• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

ইলিশের জিনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে আনুক

  • প্রকাশিত ০৮ জানুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশের গৌরব সুন্দরবন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, পাট ও জামদানির মতো ইলিশও এখন কেবল বাংলাদেশের। গত বছর সেই স্বত্ব অর্জন করেছি আমরা পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরের কাছ থেকে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পেয়েছে এই রুপালি ইলিশ। আবার তার জীবনরহস্য উদঘাটিত হয়েছিল গেল বছর। তাও আবার আমাদের দেশেরই বিজ্ঞানীদের হাত ধরে। তাদের গবেষণা সম্প্রতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

বিশ্বখ্যাত জার্নাল বায়োমেড সেন্ট্রাল (বিএমসি) প্রকাশ করেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের জিন বিন্যাস বা জিনোম সিকোয়েন্স উদঘাটনের সেই গবেষণার নিবন্ধ। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘জিনোম অব টেনুয়ালোসা ইলিশা ফরম দ্য পদ্মা রিভার, বাংলাদেশ’ শীর্ষক নিবন্ধের মাধ্যমে একে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হলো।

এটি বাংলাদেশের জন্য এক অভূতপূর্ব সাফল্য। এই সাফল্য রচনায় যারা অগ্রগামী, তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম, অলি আহমেদ, অভিজিৎ দাস, তাসনিম এহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইলিশ গবেষক এম নিয়ামুল নাসের, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী আবদুল বাতেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং নিউক্লিওটাইড রসায়ন বিভাগের প্রধান ড. মং সানু মারমা ও পিটার ইয়ানকিভ।

ইলিশের জিন বিন্যাস উদঘাটনের ফলে ইলিশ কীভাবে সমুদ্রের লোনা পানি ও মিঠা পানি দুই জায়গাতেই বসবাস করে, এর রোগবালাই কী, বদ্ধ জলাশয়ে চাষযোগ্য কিনা, কেন এটি সুস্বাদু, এলাকাভেদে এর স্বাদ ভিন্ন কেন, পদ্মার ইলিশেরই বা স্বাদ বেশি কেন এবং এর স্বাদ ঠিক রেখে ইলিশ চাষ করা যাবে কিনা— এসব বিষয় জানা যাবে। এখন আমাদের বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার ইলিশের সেই বংশগতিকে উন্মোচিত করবে নিঃসন্দেহে।

সম্প্রতি আইএমইডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মা মাছ সংরক্ষণ আর জাটকা মাছ শিকার নিরুৎসাহিত করতে সরকারি প্রকল্পের কারণে প্রতিবছর বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে ইলিশের উৎপাদন এখন বেড়েই চলেছে। আমরা জানি, আমাদের জাতীয় সম্পদ ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বেশ কয়েক বছর ধরে জাটকা নিধন বন্ধে ইলিশের ৪টি অভয়াশ্রম এলাকা ঘোষণা করাসহ প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ এবং মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস সম্পূর্ণভাবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

আমাদের মৎস্যসম্পদের মোট ১০ শতাংশ এবং জিডিপির ১ শতাংশ ইলিশ থেকে আসে। এখন জিআই স্বত্ব অর্জনের ফলে ইলিশ রফতানিতে আমরা বেশি দাম পাব এবং আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাকা আরো মজবুত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, সেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবে ইলিশের এই জীবনরহস্য উদঘাটন। কেননা এর ভেতর দিয়েই দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে কর্মরত সংশ্লিষ্ট বিভাগ ইলিশের জন্ম, বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে আরো দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে স্বীকৃত ইলিশের জিন বিন্যাসে আন্তর্জাতিক এই সাফল্য অর্জনে নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের সাধুবাদ জানাই। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads