• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক হোক সৌহার্দ্যপূর্ণ

লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক হোক সৌহার্দ্যপূর্ণ

প্রতীকী ছবি

মতামত

লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক হোক সৌহার্দ্যপূর্ণ

  • শতাব্দী জুবায়ের
  • প্রকাশিত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

লেখক অনেক মেধা, শ্রমে ও সময়ে একটি বই লেখেন। আবার যারা লেখকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন তারাও কিছুটা আঁচ করতে পারেন। একজন লেখকের চাষের ফসল তার বই। প্রত্যেক লেখকের কাছে তার বই সন্তানের মতো। একজন সন্তানকে যেমন বাবা-মা শত কষ্ট করে লালন-পালন করেন তেমনি একজন লেখকও বই প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত দিনরাত খেটে তা প্রকাশের আলোর মুখ দেখান। আর সর্বশেষ যিনি দেখেন তিনি প্রকাশক। তিনি বইটি প্রকাশের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেন। এখন প্রশ্ন হলো, দিন শেষে সবারই প্রাপ্তি থাকা দরকার। বই লিখে লেখকের কী প্রাপ্তি আর প্রকাশ করে প্রকাশকের কী লাভ? লেখক ও প্রকাশকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বই বাজারে আসে। এরপর পাঠকরা তা হাতে পান। তবে অনেক নবীন ও প্রবীণ লেখকদের অভিযোগ তারা বইয়ের রয়্যালিটি পান না। মানে প্রকাশক দেন না। এমন অভিযোগ প্রকাশকের বিরুদ্ধে। এর একটা বিহিত বা সমাধান হওয়া দরকার। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য যেটা করা দরকার সেটা হলো লেখক-প্রকাশকের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা।

লেখক-প্রকাশক পারস্পরিক টানাপড়েনে লেখকের অভিযোগ ঠিক কত সংখ্যক বই ছাপা হচ্ছে তা জানতে পারেন না বলে রয়্যালটির বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যায় না। আর প্রকাশকের বক্তব্য লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস আস্থা আর সম্মানের হলেই অভিযোগগুলো আর আসে না। কিন্তু দুজনের পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিই পারে উভয়কেই সন্তুষ্ট রাখতে। একটা বিষয় লেখকদের লক্ষ রাখা দরকার, বই প্রকাশের আগে লেখক-প্রকাশকের চুক্তি না থাকলে রয়্যালটি দিতে প্রকাশক বাধ্য নন এবং লেখকেরও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই লেখক এবং প্রকাশক— উভয়েরই চুক্তিতে আসা উচিত সমঝোতার মাধ্যমে। চুক্তি না থাকাটাই রয়্যালটি নিশ্চিত করার পথে বড় বাধা, এদিকে লেখকদের দৃষ্টি দিতে হবে। লেখক দেখবেন প্রকাশককে আবার প্রকাশক দেখবেন লেখককে। তাহলেই সমাধান হবে সমস্যার। কারো বিরুদ্ধে কারো অভিযোগ থাকবে না।

পত্রিকা থেকে জানা যায়, মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েই বই প্রকাশের অভিযোগ ওঠার কারণে এ বছর বইমেলায় স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে লেখক সম্মানীর প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলা একাডেমি। তবে প্রকাশকদের তোপে বিষয়টি নিয়ে এগোতে পারেনি বাংলা একাডেমি। প্রকাশকদের ক্ষোভ হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কারো রয়্যালটির কাগজ যাচাই করার এখতিয়ার বাংলা একাডেমির নেই।

বিষয়টি সবাইকে মনে রাখা দরকার। বই একটা শিল্পকর্ম, এর পেছনে হাড়ভাঙা খাটুনি থাকে, শ্রম থাকে, সময় যায়। এসব মিলিয়ে যখন শিল্পটি দাঁড়াচ্ছে এবং বাজারজাত হচ্ছে তখন বিনিময় মূল্য দাঁড়ায়। এটা থেকে লেখককে বঞ্চিত করা অপরাধের মধ্যে পড়ে। বঞ্চিত হওয়া মানে কেবল শিল্প তৈরির সুখটাই লেখক পাচ্ছেন, কিন্তু মধ্যখানে বেঁচে থেকে যে শিল্পটা দাঁড় করাচ্ছেন সেই বাঁচার জন্য যে রসদ সেটি কীভাবে লেখক সংগ্রহ করবেন— সেটা কেউ ভাবে না। ওই রসদটার জন্যই রয়্যালিটিটা জরুরি।

লেখকের রয়্যালিটির জন্য প্রকাশকদের সদিচ্ছা থাকা দরকার। বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব কিছুই তারা নগদ মূল্যে কেনেন, কেবল মেধা থেকে যে পাণ্ডুলিপি সেটাই বিনামূল্যে পেতে চান। এটা প্রকাশকদের প্রবণতা। এই প্রবণতা আবার ভালো করে ভর করে যখন তারা সংঘবদ্ধভাবে এই আচরণটা করেন। তখন লেখকরা নিরুপায় হয়ে প্রকাশকের কথামতো বই দিতে বাধ্য হন। বাংলা একাডেমির তথ্যানুযায়ী,  গত বইমেলায় মোট ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রয়্যালটির টাকা বলে প্রকাশকরা জানিয়েছে একাডেমিকে। এ হিসেবে ১০ থেকে ১৪ কোটি টাকা পাওয়ার কথা বইগুলোর লেখকদের। তবে বাস্তবতা হচ্ছে হাতেগোনা কিছু প্রকাশক নামকরা কিছু লেখক ছাড়া কাউকেই এই অর্থ বুঝিয়ে দেন না।  প্রকাশকদের লেখকদের মূল্যায়ন করা উচিত। তাদের রয়্যালিটি বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। সে লক্ষ্যে উভয়ের মধ্যে একটি স্বচ্ছ চুক্তিনামা থাকা আবশ্যক। লেখক এবং প্রকাশকের সম্পর্ক ভালো রাখুন। তাহলে লেখকরা যেমন ভালো থাকবে তেমনি প্রকাশকরাও। তাই উভয়ের সম্পর্ক হোক সৌহার্দপূর্ণ।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads