• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
দুদক যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়

লোগো দুদক

মতামত

দুদক যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গত কয়েক দিন যাবৎ যে ঘটনাটি আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে তা হলো জাহালমের বিনা বিচারে তিন বছর জেল খাটা। এ বিষয়টি এমনই একটি বিষয় যা আমাদের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। জাহালম জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গণমাধ্যমে তার ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে যে ছবিটি প্রকাশ পেয়েছে তা যে কতটা নির্মমভাবে উপস্থাপিত তা কেবল একজন বাবাই বুঝতে বা অনুভব করতে পারবেন। দিন শেষে যখন আমরা সবাই সন্তানের ছোট্ট মুখটির জন্য একটি লেমনচোষ নিয়ে ঘরে ফেরার তাড়নায় ছটফট করি সেখানে জাহালম ধূসর বিকালগুলোতে বিনা দোষে জেল খেটে গেল তিনটি বছর! জাহালমের মা-বাবার আকুতি শুনে বুকটা হাহাকার করে উঠল। জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য অনেক অর্থও তারা খরচ করেছেন। ছেলেকে মানুষ করার জন্য সারা জীবনের যে পরিশ্রম ছিল এই পরিবারের তা সম্পূর্ণ ভূলুণ্ঠিত হলো এই কারাভোগে।

এখন আমরা আসি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) বিষয়টিতে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত দুর্নীতি বাড়ছে। যারাই কোনো ক্ষমতায় থাকছে তারাই বিভিন্নভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তার সম্পদ আজ কোটি কোটি টাকা। শোনা যাচ্ছে দেশের বাইরে বিদেশেও নাকি বাড়ি রয়েছে তার। শুধু একজন নয়, এমন অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকা তো দূরে থাক দুর্নীতিবিরোধী কথাও শুনতে চান না। চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রেই যখন নীতিবহির্ভূত আচরণ তখন তা সত্যিই আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির বড় ক্ষতি করে ফেলছে। একদিকে দুর্নীতি অন্যদিকে দুর্নীতি দমন এবং এখন নতুন যে চিন্তা তা হলো জাহালমের মতো বিনা বিচারে বা ভুল বিচারে জেল খাটা।

দুর্নীতি বন্ধে দুদকের অবস্থানকে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতেই হবে। দুদক যদি সঠিকভাবে কাজ করে তবে দুর্নীতিবাজরা ভয় পাবে, অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করা থেকে বিরত থাকবে এবং দুদকের এই কাজটি করতেই হবে। দুদক গত বছর থেকে শুরু করে এই বছরের প্রথম দিকে অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আইনের অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দুদক যেভাবে এগুচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে বড় ভূমিকা রেখেছিল। প্রতিরোধে ও সচেতনতায়ও দুদক ভালো কিছু ভূমিকা রেখেছে। ১০৬-এ কল দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারটিও ছিল যথেষ্ট কার্যকর একটি উদ্যোগ। গত কিছুদিনে সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কোচিং বন্ধে কার্যক্রম, স্কুলের বেশি ফি নেওয়া বন্ধে কাজ এবং হাসপাতালের ডাক্তারদের ব্যাপারে অভিযান যথেষ্ট আশা জাগিয়েছে সাধারণের মনে। অনিয়ম বন্ধে যারা কাজ করবে তাদের নিজেদেরও স্বচ্ছতা প্রদর্শন করতে হবে। দুদক তা করছিলও বটে। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে সাজাও দিয়েছে গত কয়েক দিন আগে। কিন্তু সবকিছুর পরও এমন খবরে দুদকের প্রতি কেউ যদি আস্থা হারায় তা দুদকের জন্য যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের তথা পুরো দেশের। জাহালমের ব্যাপারে দুদকের চেয়ারম্যান তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নিয়েছেন। এটা তাৎক্ষণিক ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু আরো কেউ এমন আছে কি না যারা ভুলভাবে গ্রেফতার হয়েছে, তাদের ব্যাপারেও তদারকি দুদকের এখনি প্রয়োজন। দুদকের যারা তদন্তে রয়েছেন তাদের বিষয়ে আরো বেশি সচেতন থাকাও প্রয়োজন। জাহালমের তিন বছর কারাভোগের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের বিষয়টি খুব সূক্ষ্মভাবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিটি জায়গা থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের একটি মাত্র এই প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য আরো কিছু প্রস্তাবনা রাখছি।

দুদকের প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ব্যাপারে আরো কঠোর নজরদারিতে আসতে হবে। তদন্তের জায়গায় প্রয়োজনে বোর্ড গঠন করে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধবিষয়ক কার্যকারিতা আরো বাড়াতে হবে। বড় বড় দুর্নীতিবাজকে ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। স্বচ্ছতা আনয়নে আসামি ধরার পর দ্রুততার সঙ্গে ব্যাখ্যা প্রণয়নের মাধ্যমে আরো সুগঠিত হতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে ।

সর্বোপরি আমরা চাই দুদক শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠুক এবং দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ চালিয়ে যাক। জাহালমের মতো আর কেউ যেন ভুল বিচার কথার আবর্তে পড়ে জীবনের স্বাদ না হারায়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার সময় এখনই। দুদককে স্বচ্ছ থাকতে হবে এবং এ-কারণেই দুদককে আরো বেশি স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে হবে। আশা করি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়গুলো আরো বেশি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনবে।

 

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads