• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
আদর্শ সমাজ গঠনে চাই পারিবারিক ঐক্য

প্রতীকী ছবি

মতামত

আদর্শ সমাজ গঠনে চাই পারিবারিক ঐক্য

  • প্রকাশিত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকে, একে অপরের সুখ-দুঃখকে ভাগ করে নেয়, আপদ-বিপদে এগিয়ে আসে। মানুষের এই সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানীরাও আলোচনা করেছেন। একটি দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য আদর্শ সমাজের কোনো বিকল্প নেই। কেননা আদর্শ সমাজ থেকেই উঠে আসে সুনাগরিক, যাদের মাধ্যমে এগিয়ে যায় দেশ ও জাতি।

প্রকৃতির নিয়মেই ভেঙে যায় যৌথ পরিবার, সৃষ্টি হয় একাধিক পরিবারের; তবে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে কিংবা শহরে পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার পদ্ধতি সুখকর নয়। একই পরিবারে একাধিক ভাইদের মধ্যে মিল না থাকার কারণে কিংবা কখনো কখনো পিতা কর্তৃক রেখে যাওয়া সম্পদের পরিমাণ কম বা না থাকলে; পরিবারের বড় সদস্যরা অধিক আয় রোজগার করলে অন্যদের সঙ্গে তৈরি হয় আর্থিক ও মানসিক দূরত্ব। আবার কখনো কখনো দেখা যায় পরিবারের বড়রা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ছোটদের লেখাপড়া শিখানোসহ ভালো চাকরি কিংবা ব্যবসার সুযোগ করে দিলেও ছোটরা অধিক আয়-রোজগার করার ফলে অন্যদের সঙ্গে আর্থিক ও মানসিক দূরত্ব তৈরি করে আলাদা হয়ে যায়। পাশাপাশি সম্পত্তির বণ্টন নিয়েও তৈরি হয় সংকট। এরকম নানামুখী সমস্যা বিদ্যমান আমাদের সমাজে। এমনকি পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের দায়িত্ব নিয়েও পরিবারের ছেলে-মেয়েরা, বিশেষ করে ছেলেরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে পারে না।

যৌথ পরিবার ভেঙে নতুন পরিবার সৃষ্টি করা প্রকৃতির চিরন্তন সত্য নিয়ম হলেও নানা সমস্যার জটিল আবর্তেই জন্ম নেয় একক পরিবার। নিজেদের মধ্যে এভাবে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ায় অবশেষে বর্তমান সমাজে বৃদ্ধ বাবা-মার ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। আর তাই আমাদের সমাজেও পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণায় গড়ে উটতে দেখি অসংখ্য বৃদ্ধাশ্রম। তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সন্তানরা আজ ভুলতে বসেছে বৃদ্ধ বয়সে জন্মদাতা ও জন্মদাত্রী বাবা-মায়ের প্রয়োজনীয় সেবাশুশ্রূষা করা এবং তাদের ভালো থাকার ব্যবস্থা করা প্রত্যেক সন্তানের আবশ্যিক দায়িত্ব।

একাধিক পরিবার নিয়েই গঠিত হয় একটি সমাজ। আর এই সমাজের প্রতিটি পরিবারের মধ্যেই যখন থাকে পারিবারিক বিরোধ, অশান্তি এবং বৃদ্ধ পিতামাতাকে নিয়ে অবহেলা; তখনই সমাজে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা, যার প্রভাব পড়ে পুরো সমাজে, ছোট ছোট শিশুর ওপর। পারিবারিক ঐক্য না থাকার কারণে সমাজের একে অপরের সুখে-দুঃখে কিংবা যেকোনো প্রয়োজনে এগিয়ে আসা বন্ধ হয়ে যায়; একলা চলো, নিজে ভালো থাকো নীতি অবলম্বনের কারণে এখন বিনষ্ট হয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক সদাচরণ।

আদর্শ সমাজ গঠনে পারিবারিক ঐক্যের বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে একটি যৌথ পরিবার ভেঙেই সমাজের স্বাভাবিক আচার-প্রথা বিলুপ্ত হতে বসেছে। প্রকৃতির নিয়মে যৌথ পরিবার ভেঙে নতুন একক পরিবারের সৃষ্টি হলেও সম্পদ বণ্টন নিয়ে বিরোধ, কোনো একজনের বেশি সম্পদ হয়ে গেলে অপর সদস্যদের প্রতি অনীহা প্রকাশ, পিতা-মাতার সেবা-শুশ্রূষা নিয়ে বিরোধ কিন্তু থেমে থাকে না। পৃথিবী মানেই সমস্যাসংকুল! কিন্তু সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তার সমাধান করাই সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষেরই কর্তব্য। তবেই সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি বিরাজ করবে। আর এ জন্যই সব ধরনের পারিবারিক ঝামেলা মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। পারিবারিক ঐক্য বজায় থাকলে একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখান থেকে বেরিয়ে আসে মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন সুনাগরিক, উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি সুশিক্ষিত ব্যক্তি, যাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে দেশ ও জাতি।

জুবায়ের আহমেদ

লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads