• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত হোক

লোগো ঢাকা ওয়াসা

মতামত

ঢাকা ওয়াসার মেগা প্রকল্প

স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত হোক

  • প্রকাশিত ০৯ জানুয়ারি ২০১৯

বর্তমানে ঢাকা নগরীর মাত্র ২০ শতাংশ নাগরিক স্যানিটেশন সুবিধা ভোগ করছে। এমন তথ্য জানিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের কোনো নগরীতেই মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। নেই স্যানিটেশন লাইন, নিরাপদ সংগ্রহ কেন্দ্র, পরিবহন ব্যবস্থা এবং মানববর্জ্য ও ময়লা পানি পরিশোধন কেন্দ্র। আর এসব বিবেচনায় সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসা রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বলা যায়, প্রকল্প ব্যয়ের ৯১ শতাংশ অর্থ দিচ্ছে এ সংস্থাটি।

এর মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা বেশ কয়েকটি ক্যাচমেন্ট পয়েন্ট, পয়ঃনিষ্কাশন লাইন, কঠিন বর্জ্য ও ময়লা পানি শোধন কেন্দ্র নির্মাণ করবে। আমরা মনে করি এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে অন্তত রাজধানী এলাকার অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের আওতায় আসবে। এর ফলে পানি ও বায়ুদূষিত রোগ থেকে এতদাঞ্চলের মানুষ রক্ষা পাবে। বিশ্বব্যাংকের ধারণাপত্র অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের পয়ঃনিষ্কাশন খাতের উন্নয়ন ঘটলেও তা এমডিজি’র লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়নি। এখনো দেশের ৩৯ শতাংশ মানুষ অনুন্নত টয়লেট ব্যবহার করে, তাও আবার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। এখনো সম্পদ বিবেচনায় নিচের দিকের ৪০ শতাংশ মানুষ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধিতে (ওয়াশ) নিকৃষ্টতম অবস্থানে রয়েছে।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তাই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন সুবিধা ও সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করে থাকে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। বিদেশি ব্যাংক এইচএসবিসি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইড তাদের অন্যতম। ‘এইচএসবিসি ওয়াটার প্রোগ্রাম’ শীর্ষক কর্মসূচির অধীনে দুই দফায় মেহেরপুরের গাংনী, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, খুলনার দাকোপ ও পাইকগাছ এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ২ লাখ মানুষকে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পৌঁছে দিতে কাজ করে চলেছে। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে ওইসব উপজেলায় প্রকল্পভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশুদ্ধ পানি ও পানির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সক্ষম করে গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়, কমিউনিটি সংস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোতে পানির নিরাপদ ব্যবহার টেকসই করার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে এবং অতিপ্রান্তিক ও দুর্গম এলাকাগুলোতে দুর্যোগ সহনীয় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এবং নিচু ভূমির এলাকাগুলোতে সুপেয় ও নিরাপদ পানি ব্যবহারের চ্যালেঞ্জটি ভিন্ন। তাছাড়া প্রান্তিক এলাকাগুলোর পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো এখনো ভঙ্গুর। সুতরাং কেবল স্যানিটেশন ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর বিভিন্ন রোগে ৩৫৬ কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে। অনুন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে উৎপাদনে ক্ষতি হচ্ছে বছরে ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে দুর্বল স্যানিটেশনের কারণে ক্ষতির পরিমাণ ৪০১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এমতাবস্থায় ঢাকা ওয়াসার এই মেগা প্রকল্প দেশের জনস্বাস্থ্য সেবায়, বিশেষত নাগরিকের স্যানিটেশন সুবিধার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্যানিটেশন ব্যবস্থায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আশা করি বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads