• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

আমাদের অর্থনীতি ও পোশাক শিল্প

  • প্রকাশিত ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

মালেক সরদার

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশের অর্থনীতির বড় একটা চালিকাশক্তি হলো তৈরি পোশাক শিল্প। তৈরি পোশাক রফতানির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান গর্ব করার মতো। উন্নত বিশ্বের বাজারগুলোতে আমাদের তৈরি পোশাকের চাহিদা প্রথম সারির দিকে। ফলে শত শত কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে তৈরি পোশাক শিল্প। শুধু তা-ই নয়, এদেশের বেকার লাখ লাখ নারী-পুরুষ খুঁজে পেয়েছে তাদের কর্মসংস্থান। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া গ্রামের অল্প শিক্ষিত নারী-পুরুষরাও কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। আর এখন দেশের অনেক শিক্ষিত তরুণও পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে এই পোশাক শিল্পেও বিভিন্ন সময় নানাভাবে ধাক্কা এসেছে।

অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধস, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের অসন্তোষ, বিক্ষোভ, আন্দোলন ইত্যাদি নানাভাবে প্রভাবিত করেছে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প খাতকে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরো বাংলাদেশ। ঝরে গেছে সহস্রাধিক তাজা প্রাণ। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেক মানুষ। তবে সে সময় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সব ধাক্কা কাটিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়ায় আমাদের পোশাক শিল্প। নতুনভাবে শুরু হয় সবকিছু। বর্তমানে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রফতানির জন্য বাংলাদেশের অবস্থান ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমাদের রফতানি আয় বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ডলার। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ, যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি। তবে চলমান রফতানিমুখী এ শিল্পে মাঝে মাঝে দেখা দেয় অস্থিরতা ও অসন্তোষ। মালিকপক্ষ থেকে পোশাক শ্রমিকদের নির্ধারিত সময়ে বেতন না দেওয়া, বেতন বকেয়া রাখা, হুটহাট কর্মী ছাঁটাই ইত্যাদি কারণে দেখা দেয় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের দ্বন্দ্ব।

এসব কারণে অনেক সময় কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার কারণে গুনতে হয় কোটি কোটি টাকার লোকসান যা আমাদের অর্থনীতির জন্য রীতিমতো ভীতিপ্রদ।

সর্বশেষ কয়েকদিন ধরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ নানা টানাপড়েনের জন্ম দিয়েছিল। সরকার নির্ধারিত মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের প্রতিবাদে ঢাকার রাস্তায় নেমে এসেছিল শ্রমিকরা। অনেক কারখানার মালিক তাদের শ্রমিকদের নির্ধারিত বেতন পরিশোধ করলেও অনেক মালিকপক্ষই তা করছেন না। যার ফলে প্রায়ই দেখা দেয় এই শ্রমিক অসন্তোষ। যদি শ্রমিকদের এমন আন্দোলন অব্যাহত থাকে, তাহলে সেটা হবে আমাদের অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ। প্রতিবারই বিভিন্ন কারণে যদি শ্রমিক অসন্তোষ ঘটতে তাকে, তাহলে হয়তো নিরাপত্তার খাতিরেই কোনো এক সময় বন্ধ করে দেওয়া হবে পোশাক কারখানা। তখন ক্ষতির মুখে পড়বে শ্রমিক, মালিকপক্ষ উভয়ই; সাথে আমাদের রফতানি আয়ও কমে যাবে। 

শ্রমিকদের বিভিন্ন সময় আন্দোলনের মূল যে কারণ, তা হলো ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ তার যথাযথ বাস্তবায়ন। বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করেন অনেক মালিকপক্ষ। মালিকপক্ষেরও উচিত শ্রমিকদের নির্ধারিত বেতন কাঠামো মেনে নিয়মিত বেতন পরিশোধ করা। শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজ করলে তবেই তো এগিয়ে যাবে আমাদের পোশাক শিল্প; লভ্যাংশ পাবে মালিকপক্ষ, আর চাঙ্গা থাকবে আমাদের অর্থনীতি।

বছরের শুরুতেই আমদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ ও আন্দোলন কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। যা হোক, সরকারের ত্বরিত হস্তক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের কারণে এ যাত্রায় আমরা উতরে গেছি। এ খাত যেন কোনোভাবেই পিছিয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সবাইকে। পরবর্তীকালেও যেন শ্রমিকদের কোনো অভাব-অভিযোগ না থাকে, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সবকিছু কাটিয়ে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের ঈর্ষণীয় অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক, এগিয়ে যাক আমাদের অর্থনীতি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads