• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

আজকের প্রেক্ষাপটে মূল্যবোধসোহাগ মনি

  • সোহাগ মনি
  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০১৯

সমাজে আমরা অনেকেই একসঙ্গে বাস করি। এখানে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। একেক জন একেক দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। তবু কেন জানি আমরা কিছু ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের নীচতা প্রকাশ করি। এখন সমাজের মানুষের মূল্যবোধ কমতে শুরু করেছে। একজন আরেকজনকে মূল্যায়ন করতে পারছি না কিংবা করছি না। কোনো এক পেশার মানুষ অন্য পেশার মানুষকে খুব সহজেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে। একজন আরেকজনকে বুঝতে চাই না  কিংবা বোঝার চেষ্টাও করি না। এর ফলে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, কমছে মূল্যবোধ। সবাইকে সবার জায়গা থেকে মূল্যায়ন পাওয়ার অধিকার রয়েছে, এ মূল্যায়ন একজন আরেকজনকে করতে হবে। তা না হলে আমরা মূল্যহীন হয়ে পড়ব একজন অন্যজনের থেকে; থাকবে না কোনো প্রীতি, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব সমাজ থেকে।

এই মূল্যবোধ কমতে শুরু করেছে ছোট-বড় সবার মধ্যেই। ছোটরা বড়দের দেখলে অতীতে যে-রকম শ্রদ্ধা আর মূল্যবোধ দেখাতো, তা আর চোখে পড়ছে না সমসাময়িক কালে। বড়দের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ঘাটতি। বড়দের সামনেও কেউ অপরাধ করতে দ্বিধা করে না ইদানীং। বড়দের মধ্যেও দেখা যায় অন্যরকম উদাসীনতা, অনীহা— তারাও তাদের বড়দের মূল্যায়নের পরিবর্তে করছে অবহেলা। আপনাকে-আমাকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হয় আমরা এক অনিশ্চয়তার সমাজের দিকে পৌঁছাতে শুরু করেছি। যে সমাজের নেই কোনো কাঠামো এবং নিশ্চয়তা।

শ্রদ্ধাবোধ, মূল্যায়ন এগুলো যেখানে কম, সেখানে অপরাধও বেশি। সমাজকে ঢেলে সাজাতে হবে সবার অবস্থান থেকে। আপনি আপনার জায়গা থেকে, আমি আমার জায়গা থেকে বাড়াতে হবে এ মূল্যবোধ, করতে হবে নৈতিকতার চর্চা। সমাজে মূল্যবোধ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি দিক হলো, আমরা নিজেদের মধ্যে তথা বড় ও ছোটদের মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছি না। অস্বাভাবিক মেলামেশার ফলে আমরা ভুলিয়ে দিচ্ছি ছোট-বড়র পার্থক্য। সবাই সবাইকে কোনো কথা বলতে দ্বিধা করে না। এর ফলে বেমানান কথাবার্তা উঠে আসে ছোট-বড় সবার মাঝখান থেকে। কমে মূল্যবোধ আর সম্মানের জায়গা। আমাদের সম্মানের জায়গাটি ধরে রাখতে হবে। এই বোধটি অন্তত জাগ্রত রাখতে হবে যে, আমাদের মূল্যবোধের ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে কি-না! যা আমাদের মূল্যবোধের ওপর প্রভাব ফেলে, তাকে পরিহার করাই উত্তম।

মূল্যবোধের অভাবে আমরা দিন দিন কেমন যেন ক্ষয়ে যাচ্ছি— ভেতর এবং বাইরে। সমাজে পড়ছে এর প্রভাব, যেটা বাহ্যিক দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করছি ঠিকই, কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি না এর পরিণতি। বোধের জায়গাটা আমাদের বাড়াতে হবে। যে যতটুকু মূল্যায়ন পাওয়ার যোগ্য, তাকে ততটুকু মূল্যায়ন করতে শিখুন নিজের অবস্থান থেকে, আপনাকে দেখে আরেকজন শিখবে, এভাবেই ছড়িয়ে পড়বে মূল্যবোধের জায়গাটি। না হয় হারিয়ে যেতে থাকবে কালের পরিক্রমায় এই মূল্যবোধ নামক সম্পদ। ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতি, সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্র।

আমাদের পারিবারিক কাঠামো আবহমান কাল থেকেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, না হয় এই সমাজব্যবস্থা এতদিন টিকে থাকত না, টিকে থাকত না আমাদের একের প্রতি অন্যের মায়া-মমতা। সমাজ কাঠামো, পরিবার কাঠামো সবকিছুকে স্বাভাবিক রাখতে হলে আমাদের কয়েকটি দিকে নজর দিতে হবে। যার অন্যতম নৈতিক শিক্ষা। আজকের পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র কাঠামোয়ও নৈতিক শিক্ষার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই নৈতিক শিক্ষা যতদিন আমরা নিজেদের ভেতর লালন করতে না পারব, ততদিন মূল্যবোধ ক্রমেই ক্ষয়ে যেতে থাকবে। নিজেদের সম্প্রীতি আর বন্ধনকে আরো জোরালো করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য। একে অপরের প্রতি মূল্যবোধ কিংবা সমাজের একশ্রেণির মানুষ অন্য শ্রেণির প্রতি মূল্যবোধ জাগ্রত করবে আমাদের নৈতিক শিক্ষার চর্চা। এর ব্যত্যয় ঘটলেই সমাজ ও রাষ্ট্রে সামগ্রিক বিপর্যয় ঘটবে, এটাই স্বাভাবিক।

 

লেখক : শিক্ষার্থী

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads