• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

প্রাথমিকে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন

  • মো. এমদাদ উল্যাহ
  • প্রকাশিত ০৬ মার্চ ২০১৯

আজকের শিশুরাই আগামী দিনে জাতির কর্ণধার। আর তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা, নেতৃত্ব সৃষ্টি ও পড়ালেখায় মনোযোগী করে তুলতে প্রতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের নাম ‘স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন’। বাংলাদেশে মোট সরকারি ৬৩ হাজার ৬০১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বুধবার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হয়ে এবং ভোট দিতে পেরে অনেক খুশি। শিক্ষণীয় বিষয় হলো— শিশুরাই নির্বাচন কমিশনার, প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছে। তারা দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে— কীভাবে নির্বাচন করতে হয়। এখানে জোরপূর্বক ভোট গ্রহণ বা জাল ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অপরদিকে জাতীয় সংসদ, সিটি, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একপেশে নীতি প্রদর্শন, মোটা অঙ্কের উৎকোচ নেওয়া ও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব বেশি কাজ করে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে অনেকটা ইচ্ছে করেই দূরে থাকেন। ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোটাধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে’ ১ মার্চকে ‘জাতীয় ভোটার দিবস’ হিসেবে পালন করে সরকার। তরুণ সমাজকে ভোটে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেও এ দিবসটি গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়।   প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের আগে ভোটারদের কাছে ভোটপ্রার্থনা করে লিফলেট, পোস্টার, ক্যাম্পেইন সবই হয়। বিদ্যালয় কক্ষে জাতীয় নির্বাচনের আদলে বসানো হয়েছে গোপন বুথ। ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে প্রার্থীদের নামে নামে। জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনের মতো যথাযথ নিয়ম মেনে এই নির্বাচন পরিচালনা হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষের সামনে ক্ষুদে ভোটাররা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে ভোট প্রদান করে। ভোটারদের আঙুলে দেওয়া হয় অমোচনীয় কালির ছাপ। নির্বাচন শেষে ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচনের কার্যক্রম শেষ করা হয়। তারাই নির্বাচিত করে তাদের প্রতিনিধি।

একটি দেশের জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে শিক্ষা। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক স্তরেই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত রচিত হয়। বিশ্বে প্রাথমিক শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৯০ সালে এ শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। আর ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ, ভর্তি বৃদ্ধি, শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে শিক্ষকদের শিক্ষাদান সংক্রান্ত কার্যাবলির তদারকিসহ ১০ দফা দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে চলমান রয়েছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বা এসএমসি কার্যক্রম। আর শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলাসহ ৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি বা পিটিএ’র কার্যক্রমও চলছে সব স্কুলে।

সূত্র জানায়, প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে সাত সদস্যের স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার বিধান চালু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সাতজন নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্যে সাতটি দফতরও বণ্টনের কথা নির্বাচন-পরবর্তী প্রথম সভায়। দফতরগুলো হচ্ছে— স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, পানিসম্পদ, পরিবেশ, পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, বৃক্ষরোপণ ও বাগান তৈরি এবং অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন। এসব দফতর যাদের ওপর অর্পিত হয়, তাদের কেউ স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কেউ শিক্ষামন্ত্রী, আবার কেউ পরিবেশ মন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী হিসেবে পরিচিতি পায়। এ সাত কাউন্সিলরের নেতৃত্বেই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পরবর্তীকালে তাদের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। নির্বাচিত এসব প্রতিনিধি বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, টিকাদানসহ বিভিন্ন কাজে শিক্ষকদের সহযোগিতা করে। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যায় তারা তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের মাধ্যমে শৈশব থেকে গণতন্ত্রের চর্চা, পরমতসহিষ্ণুতা, মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাভাব অর্জন অনেকটা সহজতর হতে পারে। এছাড়া বিদ্যালয়ের লেখাপড়া, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা ও পরিবেশ উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এ নির্বাচনের মাধ্যমে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোভাব ও সমঝোতা বৃদ্ধি, জাতীয় চেতনা, জাতীয়তা বোধ এবং দেশপ্রেম জাগ্রত হয়।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads