• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

পথচলা হোক নিরাপদ, মৃত্যুর মিছিল নয়

  • মোমিন মেহেদী
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

সারা দেশে সেভ দ্য রোড চারটি পথকে নিরাপদ করার জন্য নিবেদিত থেকে কাজ করে যাচ্ছে। যুক্ত রয়েছেন নবীন ও প্রবীণ শত শত সমাজকর্মী। সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিরাপদ পথ প্রয়োজন খুব। তবু প্রায় প্রতিদিনই আমরা স্বজন-প্রিয়জনকে হারাচ্ছি। হারিয়েছি ছাত্র রাজীব, হাসান, সাবিনা, ইতি, তিন্নি, নূরজাহানসহ সহস্রাধিক মানুষকে। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী ট্রাক উল্টে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। শ্রমিক শ্রেণির এই ১৩ জন নিহত মানুষের মতো অবিরত মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আমরা এই মৃত্যুর মিছিল চাই না বলেই ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি’ ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র মতো অবিরত নিজেদের বা পরিবারের কথা না ভেবে এগিয়ে চলছে সেভ দ্য রোড। এই এগিয়ে চলায় অবিরত দেশ ও মানুষের জন্য নিবেদিত তারা। যে কারণে নিরাপদ পথ-এর এই পথ চলায় চলতে চলতে বলতে চাই- ত্রুটিযুক্ত পরিকল্পনা আর অদক্ষতার কারণে গচ্চা গেল সরকারের ১০ কোটি টাকা। উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন প্রকল্পে ব্যয় হওয়া এই অর্থ বিফলে গেল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এসব ইউটার্নকে যানজট নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় হিসেবে দেখিয়েছিল। প্রকল্প গ্রহণের আগে কয়েকবার হয়েছে মূল্যায়ন সভা। তখনো ত্রুটি ধরা পড়েনি। প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা খরচ করার পর নতুন করে মূল্যায়ন হয়েছে এই ইউটার্নে কোনো কাজ হবে না। ফলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে এই প্রকল্পের অসম্পন্ন কাজ।

সরকারি অর্থের এমন অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই প্রকল্প অনুমোদন করেছেন, এর দায় তাদেরই নিতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত তৈরি হচ্ছে আলো আর অন্ধকারের কারণে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নেতৃত্বে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউটার্ন নির্মাণে ২০১৫ সালের শেষদিকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠায়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অনুমোদন পেতেই চলে যায় দীর্ঘ সময়। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুন মাসে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ডিএনসিসি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বললেও এখন পর্যন্ত এর অনুমোদন মেলেনি।

তিনটি প্রকল্পের শুরু হলেও বাকিগুলোর কাজই শুরু হয়নি। অথচ এরই মধ্যে ৩০ শতাংশেরও কম কাজ করে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ঢাকা উত্তরের ইউটার্ন প্রকল্পের এসব ত্রুটির বিষয় প্রকাশ্যে আসলে গণমাধ্যমকর্মীরা যোগাযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই বর্তমানে ইউটার্নের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কাজে বিআরটি (র্যাপিড বাস ট্রানজিট) বাস্তবায়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে মন্ত্রণালয়। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে আমি এ প্রকল্প যেন না নেওয়া হয়, তার জন্য অনেকবার বারণ করেছিলাম। তিনি শোনেননি। তার আশপাশে থাকা লোকদের ধারণাপ্রসূত চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে। তারা আসলে নানাভাবে মেয়রকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, ইউটার্ন হলেই ঢাকার যানজট নিরসন হয়ে যাবে। শুধু ইউটার্নের ক্ষেত্রেই নয়, রাজধানীর উন্নয়নের নামে এরকম আরো অনেক প্রকল্পই গ্রহণ করা হচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে অপ্রয়োজনীয় ও অবাস্তব বলে মনে হয়েছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কাজে নেমে হতাশ হওয়ার চেয়ে কাজের আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এখানে সমন্বয়ের চরম অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। যারা এমন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন, এর দায়ভার তাদেরই নিতে হবে। আমাদের এখানে সমন্বয়ের বিষয়টি ঠিকভাবে করা হয় না বলেই এমন ঘটনা ঘটছে।

আমরা ক্রমেই সমস্যার জালে আবদ্ধ হতে হতে দেখছি যে, রাজধানীর যানজট নিরসনসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর ট্রাফিক আইন অমান্য এবং গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় প্রতিদিনই হাজার হাজার মামলা ও লাখ লাখ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। তারপরও রাজধানীর সড়কের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে পাচ্ছে না। কমছে না ইতির মতো মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যুর মিছিল। অবশ্য সাহসের সঙ্গে যে কথাটি বলতেই হচ্ছে তা হলো- নির্দিষ্ট বাস স্টপেজ থাকলেও যে কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা ইশারা করেন, চালকরা বাস থামিয়ে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বাসচালক ও যাত্রী উভয়কেই দায়ী। শুধু পথচারী ও যাত্রীদের পাশাপাশি চালকদের সচেতন করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

১৫ জানুয়ারি রাজধানী থেকে ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ শুরু হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণ-তরুণীরাও কাজ করছে। পথচারীদের মধ্যে রাস্তা পারাপারে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরলেও বাসচালকদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরেনি। আমাদের স্বজন হারানোর রাস্তাটি ক্রমেই প্রশস্ত হচ্ছে, যা কারোরই কাম্য নয়। আমরা সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে সত্য বলতে চাই; কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনা নির্মাণ করতে চাই। বলতে চাই সাহসের সঙ্গে- শাহবাগ মোড় থেকে একটু উত্তর দিকে পা বাড়ালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল। এই হাসপাতালের সামনে বাস থামার স্থান রয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশ সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। ওই সাইনবোর্ডে বাস থামা শুরু ও শেষের অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুপুরে দেখা যায়, চিহ্নিত করা অংশে বাস থামানো হচ্ছে না। মোড়ে আসার আগে থেকেই যাত্রী তোলা হচ্ছে, আবার নামানো হচ্ছে। আর রাজধানীর কাজীপাড়া থেকে তালতলা, আগারগাঁও, মহাখালী, গুলশান-১, বাড্ডা-কুড়িল রুটে বিহঙ্গ পরিবহনের বাস চলাচল করে। এসব রোডের ১৯ কিলোমিটার রাস্তায় মাত্র দুটি স্থানে বাস থামার স্থানে সাইনবোর্ড রয়েছে। সেখানে বাসগুলো থামছে না। এমন অব্যবস্থাপনায় আহত হচ্ছে অনেক মানুষ, নিহতের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে।

 

লেখক : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি

mominmahadi@gmail.com

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads