• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
কোন আলো ছড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়

সংগৃহীত ছবি

মতামত

কোন আলো ছড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়

  • প্রকাশিত ১৩ অক্টোবর ২০১৯

দেশ গড়ার বাতিঘর বলা হয় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। পূর্ব প্রজন্মের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইতিহাসকে পুঁজি করেই তাদের পথচলা। বর্তমানকে নিয়ে ভাবার সময় তাদের কোথায়! প্রতি বছর হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী লাখো প্রতিযোগীর সঙ্গে একপ্রকার মেধা যুদ্ধ করে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। কত স্বপ্ন, কত আশা নিয়ে পরিবার তাদের আদরের সন্তানকে স্বপ্ন তৈরির বাতিঘর ক্যাম্পাসে পাঠায়। কিন্তু হায়! এ কি সত্যিই স্বপ্ন তৈরি ও বাস্তবায়নের জায়গা! প্রথম বর্ষেই অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থী যারা হলে উঠতে চায়, তাদেরকে রাখা হয় ‘গণরুম’ নামক এক বস্তিতে! মেধাযুদ্ধ করে সফল হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীর জায়গা হয় একটি ছোট রুমের মেঝেতে ২৫-৩০ জনের সঙ্গে! তারপর থেকে চলে তার রাজনৈতিক দীক্ষা গ্রহণ! পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিনের বেলায় তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হতে হয়, আর রাতের বেলায় হলের তথাকথিত বড় ভাইদের উপস্থিতিতে চলে সারা দিনের কর্মকাণ্ডের হিসাব এবং বিচার! আহা! কি সুন্দর পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের!

ছাত্র রাজনীতির নামে চলে অত্যাচার আর নির্যাতনের মহা উৎসব। কিন্তু এসবের দেখভালের দায়িত্ব যাদের ছিল, সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করছে কি! তাদের কাজটা কি! অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো সফল কাজ বা নিয়মিত রুটিন কাজও হয়তো দেখেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা না করে, লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্ররাও তাদের মহান শিক্ষকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।  বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গণতন্ত্রের সূতিকাগার। কিন্তু এখন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে ক্ষমতার অপব্যবহার। সন্দহের বশে চলছে হত্যার অপসংস্কৃতিও। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা সেটারই একটা নজির। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে এই নির্যাতন নিয়মিত ঘটনা! অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, অন্যায়, অপরাধের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার এই কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। ছাত্র রাজনীতি এখন তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অনিয়ম দেখার দায়িত্ব ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। কিন্তু তাদের সেই সময় নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে বলা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবিত শিক্ষার্থীর থেকে মৃত শহীদ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। যে বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, সেখানেও চলছে অনিয়মের মহা উৎসব। হলে হলে নির্যাতনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চুপ। গবেষণা বাদ দিয়ে এখানে চলে চেতনা বিক্রি!  প্রাকৃতিক নিসর্গের লীলাভূমি বলা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়কে, সেটি হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেও মহা দুর্নীতির খবর ইতোমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এমনকি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এখনো আন্দোলন চলছে। জাতির পিতার পুণ্যভূমিতে তারই নামে গড়া বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কদিন আগেই ছাত্র আন্দোলনে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন সেখানকার উপাচার্য। দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শিক্ষার আলো ছড়ানো, গবেষণা করা; সেখানে চলছে সন্ত্রাস, অত্যাচার, নির্যাতন, দুর্নীতি।

আজকাল বিশ্বের কোথাও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান এত নিচে নেমে গেছে যে, বর্তমানে এখান থেকে পাশ করে বেশির ভাগ বেকার হয়ে বসে থাকে। অথচ এটা হওয়ার কথা ছিল না। এই হতাশা থেকে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে! স্বপ্ন নিয়ে পড়তে এসে প্রিয় ক্যাম্পাস থেকে লাশ হয়ে বের হচ্ছে, অত্যাচারের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় আসলে কোনো আলো ছড়াচ্ছে কি?

মো. তাসনিম হাসান আবির

লেখক : শিক্ষার্থী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads