• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
 রাজনৈতিক কৌশলগত কারণেই গুরুত্বপূর্ণ

সংগৃহীত ছবি

মতামত

গোলান মালভূমি

রাজনৈতিক কৌশলগত কারণেই গুরুত্বপূর্ণ

  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৯

বিশ্ব পরাশক্তির দেশ যুক্তরাষ্ট্র আবার নতুনভাবে রাজনৈতিক কৌশল সফল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গোলান মালভূমিকে লক্ষ্য করে। এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য ইসরাইলকে তারা সঠিকভাবে ব্যবহার করছে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের সীমানা বলে স্বীকৃতি দেয়, যা গোটা বিশ্ব মেনে নিতে পারেনি। আর এই অনুমোদন দেওয়াকে কেন্দ্র করেই যেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন করে আবার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে এর অবস্থান ইসরাইল এবং সিরিয়া উভয়ের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গোলান মালভূমির আয়তন প্রায় ১ হাজার ১৫০ কিলোমিটার। এটি ইসরাইলের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনব্যাপী আরব-ইসরাইল যুদ্ধের মাধ্যমে তারা এটি দখল করে নেয়। কিন্তু ১৯৭৩ সালে সিরিয়া তাদের এই মালভূমি ফিরে পাওয়ার জন্য আবার ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ১৯৭৪ সালে উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। ফলে তাদের চাওয়াটা স্থিমিত হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবার সেই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল ১৯৮১ সালে তাদের মানচিত্রে এই গোলান মালভূমিকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, ইসরাইলকে আক্রমণ করার জন্য ইরান ঘাঁটি হিসেবে সিরিয়াকে ব্যবহার করতে পারে এবং গোলান মালভূমি হলো সেই প্রয়াসের ‘ফ্রন্ট লাইন’।

গোলান মালভূমি মূলত একটি পাথুরে মালভূমি। আয়তনের দিক থেকে এটি খুব বড় না হলেও কৌশলগত দিক দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই গোলান মালভূমি থেকে ৪০ মাইল দূরে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক শহর এবং দক্ষিণে সিরিয়ার একটি বড় অংশ দেখা যায়। এর ফলে তারা সহজেই সবকিছু নখদর্পণে রাখতে সক্ষম হবে। তা ছাড়া এ জায়গাটিও বেশ উর্বর। এখানে আঙুর, লেবু এবং আপেল প্রচুর উৎপাদিত হয়। ইসরাইলের পানির চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ এখান থেকেই সরবরাহ করা হয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য এটি ইসরাইলের কাছে একটি আদর্শ জায়গা হতে পারে। সিবিএসের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে সেখানে জনসংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। তার মধ্যে ইহুদি ২৩ হাজার এবং ২৭ হাজার দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোক আছে। অন্যরা ভয়ে পালিয়ে গেছে।

গোলান মালভূমিতে বর্তমানে ৩৩টি গ্রাম ও শহর রয়েছে। এর মধ্যে নিমরদ গ্রামটি ১৯৯৯ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল। ইসরাইলের বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে প্রাথমিকভাবে ১২০টি ধর্মীয় সেক্যুলার তৈরি করা হবে। আর ট্রাম্পের নামে নতুন করে একটি শহর গড়ে তোলার সব প্রস্তুতিই তারা হাতে নিয়েছে। যদিও রাশিয়া অনেকবারই এর বিপক্ষে মতামত দিয়েছে বটে; কিন্তু সেটি ইসরাইলের কোনো ধরনের মাথাব্যথার কারণ হতে দেখা যায়নি। ইসরাইল যদি একচেটিয়াভাবে সেখানে আধিপত্য বিস্তার করে, তাহলে সেটা শুধু সিরিয়া নয়- রাশিয়ার জন্যও প্রচ্ছন্নভাবে হুমকি হয়ে থাকল। ইতোমধ্যে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সভাপতিত্বে সেখানে একটি বৈঠক হয়। তখন তিনি পরিষ্কারভাবে ঘোষণা দেন, গোলান মালভূমি ফেরত দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না, এটা আজীবন ইসরাইলের অংশ হয়ে থাকবে। এখন দেখার বিষয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া এই সংকটময় অবস্থা কীভাবে মোকাবেলা করে।

সোহেল দ্বিরেফ

লেখক : শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads