• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

কারিগরি শিক্ষা প্রসারে চাই সরকারের উদ্যোগ

  • মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
  • প্রকাশিত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দেশ স্বাধীন হয়েছে দীর্ঘ ৪৮ বছর। যে হারে সাধারণ শিক্ষার প্রসার ঘটেছে, সে হারে কারিগরি শিক্ষার বিস্তার হয়নি। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যেই বেকারত্বের হার অধিক। অপরপক্ষে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতদের সরকারি চাকরি না হলেও বেসরকারি কিংবা স্ব-উদ্যোগে নিজের অর্জিত কারিগরি জ্ঞান দিয়ে আত্মনির্ভরশীলতার সুযোগ অবারিত। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর আগে ১৮৭৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত বর্ষের ঢাকায় আহসান উল্লাহ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং (বর্তমানের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) স্থাপিত হয়। তৎকালীন আসাম ও অবিভক্ত বাংলায় এটিই ছিল একমাত্র কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র। চার বছর মেয়াদি ‘আপার সাব-অর্ডিনেট’ কোর্স দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। ওই কোর্স শেষে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ওভারসিয়র হিসেবে নিয়োগ পেতেন। পরবর্তীকালে ওই ‘আপার সাব-অর্ডিনেট’ কোর্সকে তিন বছরে রূপান্তরের মাধ্যমে ‘লাইসেন্সিয়েট ইন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে পরিবর্তন করা হয়।

ষাট ও সত্তরের দশকে দেশে ২০টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। এগুলোর সবকটিই সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নির্মাণ ও পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীনের আগে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য যে হারে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছিল, পরবর্তী সরকারগুলো তা ধরে রাখতে পারেনি। আমরা একই মহাদেশের হলেও চীন জাপান কোরিয়া মালয়েশিয়া ভারত ইরান টক্কর দিচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার সঙ্গে। কারণ এসব দেশের নাগরিকদের গড়ে তোলা হয়েছে যুগোপযোগী করে। তাদের দেওয়া হয়েছে কারিগরি শিক্ষা। আর আমাদের দেশের একজন গ্র্যাজুয়েট তরুণ-তরুণীকে কাজের জন্য শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে পোশাক কারখানাকে। সেখানে তারা কোয়ালিটির তদারকি ও ফাইলে লেখালেখি ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না। তাই কম্পিউটারের পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি উপযোগী কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা কেবল সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।  সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ২০টি, যেগুলো পুরোপুরি সরকারি। নতুন রাজস্বভুক্ত ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৫টি, মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট ৪টি, প্রকল্পভুক্ত ১৮টি ও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৪টি। এ ছাড়া রয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ।

স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ সার্ভে ইনস্টিটিউট ও রাম্মালা কুমিল্লা ১৯১৪। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সরকারি খরচে প্রথম যে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটটি স্থাপন করা হয়, সেটি জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকার সময়। সেটি ১৯৮৯ সালে পটুয়াখালী সদরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’ নামে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করে টাঙ্গাইলের দেওলায় ‘টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’ এবং চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরে ‘চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। কেয়ারটেকার সরকারের সময় দুটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। মাগুরার ইটখোলা বাজারে ‘মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ‘কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’ নামে।

মহাজোট সরকার ক্ষতায় আসার পর ২০১০ সালে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের শমসেরনগর রোডের মাথারকাপনে ‘মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’ নামে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। তবে মহাজোট সরকার দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সব শ্রেণিতে কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে। এতে প্রতিটি শ্রেণিতেই শিশুরা কম্পিউটার শিক্ষায় জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করে, যাতে বেকার তরুণ-তরুণীরা সহজেই কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই বেসরকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। একথা অপ্রিয় হলেও সত্য, স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলো আধুনিক জীবনব্যবস্থা থেকে বিচ্যুত জনপদ হাওরাঞ্চল নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলাকে বরাবরই ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেছে। এই দুটি জেলায় নেই সরকারি খরচে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের কোনো প্রতিষ্ঠান। যতই দিন যাচ্ছে, হাওরবেষ্টিত বিশাল এই জনপদে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীর সংখ্যা। কারণ অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এসব বেকার তরুণ-তরুণীর অধিকাংশই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের নেই কোনো কারিগরি জ্ঞান। এখনো দেশের অনেক জেলা রয়েছে, যেখানে সরকারি পলিকেনিক বা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। তাই হাওরাঞ্চলসহ সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads