• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

কিন্ডারগার্টেনের জন্য নীতিমালা প্রয়োজন

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বর্তমানে শিক্ষার একটি বড় জায়গা জুড়ে যদিও কিন্ডার গার্টেন রয়েছে, তবু এর মান, শিক্ষার ধরন এবং শিক্ষার পরিবেশ— সবকিছু মিলে এর গ্রহণযোগ্যতা শিক্ষার উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখছে তা যেমন দেখতে হবে, তেমনি একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে সব কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফিস, কোনো অনুষ্ঠান করতে হলে তার জন্য ফিসের পরিমাণসহ সব ধরনের ফিস নির্ধারণ করে দিতে হবে। ইদানীং অনেক স্কুলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ বিভিন্ন কারণে তারা ফিস হিসেবে টাকা নিয়ে থাকে। এর মধ্যে ক্লাস পার্টির নামে টাকা নেওয়াও একটি বড় উপলক্ষ স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে। অনেক গরিব বাবা-মাও চান তার সন্তান ভালো স্কুলে পড়ুক। আর তা পড়াতে গিয়ে তারাই হয়ে যাচ্ছেন সর্বস্বান্ত!

সন্তানের কথা চিন্তা করে অভিভাবকরা যেভাবে কিন্ডার গার্টেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে তাতে কতটুকু সফলতা আসছে? যদি কিন্ডার গার্টেনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা যায় তবে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, কিন্ডার গার্টেন শিশুদের প্রাক-বিদ্যালয় বা বিদ্যালয়-পূর্ব উপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ। এ শব্দটি জার্মান শব্দ থেকে আগত, যার অর্থ হচ্ছে শিশুদের বাগান। ‘কিন্ডার গার্টেন’ শব্দটি বিখ্যাত জার্মান শিশু-শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। তিনি ১৮৩৭ সালে ব্যাড ব্লাংকেনবার্গে শিশুদেরকে বাড়ি থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত গমন এবং খেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের ধারণাকে কেন্দ্র করে এ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, শিশুরা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে এবং ‘শিশুদের বাগান’ হিসেবে কিন্ডার গার্টেনে বাগিচায় রোপিত চারাগাছের ন্যায় পরিচর্যা পাবে।

একদিকে যখন মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত এবং অন্যদিকে যখন শিক্ষার সঠিক পরিবেশের কথা এসে যায় তখনই সাধারণত অভিভাবকদের মধ্যে বিদ্যালয় নির্বাচনের ব্যাপারটি ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও ইদানীং দেখা যায় সন্তানদের আরো বেশি মানসম্মত শিক্ষার জন্য অভিভাবকরা সাধারণত কিন্ডারগার্টেনভিত্তিক শিক্ষার ওপর বেশি আস্থাশীল হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন অনিয়ম আর পড়াশোনার মানের দিকে গ্রামাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অমনোযোগিতার কারণেই মূলত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি মানুষের এই আস্থাহীনতা।

শিশুদের বাগান হিসেবে পরিচিত হলেও কিন্ডার গার্টেনে শিশু ভর্তি করানোর পর আমাদের দেশে যে টাকা অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে তাতে করে অভিভাবকদের ওপর একটা দশ মণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার স্বরূপই  বলা যেতে পারে। শহরের আনাচে-কানাচে থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পর্যায়েও গড়ে উঠেছে অনেক কিন্ডার গার্টেন। এটা আমাদের জন্য এবং শিক্ষার জন্য আশার ব্যাপারই, তবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি এবং টিউশন ফির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোন নিয়ম না মানা।

সাধারণভাবে একটা কিন্ডার গার্টেনের ক্লাস নার্সারিতে ভর্তি ফি ধরা হচ্ছে ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকা। এই টাকার পরিমাণ আবার অন্যান্য উপরের ক্লাসে স্থানভেদে আরো বেশিও ধরা হয়। ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় শিক্ষকদের বেতনের ক্ষেত্রে। শিক্ষকদের বেতন মাত্র ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত! যেখানে শিক্ষার্থীরা বেতন দিচ্ছে একেকজন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা সেখানে একজন শিক্ষকের বেতন কীভাবে ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা হয়। আর যদি এ টাকায় কোনো শিক্ষক রাখাও যায় তার কাছ থেকে শিশুদের বাগান কল্পনা করা কিন্ডার গার্টেন কতটুকু সার্থক হতে পারে, তা ভাববার বিষয়।

শুধু এখানেই শেষ নয়। কিন্ডার গার্টেনগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের জন্য কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। যেকোনো বই পড়াতে বাধ্য করে শিক্ষার্থীদের এবং এই বইগুলো কিনতেও হয় স্ব স্ব বিদ্যালয় থেকেই। একদিকে সন্তানরা নিচ্ছে বইয়ের ভার অন্যদিকে অভিভাবকরা নিচ্ছে অর্থনৈকিত চাপ। শিশুদের বিকাশ যেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বইয়ের ভারে, তেমনি অভিভাবকরা চাপে পড়ছেন বাড়তি টাকা গুণে। আইনের কাছে প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার জায়গা বাড়াতে হবে। একটি যথার্থ নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে আইনের বাধ্যবাধকতা সংযুক্ত করে দিতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্র যদি ব্যবসা ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হতে শুরু করে তবে একসময় এর কুফল সারা জাতিরই বয়ে বেড়াতে হবে। এ কারণেই আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নীতিমালার ভেতর দিয়ে এ ধরনের বিদ্যালয় পরিচালিত হোক। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

 

হ লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি

      শ্রীপুর, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads