• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ

ফাইল ছবি

মতামত

কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ

  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০১৯

সবুজ শ্যামলা শস্যে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই শীতলপাটিকে সবুজ আর সতেজ রাখতে যারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা হলেন আমার দেশের নিরীহ কৃষক। তারা আজ নিঃসহায়, গরিব! ১০০ বছর আগে বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, ‘ক্ষেতে ক্ষেতে পুইড়া মরি রে ভাই,/পাছায় জোটে না ত্যানা,/বৌয়ের পৈছা বিকায় তনু/ছেইলা পায় না দানা!’

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও একই কথা বলা যায়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের দেশের প্রধান অর্থনৈতিক জোগানদাতা কৃষক। একটি দেশের প্রধান অর্থনৈতিক জোগানদাতার অবস্থা যদি হয় মর-মর, তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে না দেশটির অবস্থা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছাবে। যদিও আমরা শিল্পে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি, তবু আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা এখনো কৃষিনির্ভর। আর কৃষিই আমাদের শিল্পোন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।

কৃষক পরিবার থেকে ওঠে আসা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তার কষ্টের কথা এইভাবে তুলে ধরেছেন- তিনি বলেন, ‘আমি একজন কৃষকের সন্তান। আমার বাবা সারা বছর ধান ফলিয়ে, সে ধান বিক্রি করে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের ছুটিতে যখন বাড়ি ফিরলাম তখন বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। কেন জানেন, এক মণ ধানের দাম হয়েছে মাত্র ৫০০ টাকা! এভাবে হলে তো আমরা কৃষক পরিবার ভালো থাকতে পারব না।’ ব্রিটিশ আমল থেকে একেবারে নিম্নস্তরের পরিবার থেকেও মেধাবী সন্তানরা দেশের কর্ণধারের ভূমিকা পালন করেছেন। তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আসীন হয়েছিলেন।  তা সম্ভব হয়েছিল শুধু সে সময় ওই পরিবারগুলোর আয়-ব্যয় মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকত। সন্তানদের ভরণপোষণ মেটাতে হিমশিম খেতে হতো না। কিন্তু আজ কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দামটুকুও পাচ্ছেন না।

জাতীয় দৈনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হয়ে আসছে কৃষকের চলমান দুরবস্থার কথা। একটি সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। অন্যদিকে একজন শ্রমিকের মজুরি দিনে ৮৫০ টাকা। এতে প্রতি মণ ধানে কৃষককে গুনতে হচ্ছে লোকসান। ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আবদুল মালেক সিকদার নামের এক কৃষক নিজের পাকা ধানে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মালেক সিকদার বলেন, ‘প্রতি মণ ধানের দামের চেয়ে একজন শ্রমিকের একদিনের মজুরি দ্বিগুণ। এবার ধান আবাদ করে আমরা মাঠে মারা পড়েছি। তাই মনের দুঃখে পাকা ধানে আগুন দিয়েছি।’ এদিকে কালিহাতীর আউলটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান মজনু নামের আরেক কৃষক তার ক্ষেতের পাকা ধান এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী ধান কেটে অর্ধেক অংশ নিজে এবং বাকি অর্ধেক অংশ ক্ষেতমালিককে দিয়ে দিচ্ছেন।

রকিবুল ইসলাম নামের এক চাষি বলেন, ‘বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি মণ ধান ঘরে তুলতে হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করছি এর অর্ধেক দামে। এবার আমরা পথে বসে গেছি। দেশের বেশ কয়টি অঞ্চলে কৃষকের এমন করুণ অবস্থা ভেসে উঠেছে। দেশের চালিকাশক্তি কৃষক যদি ধান চাষ বন্ধ করে দেন, তাহলে ভাবুন তো, আমাদের দেশের কী অবস্থা হবে! তাই সময় থাকতে দেশের মূল সৈনিক কৃষক সমাজকে বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত। ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতা এগিয়ে এলেও সেভাবে সোচ্চার হয়নি এর বিরুদ্ধে। সবাইকে এক হয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আশা করছি সরকার কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে। কৃষকের দাবি বাস্তবায়নে সবাইকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের কাছে জোর দাবি করছি, কৃষকের ন্যায্য দাবিগুলো যেন আন্তরিকভাবে বিবেচনা করা হয়। কৃষককে ধানের ন্যায্য দাম দিয়ে বাঁচাতে হলে সরকারের সুদৃষ্টির বিকল্প নেই। কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ। আমাদের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ কথাই সর্বৈব সত্য।

আমজাদ হোসাইন হৃদয়

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads