• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠুক পাঠাগার

ফাইল ছবি

মতামত

পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠুক পাঠাগার

  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০১৯

অন্তহীন জ্ঞানের আঁধার হলো বই, আর বইয়ের আবাস হলো গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি। মানুষের হাজার বছরের লিখিত-অলিখিত সব ইতিহাস ঘুমিয়ে আছে একেকটি গ্রন্থাগারের ছোট ছোট তাকে। গ্রন্থাগার হলো কালের খেয়াঘাট, যেখান থেকে মানুষ সময়ের পাতায় ভ্রমণ করে। প্রাচীন শিলালিপি থেকে আধুনিক লিপির গ্রন্থিক স্থান হলো লাইব্রেরি। একটি গ্রন্থাগার মানব জীবনকে যেমন পাল্টে দেয় তেমনি আত্মার খোরাকও জোগায়। তাই গ্রন্থাগারকে বলা হয় শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সাথে সব সময় ভালো সম্পর্ক থাকে। আর জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনন্য। ইউনেস্কোর  মতে, মুদ্রিত বই, সাময়িকী অথবা অন্য যে কোনো চিত্রসমৃদ্ধ বা শ্রবণ-দর্শন সামগ্রীর একটি সংগঠিত সংগ্রহ হলো গ্রন্থাগার; যেখানে পাঠকের তথ্য, গবেষণা, শিক্ষা অথবা বিনোদন চাহিদা মেটানোর কাজে সহায়তা করা হয়।

বই-পুস্তক মানুষের জীবনধারা বদলে দিতে পারে। মোড় ঘোরাতে পারে মানুষের জীবনের। বর্তমান ফেসবুক-মেসেঞ্জারের জামানায় কিশোর থেকে শুরু করে যুবক এমনকি বয়স্করাও আটকে আছেন মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে। এ ক্ষেত্রে এখন শিশুরাও বাদ যায় না, খাবার খেতে শিশুর বায়না ওই মোবাইল কিংবা কম্পিউটার। অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তি যে কেবল নেতিবাচক দিক নিয়েই আছে, তা বলছি না। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে অকল্পনীয়ভাবে। জন্মভূমিতে জন্ম নিচ্ছে রূপকথারা।

তবে এ কথা মেনে নিতেই হবে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল ফোনের আসক্তি যত বাড়ছে ততই কমছে বই পড়া কিংবা কলম-খাতায় লেখার প্রবণতা। ক্লাসের পাঠ্যবই মুখস্থ করে শিক্ষার্থীরা এ প্লাস পাচ্ছে ঠিকই; কিন্তু এর বাইরের জ্ঞান আহরিত হচ্ছে না আদৌ। জানা হচ্ছে না পেছনের দিনগুলোর কথা, বিকাশিত হচ্ছে না সুপ্ত প্রতিভার, দেখা হচ্ছে না কাগজে বন্দি করে রেখে যাওয়া সাহিত্যিকদের সব অনবদ্য রচনাসম্ভার। তাই বর্তমান সময়ে তরুণদের কথা চিন্তা করেই পাঠাগার স্থাপনের নেই কোনো বিকল্প। পাঠাগার হলো বই, পুস্তিকা ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রীর একটি সংগ্রহশালা, যেখানে পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং পাঠক সেখানে পাঠ, গবেষণা কিংবা তথ্যানুসন্ধান করতে পারে। অর্থাৎ গ্রন্থসজ্জিত পাঠ করার আগার বা স্থান হলো প্রন্থাগার।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন— ‘মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত।’ তার মতে, অতলস্পর্শ কালসমুদ্রের ওপর কেবল এক-একখানি বই দিয়ে সাঁকো বাঁধা যায়।

লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার হলো জ্ঞানের ভান্ডার। বলা হয় একটি জাতির লাইব্রেরি যত বেশি সমৃদ্ধ সেই জাতিও তত বেশি সমৃদ্ধ। আবার এমনও প্রবাদ রয়েছে, একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য আগে তার জ্ঞানের ভান্ডার লাইব্রেরি ধ্বংস করে দাও। অতি প্রাচীন সময় থেকেই লাইব্রেরির প্রতি রয়েছে আলাদা কদর। ইদানীং পাড়ায় পাড়ায় তরুণদের একটা বিষয় ভালো লাগে, ক্লাব-সমিতি গঠন করে একতা বজায় রাখা। তবে এই ক্লাব যেন না হয় রাজনীতি শিক্ষার সূতিকাগার। আর সেই পথ রুদ্ধ করতেই প্রয়োজন প্রতিটি ক্লাবের অফিস কক্ষে এক-একটি পাঠাগার। হরেক রকম বই দিয়ে সাজানো হোক পাঠাগারটি। পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার গড়তে, দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদেরই। তবেই বদলে যাবে আমাদের ভবিষ্যৎ।

রেদ্বওয়ান মাহমুদ

লেখক : শিক্ষার্থী

redwanmahmud22@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads