• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
‘একুশ’ বাঙালির গর্ব এবং অহঙ্কার

‘একুশ’ বাঙালির গর্ব এবং অহঙ্কার

প্রতীকী ছবি

মতামত

‘একুশ’ বাঙালির গর্ব এবং অহঙ্কার

  • আজহার মাহমুদ
  • প্রকাশিত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাঙালি জাতির ঐতিহ্যময় ও গৌরবের ভাষা বাংলা। আমরা দেশ যেমন রক্ত আর জীবন দিয়ে কিনেছি, ঠিক তেমনি মাতৃভাষাও রক্ত আর জীবন দিয়ে পেয়েছি। এটা এমনি এমনি আসেনি। এটা অস্বীকার করারও কারো কোনো ক্ষমতা নেই। ভাষার জন্য আন্দোলন করে জীবন উৎসর্গ করাটাও বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এটাও বাঙালি জাতি পেরেছে।

ভাষা আন্দোলন অর্থাৎ একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি আমাদের কাছে ঐতিহ্যময় শহীদ দিবস। বিগত ১৮ বছর ধরে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও সুপরিচিত সারা বিশ্বে। জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করায় বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি বাড়তি এক গর্ব বয়ে এনেছে।

১৯৫২ সালের এই দিনে অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন করে ছাত্ররা। সেদিন আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে তৎকালীন পাকিস্তানি পুলিশ। তখন ভাষার জন্য প্রাণ হারায় দেশপ্রেমিক তরুণ ছাত্ররা। মাতৃভাষার জন্য হতে হয়েছে শহীদ। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে আসছে স্বমহিমায়।

১৯৯৮ সালে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা দিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

এতকিছুর পরেও যেন আমরা প্রকৃত সুখ অনুভব করতে পারছি না। কারণ আজ আমরা বাংলা ভাষাকে ভুলে যাচ্ছি। আমরা ভুলে যাচ্ছি ‘অ আ ই এ ও ক গ ও ব ড ত’ এসব বর্ণমালাকে। আমাদের ভাষা হয়ে গেছে আজ বাংলিশ। আমরা আজ ইংরেজি বর্ণমালা দিয়ে বাংলা লিখছি। কতটা বেদনাদায়ক এ বিষয়টি সেটা বাংলা ভাষাকে ভালো না বাসলে বোঝা যাবে না। আমরা আমাদের কথায়ও আজকাল বাংলার সঙ্গে অনায়াসে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করছি, যা আমাদের এখন নিত্যদিনের বিষয়। টেলিভিশনের খবর থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে আমরা এখন বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার করছি না। অথচ এই ভাষার জন্যই সালাম, রফিক, বরকতরা নিজেদের জীবন দিয়েছিলেন। তবে এটাই কি আমাদের প্রতিদান! এটাই কি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা? আসলে আজ আমরা সাজানো গোছানো সবকিছু পেয়ে ভুলে গেছি ইতিহাস। আমরা ভুলে গেছি এই ভাষা আর এই দেশের মূল্য কতখানি। কিন্তু কতদিন? কতদিন আমরা এই ভুলের বৃত্তে বসবাস করব। প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার-আমার কাছেই রয়েছে। আশা করি, নিজেকে নিজেই উত্তরটা দিয়ে দিবেন।

আজকাল আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব স্থানে বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠানের সময় গান বাজাতে দেখা যায় ভিন্ন সংস্কৃতির। উচ্চৈঃস্বরে বেজে চলে হিন্দি অথবা ইংরেজি গান। অথচ আমাদের নিজেদের ভাষার গান থাকতে আমরা সেগুলো শুনি না। আবার বাইরে লোক দেখানো দেশপ্রেমে আমরা বিগলিত হই, তখন কোনো দ্বিধা থাকে না। সময় এবং পরিবেশ এমন হয়েছে যে, বাংলা গানের দর্শক যেন কোথাও নেই! কিন্তু হিন্দি গানের আসরে উপচে পড়া ভিড়, বুঝে না বুঝে সুরের তালে নেচেও চলছে বাঙালি, দিচ্ছে শিষ। আবার এই বাঙালিই ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে বাংলিশে পোস্ট করে। হায় লজ্জাকর জাতি! বাঙালির এই হীনমন্যতায় অপরাধবোধ আর লজ্জায় মাথা নুয়ে আসে।

আর কতদিন! আর কতদিন আমরা এই মুখোশ নিয়ে বেঁচে থাকব? আসুন না, আজ থেকে আমরাও পরিবর্তন হই। জানতে চেষ্টা করি আমাদের ইতিহাস। তবেই দেশের প্রতি এবং নিজেদের ভাষার প্রতি সম্মান বাড়বে। শুধু ভাষার মাস নয়, প্রতিটি মাস যেন বাংলা ভাষার মাস হয়ে থাকে বাঙালির হূদয়ে, সেভাবেই পথ চলি। 

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

ধুযধৎসধযসঁফ৭০৫—মসধরষ.পড়স

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads