• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

সম্ভাবনার নতুন নাম পাট

  • নাজমুল হোসেন
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

পাটকে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ বলা হয়। বিগত কয়েক দশকে পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। মাঝে আবার বিভিন্ন আনুষঙ্গিক সমস্যা এর পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে সেসব সমস্যা কাটিয়ে আধুনিক এই যুগে পাট বর্তমানে বহুল ব্যবহূত একটি উপাদান। এতদিন পাটের পাতা ছিল স্বাস্থ্যকর ও একটি সুস্বাদু শাক। কিন্তু বর্তমানে জার্মানির প্রযুক্তিতে দীর্ঘ গবেষণার পর এই পাতার মাধ্যমে উপকারী এমন চা-জাতীয় পানীয় তৈরি হচ্ছে যা অকল্পনীয়।

সম্প্রতি ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বেশ কয়েকটি স্টলে এই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। জানা যায়, এই পানীয় ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ মারাত্মক সব রোগ থেকেও মুক্তি দেবে। আর পাটজাত পণ্য তো সবসময়ই পরিবেশবান্ধব। ইদানীং পাটের তৈরি চট, বস্তা, পলিথিন ছাড়াও চোখ ধাঁধানো টি-টেবিল, শোপিস, চেয়ার, দরজা, ফুলদানি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, স্যুট, প্যান্ট, চাদর, ডেনিমও পাট থেকে তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য যেমন সৌন্দর্যবর্ধক, তেমনি দামও রয়েছে সাধ্যের মধ্যে। ফলে এসবের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের, যা নিঃসন্দেহে এই শিল্প ভাঙা অর্থনীতিকে চাঙা করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

২০১১ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৫ হাজার অংশগ্রহণকারীর হাতে যে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পাটের ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকেই। আশ্চর্য হলেও সত্য, পাট বর্তমানে নামিদামি গাড়ি কোম্পানি বিএমডব্লিউ ব্যবহার করছে। এদের সর্বাধুনিক আইথ্রিডেলের ইলেকট্রিক গাড়ির ভেতরে বক্স বডি ও উপাদান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে পাট ব্যবহার হচ্ছে। জার্মানির ভক্সওয়াগন, জাপানের নিশান ও টয়োটা গাড়ির কাঁচামাল হিসেবেও বাংলাদেশের পাটের সমাদর রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় পাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই দ্রুতই বিভিন্ন যুগোপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ করতে হবে। বর্তমান সরকার দেশে ও বিদেশে পাটপণ্যের ব্যবহার বিস্তৃত করার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। পাট উৎপাদন থেকে শুরু করে পাট সংগ্রহ, সংরক্ষণ- সবকিছুতে আরো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পাটচাষে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন অনাগ্রহ বাড়ছে।

এই পাটের চাষ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়াসহ কৃষি কর্মকর্তাদের যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করতে হবে। ফলে তাদের মধ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা বাড়ার পরিণতিতে পাটচাষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। আর সে জন্য পৃষ্ঠপোষকতার হাত পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারকেই বাড়াতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে দেশের সবক্ষেত্রে পাটপণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাটের ব্যাপক চাষাবাদ, পাটকলের সংখ্যা বৃদ্ধি, বহুমুখী ব্যবহার ইত্যাদির ফলে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।

পরিবেশবান্ধব এই পাটজাত পণ্য হোক আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহারের সঙ্গী। খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন পাটও হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা আরেকটি নতুন নাম

 

লেখক : প্রকৌশলী

nazmulhussen@yahoo.com

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads