• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

মেধার মূল্যায়ন যেন অবহেলায় না হারায়

  • নুরউদ্দিন আহসান
  • প্রকাশিত ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

প্রতিটা সমাজ বা দেশে সর্বক্ষেত্রে তরুণরা হলো প্রাণশক্তি। যে সমাজ বা দেশ এই তরুণ শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে, তারাই অতিদ্রুত উন্নতির ছোঁয়া পেয়েছে। কারণ তাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে হাজারো সম্ভাবনার দুয়ার। যা সঠিক পরিচর্যার ফলে ফুটে ওঠে দিনের প্রদীপ্ত সূর্যের মতো। যে আলো বিশ্বকে দেখায় নতুনত্বের মাইলফলক। আলোকিত করে তার চারপাশ। যা ছড়িয়ে পড়ে সমাজ থেকে দেশে, এমনকি বিশ্বময়। এমন হাজারো ঘটনা আমাদের মাঝেই দেখা মেলে। একটু সুযোগ পেয়েই তার প্রতফলন ঘটিয়েছে। বিশ্বকে দিয়েছে নতুন কিছু আবিষ্কার। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের তরুণরা অনেকটাই এগিয়ে। যারা দেশে না হলেও বিদেশ গিয়ে তাদের সক্ষমতার সাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। যে সুযোগটা এ দেশেই পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কলহ আর সরকারের সদিচ্ছার অভাবে বিষয়টা প্রতিবারই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারি দলে যেই থাকুক না কেন বিষয়টা নিয়ে তাদের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা মেলে না। যার ফলে প্রতিবছর হারাতে হয় আমাদের সম্ভাবনাময় হাজারো তরুণ। কালের গর্ভে হারিয়ে যায় কত শত বিজ্ঞানী আর লেখক এবং অন্যরা। আমাদের মনে রাখা দরকার, এভাবে হারিয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য শুভকর নয়। কারণ মেধাবীরা সব সময় পৃথিবীতে আগমন করে না। আমাদের কি মনে নেই ১৪ ডিসেম্বরের কথা? যেদিন হারিয়েছি আমাদের সূর্য সন্তানদের। আমরা কি পেয়েছি স্বাধীনতার এত বছর পরও তাদের মতো আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল এমন ব্যক্তিত্ব?

পরিসংখ্যানটা নিশ্চিত নেগেটিভ আসবে। প্রশ্ন হতে পারে তাহলে এত বছর ধরে কোনো মেধাবী জন্মগ্রহণ করেনি? অবশ্যই করেছে, তবে তাদের যথাযোগ্যভাবে পরিচর্যা করতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু আজো সেই মেধার পরিচর্যা ও মেধা পূরণ করতে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা মেলে না। সঠিক মেধার মূল্যায়ন যেন অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এটা নিশ্চিত একটা সময় এ দেশে মেধার অভাব দেখা দেবে। ভাড়া করে চালাতে হবে দেশ। তবে প্রশ্ন হলো আমরা কি এখনো এ থেকে মুক্ত? আমরা কি নিজেদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল? পত্রিকার রিপোর্টগুলো যেন উল্টো কথা বলছে। নিজেদের অবহেলার কারণে মেধাবীরা সবর্দাই উপেক্ষিত হচ্ছে। যে সুযোগটা খুব ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছে বিদেশি মহল। ১. বিভিন্ন খাতে আমাদের দক্ষ জনশক্তি না থাকার কারণে এদেশে এসে তাদের মেধা কাজে লাগাচ্ছে। ২. আমাদের তরুণদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিদেশে নিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা।  পত্রিকার রিপোর্টগুলো আমাদের আরো ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে। যেখানে হাজার হাজার বেকার চাকরির আশায় দিনের পর দিন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে, সেখানে বিদেশিরা উড়ে এসে জুড়ে বসে নিজেদের পকেট ভারি করে নিয়ে যাচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাড়ে তিন লাখ বিদেশি এদেশে কর্মরত। যার ফলে বিদেশে চলে যাচ্ছে শত কোটি টাকা। কী অবাক করা তথ্য। সচেতন সব নাগরিকের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। যেখানে শত শত বেকার চাকরির প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে, সেখানে বিদেশিরা রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে কাজ করে চলছে। তার বিপরীতে হতাশার গ্লানি নিয়ে আমাদের অনেক তরুণ চিরবিদায়ের পথ বেছে নিচ্ছে। না হয় বিদেশে তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখতে সোনার দেশকে বিদায় জানাচ্ছে।

আমরা কি ভাবতে পারি কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে আমাদের? এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া দরকার।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, সরকার দক্ষ জনশক্তি পায় না, তাই বিদেশিদের ডাকতে বাধ্য হয়। এখন জনতার প্রশ্ন, কেন তাহলে শিক্ষাব্যবস্থা পাল্টানো হচ্ছে না। যে শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষ জনশক্তি পাওয়া যায় না সে ব্যবস্থা কেন স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও রাখা হয়েছে?

স্বাধীনতার পর থেকে সবকিছুই তো বেড়েছে। গত দশ বছরে বেড়েছে আরো বেশি, পত্রিকার রিপোর্টও তাই বলছে। গত দশ বছরে সাক্ষরতার হার ৫৬.৯০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৯০ শতাংশে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৭৫ থেকে উন্নীত হয়েছে ৭.৮৬-তে। কিন্তু কর্মসংস্থান?

কত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রশ্নটা সামনে আসলে সব রাজনৈতিক বোদ্ধা কবিও নীরব হয়ে যায়। কেননা সৎ উত্তরটা রাষ্ট্র পরিচালকদের হাতে নেই। এখানেও বৃদ্ধি পেয়েছে তবে কর্মসংস্থান নয়, বরং বেকারত্বের হার। যেখানে হওয়ার কথা ছিল উল্টো।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে ৪ কোটি ১৩ লাখ তরুণদের মধ্যে শ্রমবাজারে নেই ২ কোটি ১৩ লাখ। এখানে আরো দুঃখের বিষয়, যারা বেকারত্বের গ্লানি টানছেন তারা অধিকাংশই শিক্ষিত বেকার। এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক তো বটেই, অসনিসঙ্কেতও। যা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে। যে ব্যবস্থায় বেকারত্বের হার বাড়ায় কিন্তু তৈরি করতে পারে না কর্মসংস্থানের নিমিত্তে দক্ষ কারিগর। এখন দেখার বিষয় কোন সরকার কতটুকু তাদের পরিচর্যার ব্যাপারে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেননা তার ওপরই নির্ভর করছে আগামীর সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা।

তরুণরাই হলো আগামীর অগ্রদূত, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের কাণ্ডারি। সমাজ বা দেশকে সামনে নেওয়ার প্রধান অস্ত্র। যাদের মাঝে লুকিয়ে আছে দিগ্বিজয়ী। যারা সমাজের বা দেশের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে রয়েছে সচেতন। নিজের অধিকার আদায়ে সর্বদা সচেষ্ট। যা সমাজ বা দেশ বিনির্মাণে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads