• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বৃদ্ধরাও হয়ে উঠুক সমাজের অংশ

বৃদ্ধরাও হয়ে উঠুক সমাজের অংশ

ছবি : প্রতীকী ছবি

মতামত

বৃদ্ধরাও হয়ে উঠুক সমাজের অংশ

  • সোহাগ মনি
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০১৯

মানুষ তার জীবনে কয়েকটি কাল অতিক্রম করে। পর্যায়ক্রমে আসা এসব কাল ব্যক্তিকে দিয়ে যায় হরেকরকম অভিজ্ঞতা। একজন মানুষই হয়ে ওঠে কয়েকটি কালের অধিকারী। তার মধ্যে জীবনের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল বোধহয় বৃদ্ধকালই। সমাজ, দেশ ও পারিবারিক অবকাঠামোগত দিক থেকে আমরা এই বৃদ্ধকালের মানুষগুলোকে কতটুকু মূল্যায়ন করি তা ভেবে দেখার বিষয়। তারা নিজেদের কতটুকুই সুখী মনে করে কিংবা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে জীবনের শেষবেলা! যন্ত্রমানবের এই যুগে তার খবরইবা রাখে ক’জন। আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধ এই মানুষগুলোকে আমরা একপেশে করে রাখি। বদ্ধমূল ধারণায় আমরা মনে করি, তাদের বেলা তো শেষই, এসব মানুষের জীবন নিয়ে চিন্তা করার কিছুই নেই, যে ক’দিন আছে এমনিতেই চলে যাবে! কিংবা গুরুত্বের বিচারেও খুব একটা সামনে আনি না তাদের।

বিশ্বাস করুন মানুষের জীবনের একেকটি দিনের মূল্য অনেক, একটি দিনের বাঁচা মানুষকে জীবনের সংজ্ঞায়ন পরিবর্তন করে দিতে পারে। আর সেই মানুষের শেষবেলার জীবনকে আমরা কেমন অবহেলায় রাখি। পরিবার, সমাজ, দেশকে এই মানুষগুলো যা দিয়েছে, তার কতটুকু তারা পায় শেষ জীবনে? একদিকে দেশের কাছে মূল্যহীন, সমাজের কাছে অপ্রয়োজনীয় এবং শেষ পর্যন্ত নিজের পরিবারের কাছেও অবমূল্যায়িত। কিন্তু এসব মানুষ হিসেবে মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।

শেষ জীবনে এই মানুষগুলো নিজেদের খুব একা মনে করে। আমাদের উচিত তাদের সঙ্গ দেওয়া, তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা শোনা, এতে যেমন এই বৃদ্ধ মানুষগুলোকে ভালো রাখা যায়, তেমনি তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা নিজেদের জীবনেও কাজে লাগানো যায়। যে জীবন তারা পার করে এসেছে, সে জীবনের সমস্যা কিংবা সম্ভাবনার গল্পগুলো আমাদের চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকতে পারে। এই বৃদ্ধ মানুষেরা জীবনের শেষ দিকটায় এসে খুব বিষণ্ন হয়ে পড়েন, জীবনের ইতি কীভাবে, কখন ঘটবে সেই চিন্তা কেড়ে নেয় তাদের মুখের হাসিটুকুও। তাই তাদের সবসময় হাসিখুশিতে রাখার চেষ্টা করতে হবে আমাদের, যাতে জীবনের এই দিনগুলো তাদের কাছে তিক্তকর হয়ে না ওঠে।

নিজেকে এই মানুষগুলোর জায়গায় চিন্তা করুন, দেখবেন, কেমন অসহায় বোধ কাজ করে। আপনিই আগামী দিনে এই তিক্তকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন, যেই আপনি আজ খুব কর্মচঞ্চল প্রাণবন্ত, সেই আপনিই জীবনের প্রয়োজনে একদিন বৃদ্ধ হবেন, ঠিক তেমনি একটা সময় তারাও আপনার মতোই ছিল, শুধু সময়ের টানে আজ এ অবস্থার সম্মুখীন। অতএব এই মানুষদের সুখ-দুঃখের কথা ভাবুন, পরবর্তী প্রজন্মও তাহলে আপনাকে নিয়ে ভাববে। না হয় আপনারও এমন তিক্তকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে। দেখা গেছে, কোনো কাজের মতামতে আমরা বৃদ্ধদের প্রাধান্য দিই না খুব একটা। এতে তারাও মনঃকষ্টে ভোগেন, মানসিকভাবে পীড়িত হন। তারা নিজেদের অপ্রয়োজনীয় ভাবতে শুরু করেন। অথচ এই পৃথিবীতে থেকেও নিজেকে এ ধরণির অপ্রয়োজনীয় ভাবাটা খুব বড় কষ্টের। তাই যে কোনো কাজের মতামতের ক্ষেত্রে অন্তত তাদের জানানো এবং মতামত নেওয়াটা অন্তত জরুরি। এতে করে এই মানুষগুলো অন্ততপক্ষে নিজেকে কার্যকর মনে করতে পারবেন, জীবনকে আরো কিছুদিন উপভোগ করতে পারবেন।

এই বয়সী বৃদ্ধ মানুষগুলো আপনার-আমার পরিবারেরই কেউ একজন। তাদের কথা আমাদেরই ভাবতে হবে। জীবনের শেষদিকে তাদের চাওয়া-পাওয়াকে আমাদেরই গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজের ধ্যান-ধারণা পরিবর্তন করা জরুরি কেবল এই মানুষগুলোকে ভালো রাখার প্রয়োজনে। সমাজে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে, কোনো ধরনের অবমূল্যায়ন যাতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। সমাজের কাছ থেকে, কাছের মানুষের কাছ থেকে তারা এতটুকু আশা করতেই পারেন।

দেশ, সমাজ, পরিবারের কাছে তাদের মূল্যায়ন ফিরে আসুক। জীবনের শেষবেলায় কিছু সুখ-স্মৃতি থাকুক তাদের জীবনে এবং চাওয়া-পাওয়ার প্রাপ্তি ঘটুক জীবনের অবেলায়, এমনটাই প্রত্যাশা সমাজ এবং মানুষের কাছে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads