আবারো অস্থিতিশীল চালের বাজার। গতকাল দৈনিক বাংলাদেশের খবরে প্রকাশিত ‘চালের দাম নিয়ে ধোঁয়াশা’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টি। নতুন বছর শুরু হওয়ার পর থেকেই চালের বাজার চড়া। অথচ গেল মৌসুমে চালের বাম্পার উৎপাদন ছিল। তারপরও চালের বাজার হঠাৎই কেন চড়া— এর কোনো সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। ২০১৭ সালের পর থেকে চালের দাম দীর্ঘসময় উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে ছিল। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলছে, মোটা চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে এবং সরু চালের দাম কোথাও ৫০ পয়সা পর্যন্ত বাড়লেও তা এখন কমে এসেছে। অথচ উক্ত মন্ত্রণালয়ের ‘দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি’ প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীর বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম প্রতিকেজিতে ২ টাকা করে বেড়েছে।
অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার দর পর্যবেক্ষক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবও বলছে, মোটা চালের দাম না বাড়লেও সরু ও মাঝারি চালের দাম ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির মতে, মিলগুলোতে চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণ তাদের কাছেও অজানা। এই পরিপ্রেক্ষিতে মিল থেকে চাল বাজারে এলে দাম কীভাবে বাড়ে— সে প্রশ্ন এখন সাধারণ ভোক্তাদের। আর এর পেছনে যে একটি শক্তিশালী সক্রিয় সিন্ডিকেট বাহিনী কাজ করে থাকে, সে বিষয়টি আমরা বার বার বলে আসছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতা উপর্যুপরি চালের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষকে নিত্য বাজারের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বিপাকে ফেলে দিচ্ছে।
অথচ গত এক বছরে চালের আমদানি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। উপরন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত বোরো মৌসুমে ১ কোটি ৯০ লাখ টন এবং আমনে ১ কোটি ৩৫ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে, যা এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে বিশ্বের যে ক’টি দেশে চালের উৎপাদন বেশি হারে বেড়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একই সঙ্গে সরকারের গুদামে চালের মজুতও বিগত বিশ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। এতকিছুর পরও বাজারে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন না। বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এমন ধোঁয়াশা অপ্রত্যাশিত।
অতীতে আমরা দেখেছি, বাজারে পর্যাপ্ত চাল সরবরাহ এবং তা সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে সরকার চাল ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যার সমাধানে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসেনি কিংবা ভোক্তাদের কল্যাণে কাজে লাগেনি। এখানে চালের বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য সারাক্ষণ অন্তরালে কাজ করে থাকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আবার এটিও ভেবে দেখা জরুরি, নতুন নির্বাচিত সরকারকে বিপাকে ফেলে দেওয়ার জন্য কোনো কুচক্রী মহল ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে কি-না। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে এমন কাজ কোনো মহল থেকে করা হতে পারে। সরকারের উচিত হবে হঠাৎ চালের দাম নিয়ে এমন ধোঁয়াশা সৃষ্টির কারণ খুঁজে বের করা। একই সঙ্গে স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চালের দাম বাড়ানোটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সুতরাং চাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এই অসাধু চক্রটিকে প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে, তারপর তাদের নিয়ে আসতে হবে আইনের আওতায়। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেবে।