• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রেলের আধুনিকায়ন জরুরি 

ছবি: বাংলাদেশের খবর

মতামত

কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা

রেলের আধুনিকায়ন জরুরি 

  • নাজমুল হোসেন
  • প্রকাশিত ২৭ জুন ২০১৯

মানুষের মনে আজ আতঙ্ক! বাংলাদেশ কি শুধু দুর্ঘটনার দেশ! খুন, হত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি সড়কে মৃত্যুর মিছিল নিত্যদিনের খবর হয়ে উঠেছে প্রিয় স্বদেশে। এ থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে কবে? এর সঙ্গে যোগ হলো সাম্প্রতিক রেল দুর্ঘটনা। গত ২৪ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বরমচাল সেতু ভেঙে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় সেতু ভেঙে একটি বগি খালে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কাজে সিলেট থেকে আসা পুলিশ, স্থানীয় জনতা, র্যাব, বিজিবিসহ ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ করেছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে সহায়তায় একটি রিলিফ ট্রেনও কাজ করে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৩ মহিলাসহ এক শিশু। আহত হওয়া শতাধিক যাত্রীর মধ্য থেকে গুরুতর আহত অনেককেই মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল, কুলাউড়া সদর হাসপাতাল এবং সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মধ্যরাতে সেখানকার দুর্ঘটনার শিকার হওয়া যাত্রীদের বাঁচাও-বাঁচাও চিৎকার, আহাজারি এবং কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। 

এখনো আমাদের দেশে ট্রেন ব্যবস্থাপনা দুর্বল ও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। লোকবল ও সম্পদের অপ্রতুলতাই যেন রেল বিভাগের নিয়তি। তবে আমাদের দেশে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিসীমা কম থাকায় অন্যান্য দেশের ট্রেন দুর্ঘটনার চেয়ে আমাদের দুর্ঘটনায় অপমৃত্যুর সংখ্যা কম। সিলেট রুটের কুলাউড়াসহ বেশ কয়েকটা এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায় সময়ই এসব এলাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে যা স্বাভাবিক বিষয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন ব্যবস্থাপনা আধুনিক হওয়া সত্ত্বেও সাম্প্রতিক এই দুর্ঘটনা আমাদের রেল ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে আবারো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ট্রেনের ইঞ্জিন ও কোচের যান্ত্রিক ত্রুটি এবং রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না করা, বিভিন্ন লাইনে ব্যালাস্ট হিসেবে পর্যাপ্ত পাথর ও স্লিপার না থাকা, ব্রিটিশ আমলের তৈরি রেল সেতুগুলোর ঠিকমতো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করা ইত্যাদি কারণে এ-জাতীয় দুর্ঘটনা দেশের সব রেল রুটেই এখনো চলমান রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়সহ সচেতন মহলের ভাবার সময় এসেছে। মানুষের ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ চাহিদায় রেল যাতায়াত দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।  

চলতি দশকের আগামী সময়গুলোতে রেল যোগাযোগের গুরুত্ব আরো বাড়বে। ভবিষ্যতের এই প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে এখনই রেলকে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে তিতাস সেতুতে সংস্কার কাজ থাকায় সিলেটের সঙ্গে দেশের সব জেলার বাস যোগাযোগসহ অন্যান্য যাতায়াত মাধ্যম একটু অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ফলে কয়েকদিন যাবত সারা দেশের সিলেটমুখী যাত্রীরা রেলের ওপরই ভরসা করছেন। ফলস্বরূপ যেসব বগিতে যতজন যাত্রী ওঠার কথা, সেখানে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে উঠছেন। বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ কতটা সচেতন, সেটিও এখন প্রশ্নের বিষয়!  

ইদানীং সারা দেশে বাস দুর্ঘটনা নিয়ে বহু আন্দোলন, অবরোধসহ অনেক সভা-সমাবেশ হয়েছে। হয়তো নতুন করে ট্রেন দুর্ঘটনার ব্যাপারে জনসাধারণ ও সাধারণ যাত্রীরা অনুরূপভাবে তৎপর হয়ে উঠবেন। ট্রেনে ধারণক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে যাত্রী ওঠার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে। এক্ষেত্রে রেল মন্ত্রণালয়কে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। রেল ভ্রমণে আমাদেরও যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছেন। মহাসড়কগুলো চার লেন, ছয় লেনে উন্নীত হচ্ছে। রেল খাতকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। দ্রুতগতির রেল ভ্রমণ নিশ্চিতে নানা প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্ব-স্ব জায়গা থেকে দায়িত্ব পালনসহ জনমানুষের মধ্যে সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। ‘সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি’— তাকে ধারণ করে যোগাযোগ সেক্টরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার ও জনগণ যুগপৎভাবে এক্ষেত্রে কাজ করা আবশ্যক। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads