• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

রাজনীতিতে তারকাদের টানাটানি

  • সোলায়মান মোহাম্মদ
  • প্রকাশিত ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সবেমাত্র একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সংসদ নির্বাচনের আলোচনা-পর্যালোচনা ও পক্ষে-বিপক্ষে সাফাই গাওয়া এবং সরকারি দলের বিরোধীপক্ষের অভিযোগ এখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পেল সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নপত্র ক্রয় এবং জমাদান নিয়ে। সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে চারদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম ক্রয়ে হিড়িক পড়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন অঙ্গনের নারী নেত্রীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

ইতোমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩৫০ আসনের মধ্যে নারীদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত। এবারের নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে সরাসরি ভোট হলেও সংরক্ষিত আসন বণ্টন হয় ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে। সে হিসাবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত আসনে ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি ১টি, স্বতন্ত্র ও অন্যরা ২টি পেতে পারে। যেখানে ৫০টি আসনের ৪৩টিই আওয়ামী লীগের পাওয়ার কথা, সেখানে তো ভিড় হবেই। অনেক নারী নেত্রী এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হতে দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দলীয় হাইকমান্ডের দরজায় দরজায় নক করছেন।

রাজনৈতিক সূত্র ধরে বাবা কিংবা মৃত স্বামী বা ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে দলীয় সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে যারা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারা মনোনয়ন ফরম কিনবেন এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু হঠাৎ করেই যখন রাজনীতির মাঠে কোনো ব্যক্তি কোমর বেঁধে নেমে পড়েন, তখন তো একটু খটকা লাগবেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যাদের সারা জীবন আওয়ামী লীগের ধারে-কাছেও ঘেঁষতে দেখা যায়নি, তারাও এবার মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে যে বিষয়টি, তা হলো শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের মনোনয়নপত্র ক্রয়ের দৌড়ঝাঁপ। হালের নায়িকা থেকে শুরু করে কয়েক যুগ আগের নায়িকারাও পিছিয়ে নেই। নায়িকাদের এমন এমপি হওয়ার প্রতিযোগিতাকে সাধারণ মানুষ খুব যে ভালোভাবে নিচ্ছে তা কিন্তু নয়; যদিও সাংবিধানিক দিক থেকে কোনো বাধানিষেধ নেই। সব জায়গায় নায়ক-নায়িকাদের উপস্থিতি আনন্দের বাতাস বয়ে আনলেও এবারের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নপত্র ক্রয় ও জমাদানের ক্ষেত্রে কিন্তু তার উল্টোটিই ঘটেছে। রাজনৈতিক মহলের নারী নেত্রীদের কাছে বিষয়টি বিষের মতোই লেগেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যার প্রমাণও পাওয়া গেছে। সাবিনা আক্তার তুহিন, আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দুঃসময়ে রাজপথে থেকে কঠোর ভূমিকাও পালন করেছেন এবং কারাবাসের শিকারও হয়েছেন বহুবার। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাজনীতি থেকে মনে হয় বিদায় নিতে হবে, নায়ক-নায়িকাদের এত ভিড়ে আমাদের আর দেখা পাওয়া কঠিন। আন্দোলন সংগ্রামের রোদে পোড়া শরীর এখন কিছুটা ভালো দেখতে হলেও নায়িকাদের রূপে বিলীন। তিনি আরো বলেন, এখন মহাবিপদ, আমাদের দল ছিনতাই করেছে নায়িকা হাইব্রিড বিএনপি থেকে আমদানিকারীরা।’ সুতরাং বিষয়টি সহজেই অনুমেয়, যারা দীর্ঘদিন ধরে রোদে পুড়ে দলের সাংগঠনিক কাজ করেছেন, এবার যখন ক্ষমতার একটু ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন ঠিক তখন হঠাৎ আসা হাইব্রিড নেত্রীদের আক্রমণ।

অভিনয় ছেড়ে রাজনীতি নিয়ে টানাটানি। কেউ কেউ বলছেন এটা তাদের সেলিব্রেটি রোগ। নায়িকাদের সংসদ সদস্য হওয়ার ইচ্ছা উদয় হওয়ার পেছনে অবশ্য তাদের একটি খোঁড়া যুক্তিও আছে। তারা মানুষের সেবা করতে চান। মনে হচ্ছে সংসদ সদস্য হওয়া ছাড়া জনগণের সেবা করা যায় না। তাই তারা পণ করেছেন সংসদে গিয়েই জনগণের সেবা করবেন। কিন্তু আমার কথা হলো, যদি জনগণের সেবা করার এতই আগ্রহ, তাহলে আগে তারা ছিলেন কোথায়? মাঠপর্যায়ের রাজনীতি বা সেবামূলক কোনো কাজে তো কখনো তাদের ওভাবে চোখে পড়েনি।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads