• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

কোথায় দাঁড়িয়ে একুশ শতকের সমাজ

  • সোহাগ মনি
  • প্রকাশিত ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

নারী মানেই যেন না-বোধক কোনো কিছু! সবকিছুতেই কী যেন এক সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে আমরা আবদ্ধ এখনো। নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশে হলেও প্রান্তিক পর্যায়ে নারীর প্রতি আদিকালের মনোভাব, মানসিকতা কতটুকু আমরা পাল্টাতে পেরেছি? আমাদের মগজে কি নারী শব্দটি এখনো মানুষ শব্দের বিপরীত নয়? আমরা কেন ভাবতে পারি না সামগ্রিক দিক থেকে কোনো নারী কিংবা কোনো পুরুষ পিছিয়ে নয়? 

প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে নারীকে মনে করা হতো গঠনগত দিক দিয়ে দুর্বল, তারা তাদের পূর্বজন্মের পাপের ফল হিসেবে নারী হয়ে জন্মায়। এটা তাদের হীনতা, তাদের লজ্জা! আমরা কি এখনো মনে করি নারীমাত্রই কঠিনতম কাজ এবং শারীরিক পরিশ্রম সংক্রান্ত কাজ তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। নারী মানেই স্নেহপরায়ণ, কোমল এবং হূদয়স্পর্শী! এর ব্যতিক্রম কিছু ভাবার মানসিকতা আমাদের এখনো তৈরি হয়ে ওঠেনি। এই মানসিকতার আদলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে নারীর অক্ষমতা আর দুর্বলতার দিকগুলো। কোমলতা আর স্নেহপরায়ণতাকে আমরা কেবলই শক্তিহীন ভাবি! 

নারী শ্রমসাধ্য কোনো কাজ করলে তাকেও আমরা অস্বাভাবিকতা হিসেবে ধরে নিই। মেনে নেওয়ার এই মানসিকতা আমাদের মাঝে অনেক ক্ষেত্রেই তৈরি হচ্ছে না। একজন নারী যদি কোনো সহনশীল সমাজে বড় হয়, তাহলে সেখানে এই নারীই, পুরুষের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে গড়ে উঠতে পারে। কারণ সহনশীল সমাজ নারীর কোনো সংজ্ঞায়ন করে দেয় না। তুমি এটা করতে পার, এটা নারী দ্বারা সম্ভব নয়- সহনশীল সমাজে এই বাধ্যকতা নেই। সমাজের ধারাপাত অনুসারেই মানুষ ভিন্ন হয়। ভিন্ন মানসিকতায় বেড়ে ওঠে। আমাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতার জন্যই মানুষের অধিকার সীমাবদ্ধ, মানুষে মানুষে বিশাল ব্যবধান।

সমাজই নির্ধারণ করে দেয় কে কী করবে। পুরুষকে সবসময় সব দিক থেকে শক্তিশালী ভাবা হয়। কিন্তু আসলে সবাই সব দিক থেকে নয়, একেক ক্ষেত্রে একেক জন এগিয়ে। কোনো জায়গায় নারী, আবার কোনো জায়গায় পুরুষ। যে কাজটা নারী করতে পারে, সে কাজ পুরুষ করতে পারবে না। কিংবা যে কাজ পুরুষ করতে পারে সে কাজ নারী করতে পারবে না। এ ধারণা একুশ শতকে এখনো বিদ্যমান আমাদের মানসিকতায়।

নারী তার অধিকার আদায় করে নিতে পারলেও সেটা মোক্ষম নারীর প্রতি ছাড় দেওয়া কিংবা দয়া বোঝানো হয়। কিন্তু চিন্তা-চেতনার দিক থেকে তাদের আলাদা সত্তা হিসেবে এখনো মেনে নিতে পারেনি বাঙালি সমাজ। আধুনিকতার ছোঁয়া অবকাঠামোগতভাবে হলেও মননে আধুনিকতার বহুদূর রয়ে গেছি আমরা। আঠারো শতকে নারীকে যেমন ভাবা হতো, একুশ শতকে তার চেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারছি না।

সময় এসেছে সব বদলে দেওয়ার। নারী মানে নারী নয়, নারী মানে মানুষ-এই উপলব্ধি জাগ্রত করতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটলে, যতই ক্ষমতায়ন আর সক্ষমতায়ন হোক না কেন, মূল ভিত্তিটাই অপরিবর্তিত থেকে যাবে। সমাজের প্রত্যেক অবস্থান থেকে নারীকে আলাদা স্বকীয় সত্তা হিসেবে তুলে ধরতে হবে। নারীকে শুধু অধিকার নয়, তাকে ভাবতে শিখতে হবে সমাজ নিয়ে। ভাবনার জগৎকে আলোড়িত করে প্রমাণ করতে হবে নারীরা হেরে যায় না, নারীরা লড়তে জানে। নারী পুরুষের মতো নয় বরং নারী মানুষের মতো।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads