• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
কেমন আছে বাংলাদেশ

ফাইল ছবি

মতামত

কেমন আছে বাংলাদেশ

  • প্রকাশিত ০২ নভেম্বর ২০১৯

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলায় ভরা এ দেশ, বাংলাদেশ। এ দেশ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি। মাঠের পরে মাঠ, সাগরের উত্তাল ঢেউ, পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের ভেলা, সবুজের অরণ্য। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়, ভরে যায় প্রাণ। এমন একটি সমৃদ্ধশীল দেশ এমনিতেই অর্জিত হয়নি। ’৫২-এ ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত এক ভূখণ্ডের নাম বাংলাদেশ। সালাম, রফিক, জব্বারের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলা ভাষা। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও যেন পরাধীন আমরা। টেলিভিশনের পর্দায় তাকালে বা পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যা। ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা বন্ধ হয়নি।

বিজিবির তথ্যানুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে মারা গেছে ৯৩৬ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ৭৬৭ জন ও ভারতীয়দের হাতে ১৬৯ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে সীমান্ত বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, তবুও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি দুদেশের সরকারের। সবার এখন একটাই প্রশ্ন সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ হবে কবে? আর এ হত্যাকাণ্ড বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে যেতে হবে জাতিসংঘে।

দিন দিন বেড়েই চলেছে আবরার-বিশ্বজিৎ-রিফাতদের সংখ্যা। বাড়ছে ফেলানী, তনু, রাফি, সায়মাদের সংখ্যাও। পৃথিবীতে বাবা-মা যেখানে সন্তানের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ সেখানে বাবার দ্বারা নিজের শিশু দিনের পর দিন ধর্ষিত হচ্ছে! শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী হচ্ছে ধর্ষণের শিকার, শ্বশুরের ধর্ষণের শিকার পুত্রবধূ। সম্প্রতি রাজধানীতে সায়মা নামের এক শিশুকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। শিশু, বালিকা, যুবতী, স্কুল-কলেজের ছাত্রী, শিক্ষিকা, গৃহবধূ, প্রতিবন্ধী, গার্মেন্টকর্মী, ডাক্তার, চার সন্তানের জননী, এমনকি বৃদ্ধাও বাদ যাচ্ছে না ধর্ষিতার তালিকা থেকে। কিন্তু এটা কাম্য নয়। মনে হয় দেশে ধর্ষণের একটা প্রতিযোগিতা চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনুযায়ী বাবার বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, হাটবাজার, রাস্তাঘাট কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই নারীদের। সামাজিক অবক্ষয়, পর্দাহীন চলাফেরা, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব এসবই দায়ী ধর্ষণের জন্য। অন্যদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের বিচার দেরিতে হওয়ায় বেড়েই চলেছে প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড। কেন এই পরিণতি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের? এর জবাব দেবে কে?

এমন দেশ তো আমরা চাইনি, আমরা চেয়েছিলাম স্বাধীন-সার্বভৌম একটি দেশ। যে দেশে থাকবে শুধু শান্তি আর স্বস্তি। বর্তমানে ধর্ষণ, খুন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি সব মিলিয়ে দেশটা আজ বহিঃবিশ্বের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ছে। কোনোভাবেই কমছে না ধর্ষণ, হত্যা, চাঁদাবাজি। এমতাবস্থায় সবাইকে মানুষ হতে হবে। কাজ করতে হবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। এগিয়ে আসতে হবে মানবতার জন্য। মানবিক আর নৈতিক মূল্যবোধ আজ বড় বেশি প্রয়োজন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার দ্বন্দ্ব কাটেনি। তাহলে সেই স্বাধীনতার স্বাদ কবে ভোগ করবে স্বাধীনতাকামী মানুষ। দেশজুড়ে অপরাজনীতি, ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসবাদ, ক্যাসিনোকাণ্ড, হত্যাযজ্ঞ, লুটতরাজ। এমতাবস্থায় দেশের সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন কেমন আছে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব? কেমন আছে বাংলাদেশ?

তবু বলব প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান জিরো টলারেন্স নীতি দেশের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। দেশবাসী চায় এর অব্যাহত অভিযান। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিষদাঁত ভেঙে দিতে পিছপা হবে না।

আবু জাফর সিদ্দিকী

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads