• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

সড়ক দুর্ঘটনার দায় কার

  • সোহাগ মনি
  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সড়ক দুর্ঘটনার খবরে পত্র-পত্রিকার পাতায় হাহাকার দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে অনুভূতি যেন ভোঁতা হয়ে গেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে শিখে গেছি। এমনটাই যেন হওয়ার ছিল; বরং না হওয়াটাই অস্বাভাবিক, এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে গেছে আমাদের মস্তিষ্কে। এর শেষ কোথায় উত্তর জানা নেই আমাদের কারোরই! মৃত্যুর এ পথযাত্রায় যোগ হচ্ছে নতুন তাজা প্রাণের। এ প্রাণ বিয়োগের দায় নেবে কে? রাষ্ট্র নাকি ব্যক্তি? 

২০১৮ সালে সড়কে ঘটেছে ৫ হাজার ৫১৪টি দুর্ঘটনা। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২২১ জন, আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। সব ঘটনাকেই আমরা সবসময় দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিই। কিন্তু কিছু ঘটনা আমাদের কারণেই ঘটে। তাই আমরা নিজেরা ঘটনার পেছনে কতটা দায়ী খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে ২০১৯ সালে আরো ১০ হাজার ঘটনা ঘটলে দায় কে নেবে?

প্রতিটি ঘটনাকে বিশ্লেষণ করে পেছনের কারণ এবং এর পিছনে দায়ী মানুষগুলোকে শনাক্ত করলে আমরা বোধহয় রক্ষা পেতে পারি এমন দুর্ঘটনা থেকে। ৭ হাজার ২২১ জনের প্রাণহানিতে ৭ হাজার পরিবার ধ্বংসের মুখে পড়েছে। মানব মনকে বিষাদময় করে তুলে এমন হাজারো মানুষের প্রাণহানি। আমরা দূর থেকে তাকিয়ে শুধু সংখ্যার জরিপটাই করতে পারি, উপলব্ধি আমাদের হয় না!  মানবমৃত্যুকে মানব হিসেবে আমরা দায় এড়াতে পারি না। সড়ক নিরাপদ করতে আমরা সভা-সেমিনারে তুখোড় বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থাকছি। বিশ্লেষকরাও নানা মতবাদ দিচ্ছেন; কিন্তু কাজের কাজ আসলে কতটা হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। কাল্পনিক জগতেই আমরা ভাসছি। এ কল্পনাকে ভাঙতে হবে বাস্তবতার আঘাতে। ঘুম ভাঙাতে হবে, সকাল যে হয়ে গেছে, আর কত!

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় রোজ মারা যাচ্ছে ৬৪ জন। আর এসব দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা! লাগাম টেনে ধরতে হবে এখনই, না হয় জীবন নিয়ে বাড়ি ফেরা স্বপ্নের মতো হয়ে যাবে একসময়। সড়ককে নিরাপদ করতে হলে সবার আগে নিরাপদ করতে হবে আমাদের ব্যবস্থাপনাকে। নিরাপদ মানসিকতা দিয়ে অর্জিত হবে নিরাপদ সড়ক। প্রয়োজনে প্রতি জেলা-উপজেলায় বিশেষ ফোর্স করতে হবে। স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে যোগ্য, মানবিকতা আর দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষকে আনতে হবে। মাদকবিরোধী আর বর্তমানে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মতো নিরাপদ সড়ক অভিযান শুরু করতে হবে। সামান্যতম ত্রুটির কারণে যাতে প্রাণ না হারায় কেউ, একটু গাফিলতির কারণে যাতে অনেক মানুষকে হাহাকার করতে না হয়, ঠিক সেরকম ব্যবস্থাপনাই কাম্য দেশের মানুষের।

মানুষের ভীতি দূর করতে হবে, প্রশাসনের সাহসিকতা দ্বারা। দেশ এগিয়ে যাবে অথচ সড়ক হবে মৃত্যুফাঁদ তা মেনে নেওয়া যায় না। মহাসড়কের রাস্তা নির্মাণের গাফিলতিও দুর্ঘটনার কারণ। রাস্তা ভেঙে যাওয়া কিংবা রাস্তার বাঁকে অব্যবস্থাপনা ঘটায় দুর্ঘটনা। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কড়া জবাবদিহিতার মধ্যে আনা জরুরি। আইন করবে সরকার, আবার এই আইন প্রয়োগ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার দায়িত্বও সরকারের। জনসচেতনতার কথা বলে দায় এড়ালে হবে না। রাষ্ট্রকেই সেই সচেতনতা গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। সভা-সেমিনারে কথার মধ্য সীমাবদ্ধ রাখলে সড়ক নিরাপদ হবে না। প্রতিটি জায়গায় ধরে ধরে কাজ করতে হবে।

মহাসড়কে গাড়ি পাল্লা দেওয়ার রেওয়াজ কীভাবে কমানো যায়, এ বিষয়ে ভাবতে হবে। মোটরসাইকেল আরোহীদের বেপরোয়া চালনায় অনেক তরুণ প্রাণের মৃত্যু ঘটে, এ ব্যাপারে লাইসেন্স প্রদানে কড়াকড়ি দরকার। যাত্রী নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিতে হবে। হাইওয়ে পুলিশের তদারকিতে সবসময় একটা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে হবে যানবাহনকে। প্রতিটি জায়গায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে। মনে রাখা দরকার দুর্ঘটনা থামানো যায় না, তবে প্রতিরোধ করা যায়। এই প্রতিরোধ করাটাই এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আমাদের।

 

হ লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads