• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মানবীয় মূল্যবোধের জাগরণ জরুরি

মানবীয় মূল্যবোধের জাগরণ জরুরি

প্রতীকী ছবি

মতামত

অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি

মানবীয় মূল্যবোধের জাগরণ জরুরি

  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

সময় কঠিন এখন অনেক রূঢ় বাস্তবতার। প্রজন্মের চারপাশে সমাজের পরতে পরতে ভয়ঙ্কর ফাঁদ পাতা। ফলে সমাজে ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, বিকৃত মানসিকতার নানা অপকর্মসহ ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ ইত্যাদি। আমরা নিত্যদিন খবরে জানতে পারি, সন্তানের হাতে পিতা-মাতা খুন কিংবা পিতা-মাতার হাতে সন্তানের জীবননাশ, স্বামীর হাতে স্ত্রী অথবা স্ত্রীর হাতে স্বামী, সহকর্মীর হাতে সহকর্মী, সহপাঠীর হাতে সহপাঠী খুন কিংবা ধর্ষণ। এসব ঘটনা একটি অসহিষ্ণু ও অপরাধপ্রবণ প্রজন্মের ভয়ঙ্কর অধঃপতনেরই জানান দেয়। ভয়ের বিষয়টি হলো অপরাধপ্রবণতার পাশাপাশি নিচে নামছে নির্মমতার মাত্রা। হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে, সন্তানের গায়ে পিতা-মাতার অথবা পিতা-মাতার গায়ে সন্তানের নির্মমতার ছুরি কীভাবে চালায়! এসবই সম্ভব হয় যখন মানুষের ভেতরে আর মনুষ্যত্ব বলে কিছু থাকে না। তাই দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, হে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব মানুষ, তুমি মানুষ হবে কবে!

সমাজবিদ ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের অভিমত, শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় কিশোর-তরুণদের অপরাধপ্রবণতা কমানো যাবে না। এ জন্য পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিলে কি সমাধান হবে? মনে রাখতে হবে, জীবনধারা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে সন্তানদের চাওয়া-পাওয়ার জগৎ। এই পরিবর্তনের সময়ে কখনো ভালো, কখনোবা মন্দটাও ঘটে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। মনোবিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন, বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়ের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিয়ে আপনি কি নিশ্চিত হয়ে বসে আছেন? আপনার ছেলে অথবা মেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে বা স্মার্টফোনে ডুবে থাকে- এ খবর রাখেন? ইন্টারনেটে ‘গেম’ খেলা বা ফেসবুকে চ্যাট অথবা সারাক্ষণ টিভির সামনে বসে সিরিয়াল দেখে কী শিখছে তারা? যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইংল্যান্ডের দুটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেলফোন, কম্পিউটার আর নেটে আসক্ত স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের একটা বড় অংশ আগ্রাসী হয়ে উঠছে কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে। অকারণে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে, কেউবা ভুগতে শুরু করেছে ভয়ভীতি, দুঃস্বপ্ন, মানসিক উত্তেজনায় অথবা

অবসাদে। তার চেয়েও ভয়ানক খবর- টিনএজারদের স্মার্টফোনে আসক্তি ভেঙে দিচ্ছে শালীনতা বোধ, বাড়ছে খুন-জখম-দাঙ্গা-ধর্ষণে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে সামাজিক অপরাধের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ভিডিও গেম দেখে সেই আদলে গ্রুপ বানিয়ে মারামারি করছে কিশোররা। সামান্য হার-জিত নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বন্ধুর হাতে নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে কিশোর বন্ধুটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি সংবাদমাধ্যমে অপরাধের তথ্য জেনে সমাজের মানুষের মধ্যে একই ধরনের অপরাধ করার আরেকটি খারাপ প্রবণতা বাড়ছে। এই সত্যতা এখন আর কোনো বিশ্লেষণ ছাড়াই বলা যায়। অপরাধ দেখে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়াটাই স্বাভাবিক। ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো অপরাধের নানান কাহিনী নিয়ে সিরিজ অনুষ্ঠান বানায়। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ না হওয়ার কারণে এসব অনুষ্ঠান দেখে দেখে কী শিখবে আমাদের প্রজন্ম- একথা ভাবার যেন কেউ নেই। তার চেয়ে খারাপ ব্যাপারটি হলো, এসব অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার কারণে আমাদের কোনো কোনো টিভি চ্যানেল সেই অনুকরণে অপরাধের ধরন দৃশ্যায়নে নির্মাণ করছে অনুষ্ঠান। বুঝতে আর বাকি থাকে না- এসব অনুষ্ঠান সমাজে কী বার্তা ছড়াচ্ছে? তবে প্রশ্ন জাগে, এই অপরাধপ্রবণতার বিষবাষ্প প্রতিরোধে আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী?

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads