• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মাদকে ধ্বংস হচ্ছে মেধাসম্পদ

মাদকে ধ্বংস হচ্ছে মেধাসম্পদ

প্রতীকী ছবি

মতামত

মাদকে ধ্বংস হচ্ছে মেধাসম্পদ

  • মো. এমদাদ উল্যাহ
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

চারদিকে মাদকের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র কথা জানিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ‘মাদক ও অবৈধ অস্ত্র সমাজের বিষফোঁড়া, এগুলো দূর করতে না পারলে নিরাপদ সমাজ গঠন সম্ভব হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। ২০১৮ সালের মাদক সংক্রান্ত ১ লাখ ১২ হাজার মামলায় প্রায় দেড় লাখ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার ও এক হাজার ৬৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।’ এ সময় তিনি পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলেও হুশিয়ার করেন।

মাদক ভয়াবহ এক মরণ নেশার নাম। এর কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশের মেধাবী তরুণ-তরুণী। সমাজের নিম্নস্তর থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্রই এখন মাদকের ছড়াছড়ি। বেশিরভাগ অপরাধের সঙ্গে রয়েছে মাদকের সংশ্লিষ্টতা। মাদকে জড়িতদের কারণে চারদিকে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। ফলে তছনছ হচ্ছে সাজানো পরিবার, বাড়ছে পারিবারিক বিচ্ছেদ। আর খুনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সমাজের ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোনো শ্রেণির মানুষই রক্ষা পাচ্ছে না মাদকের ছোবল থেকে। বিশেষ করে ইয়াবা এখন তরুণ-তরুণীদের মাঝে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে উঠে গেছে দেশপ্রেম, আদর্শ ও নৈতিকতা। মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা এবং জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে না, তারা নানাভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও নষ্ট করছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদকের সহজলভ্যতা, বন্ধুদের চাপে এবং বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকে মাদক গ্রহণ করে থাকে। অনেকের মধ্যে মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা, হতাশা, একাকিত্ববোধ, বিষণ্নতা, শৈশবে বিকাশের সমস্যা থাকলেও অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।  ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে মাদক গ্রহণ করে। পারিবারিক কারণেও অনেকে মাদকে জড়িয়ে পড়ে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে শিক্ষিত তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। পুলিশ কর্মকর্তার আদরের মাদকাসক্ত মেয়ে ঐশীর হাতে পিতা-মাতা খুনের ঘটনাই বলে দেয় মাদকের ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক নিয়ে ২০১৮ সালের শেষ দিকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। সমীক্ষায় বলা হয়, দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক, অর্থাৎ ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০। আর ৭ বছরের বেশি কিন্তু ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫৬ হাজারের কিছু বেশি।

সচেতন মহল দাবি করেছেন, দেশের ভেতরে মাদক তৈরি হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন সীমান্তপথে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক আসছে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে তৎপর রয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতি কমিয়ে মানুষের অবৈধ আয় সংকুচিত করে আনতে হবে। উচ্চশিক্ষা বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আরো সহজলভ্য করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। মফস্বল এলাকায় পাঠাগার স্থাপন, খেলার মাঠের সংস্কার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচিত হবে ছাত্র ও যুবসমাজকে মাদক নির্মূল অভিযানে শামিল ও উদ্বুদ্ধ করা। মাদকদ্রব্যের মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা-সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় বিধিবিধান-সম্পর্কিত শিক্ষামূলক ক্লাস নিতে হবে। সর্বোপরি মাদকদ্রব্য উৎপাদন, চোরাচালান, ব্যবহার, বিক্রয় প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত আইনের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমে মাদকাসক্তির মতো জঘন্য সামাজিক ব্যাধির প্রতিকার করা সম্ভব।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads