• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শিক্ষাব্যবস্থায় জিপিএ ৫-এর প্রভাব

ফাইল ছবি

মতামত

শিক্ষাব্যবস্থায় জিপিএ ৫-এর প্রভাব

  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০১৯

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয় সাড়ে ১৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে খুব শিগগির তারা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ-দেশান্তরে ছুটে বেড়াবে। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা শিক্ষার্থীদের জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত এক বস্তুর নাম জিপিএ-৫। দেশে প্রচলিত যে কোনো পাবলিক পরীক্ষার সর্বোচ্চ অর্জন এটি। জিপিএ-৫ নামক এই সোনার হরিণের সংস্পর্শে যেতে শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার ওপর রয়েছে অভিভাবক আর শিক্ষকদের বাড়তি চাপ। এই বাড়তি চাপেই চাপা পড়ে কখনো কখনো অকালে ঝরে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় তাজা প্রাণ! জিপিএ ৫-কে মেধার একমাত্র পরিমাপক হিসাব করে রাতদিন এই অধরা বস্তুকে তাড়া করে বেড়ায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পেছনে লাগাম ধরে রাখে অভিভাবক আর শিক্ষকরা। কোনো পরিস্থিতিতে যদি তারা পেছন থেকে সেই লাগাম টেনে ধরেন, শিক্ষার্থীদের আর হাঁফ ছেড়ে বাঁচার উপায় থাকে না।

আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই এখন জিপিএ-৫ নির্ভর হয়ে গেছে। প্রকৃত মেধা আর শিক্ষা যা-ই থাকুক না কেন, জিপিএ-৫ তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন, প্রকৃত জ্ঞান এখানে অতি তুচ্ছ বিষয়! আবার শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ নামক সোনার হরিণ কীভাবে অর্জন করছে, সেটাও উদ্বেগের বিষয়। তবে সর্বক্ষেত্রে এটার সমালোচনা করা সমীচীন নয়। প্রকৃত জিপিএ-৫ অর্জনকারীরা অবশ্যই এর মর্ম বুঝবে। অনেকক্ষেত্রেই আমরা জিপিএ-৫ না পাওয়া মানুষদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে প্রকৃত জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর অর্জনকে ছোট করে ফেলি। তখন তারা তাদের অর্জনকে অনর্থক অর্জন ভেবে বসে। চারদিকে তারা জিপিএ ৫-এর এতই সমালোচনা আর ‘অপ্রয়োজনীয়তা’ শোনে যে, তারাও আস্তে আস্তে তাদের এই অর্জনের মর্ম হারিয়ে ফেলে।

সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত বেছে নেওয়া। এমনকি তারা তাদের জীবনকে তুচ্ছ করে বিলিয়ে দিচ্ছে জিপিএ ৫-এর সাগরে। এ করুণ অবস্থা থেকে মুক্তি  পেতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানসিকতার পরিবর্তন এবং এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা তাদের সন্তানদের জিপিএ-৫ পেতে উৎসাহিত করতে পারে; কিন্তু কোনো যুক্তিতেই এটি জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়- এই শিক্ষা তাদের দিতে হবে। অথচ অনেক শিক্ষক বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা এবং অভিভাবকদের অবান্তর প্রতিযোগিতায় প্রতিবছরই বলি হচ্ছে এসব সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণ। জিপিএ-৫ অর্জন করতে পারা এবং জিপিএ-৫ অর্জন করতে না পারা- দুটি ঘটনাকেই আমাদের স্বাভাবিক ঘটনা বলে মেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও এটি বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে উল্লাস করা দৃশ্যের পাশাপাশি ব্যর্থদের আত্মহত্যা নয়, ঘুরে দাঁড়ানোর শপথও শুনতে চাই।

সেফাতুল করিম প্রান্ত

লেখক : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads