসহ শত হত্যাকাণ্ডের। বিচার তো দূরের কথা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত কারা বা কেন হত্যা করা সেই ক্লুও উদ্ঘাটন করতে পারেনি আমাদের প্রশাসন। অতীতের রেকর্ড বলে এ ঘটনার বিচার না পাওয়ারও সম্ভাবনা বেশি। তাই, এ গৃহবধূ গণধর্ষণের বিচার চাইব না। শুধু জানতে চাইব একটি প্রশ্নের জবাব। মাত্র একটি প্রশ্নের? এই গণধর্ষণে লজ্জা কার? লজ্জা কি শুধু ওই ধর্ষিত গৃহবধূর পরিবার আর স্বজনদের? নাকি আপনার-আমার? নাকি এই রাষ্ট্রের?

 

লেখক : সাংবাদিক

selimnews18@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads