• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

মার্কিনিদের মনে বিভেদের দেয়াল

  • অলোক আচার্য
  • প্রকাশিত ২০ জানুয়ারি ২০১৯

পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার মসনদে আসার পর থেকেই ট্রাম্প ছিলেন বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ক্ষমতা গ্রহণের পরেই অভিযোগ ওঠে মার্কিন মুলুকের নির্বাচনে রাাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে। এ নিয়ে অবশ্য ট্রাম্প বরাবরই অস্বীকার করে গেছেন। রাশিয়ার সঙ্গে প্রথম দিককার সেই সুসম্পর্কও এখন নেই। গণমাধ্যমের সঙ্গেও সম্পর্ক সুখের নয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সাংবাদিকদের সঙ্গে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। মার্কিন মুলুকের নির্বাচন নিয়ে এত সমালোচনা এর আগে সম্ভবত কোনো নির্বাচনে হয়নি। তারপর জলবায়ু ফান্ডে অর্থায়ন, অভিবাসী ইস্যু প্রভৃতি বিষয় নিয়ে একের পর এক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।

নারী কেলেঙ্কারি নিয়েও গত বছরের পুরোটা সময় মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম খবর প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া বা দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। বিশ্ব পরাশক্তির সঙ্গে কখনো সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে আবার পরমুহূর্তেই দেখা গেছে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন।

গত বছরের পুরোটা সময়জুড়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ লেগেই ছিল এ পরাশক্তির। শুল্ক এবং পাল্টা শুল্ক আরোপের ভেতর দিয়েই গেছে বছরের পুরোটা সময়। এতে যে কোনো পক্ষেরই মঙ্গল হয়নি তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন। বরং বিশ্বের এই বড় দুই পরাশক্তির বাণিজ্যযুদ্ধে পরোক্ষভাবে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছিল। তবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে  সম্পর্ক উন্নয়নে ট্রাম্প ইতিবাচকভাবেই অগ্রসর হয়েছেন। প্রথম দিকে যেভাবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে, তাতে বহুবার যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দুই দেশ সাময়িক শান্ত হয়েছে। দুই দেশের জন্যই এটি বড় একটি কূটনৈতিক অগ্রগতি। মার্কিন লেখক সাংবাদিক মাইকেল উলফের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ নামক বইটি ইতোমধ্যে বিস্ফোরক বইয়ের খেতাব পেয়েছে। ট্রাম্প যে বেশ রাগী তা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে জানা গেছে।

শেষমেশ মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তৈরি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের দ্বন্দ্ব এবং তার ফলে অতীতের রেকর্ড দিন ধরে শাট ডাউন অবস্থা চলেছে। শাট ডাউন হলো মূলত মার্কিন সরকারের কিছু কাজ বন্ধ হওয়াকে মনে করা হয়। এতে বিনা বেতনে সরকারি চাকরিজীবীকে কাজ করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এর জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শাট ডাউনের মুখোমুখি হয়েছিল।

তবে তা এতদিন ধরে নয়। মার্কিন ইতিহাসে শাট ডাউনের অবস্থা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। এরপর ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮১ থেকে ১৯৮৬, ১৯৮৭, ১৯৯০, ১৯৯৫, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে শাট ডাউন বা সরকারের আংশিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় শাট ডাউন হয়েছিল প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়ে (২১ দিন)। তবে সেই রেকর্ড এবার ভেঙে দিয়েছে। শাট ডাউনের ফলে প্রথম দিকে জনগণের ক্ষোভের আঁচ না পেলেও ধীরে ধীরে দীর্ঘ এ শাট ডাউনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। কারণ ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সৃষ্ট এ অচলাবস্থায় সে দেশের আট লাখের বেশি কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। এসব কর্মী ইতোমধ্যে বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। বেতন না দিয়ে চাকরি করতে বাধ্য করার ঘটনাকে অমানবিক উল্লেখ করে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ। অভ্যন্তরীণ আয়কর বিভাগ তাদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। বেতন বঞ্চিতরা দেশটির কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

বেতন না পেয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী কাজ করে যাওয়া যে সেদেশের মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে তা বলাই যায়। কিন্তু এসব বিক্ষোভে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই শাট ডাউনের ফলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, জানুয়ারিতে ৫ লাখ মার্কিনি কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হবেন। ফলে বেকারত্বের হার ৪ ভাগে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে কমে আসতে পারে প্রবৃদ্ধির হারও।

মোট কথা দীর্ঘতম এই অচলাবস্থার কারণে দেশটি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এমনকি সেবা খাতগুলোও এই শাট ডাউনের কবল থেকে মুক্ত নয়। এই সমস্যার সমাধান কোন পথে রয়েছে তা নিয়ে সাধারণ মার্কিনিদের মাথা ব্যথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের নেই। কারণ ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। তাছাড়া রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটদের দেয়াল নির্মাণের বিষয়ে দ্বৈত মত এই সমস্যাকে দীর্ঘায়িতই করবে।

ডেমোক্র্যাটরা মনে করছে দেয়াল নির্মাণ থেকে আরো অনেক জরুরি বিষয় রয়েছে। একদিকে তার নির্বাচনী প্রতিজ্ঞা অন্যদিকে বিরোধীদের শক্ত মনোভাব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সময়ই বলে দেবে। ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তে এতটাই অটল যে, তিনি জরুরি অবস্থা জারি করে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ চালিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনকালীন অঙ্গীকার। তিনি এই দেয়াল নির্মাণের খরচ বাবদ অর্থ মেক্সিকোর কাছেও দাবি করেছিলেন। কিন্তু মেক্সিকো সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে তার দেয়াল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত থেকে সহসাই পিছু হটছেন না। আর ডেমোক্র্যাটরা সহজেই ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মেনে অর্থ ছাড় করাবেন বলেও মনে হয় না।

 

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক

ংড়ঢ়হরষ.ৎড়ু—মসধরষ.পড়স

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads