• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
আরো একবার ভাসানী-মুজিব প্রসঙ্গ

সংগৃহীত ছবি

মতামত

আরো একবার ভাসানী-মুজিব প্রসঙ্গ

  • শাহ আহমদ রেজা
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০১৯

গত ১৭ নভেম্বর ছিল মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুদিবস। মহান এই জাতীয় নেতা সম্পর্কে সংক্ষেপে হলেও কিছু কথা বলা দরকার। কারণ, পাকিস্তানের অধিকার বঞ্চিত প্রদেশ পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) স্বায়ত্তশাসনের প্রাথমিক আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে তার ছিল বলিষ্ঠ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসনের যে পর্যায়ক্রমিক আন্দোলন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল, মওলানা ভাসানী ছিলেন তার প্রধান নির্মাতা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পর এই প্রদেশের প্রতি শোষণ, বঞ্চনা ও অবিচারের সূচনা হলে প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে এবং পরবর্তীকালে নিজের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে গঠিত আওয়ামী লীগের মাধ্যমে তিনি স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে ক্রমাগত তীব্রতর করেছিলেন। মওলানা ভাসানী স্বায়ত্তশাসন চাইতেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ভিত্তি ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী— যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের মতো প্রতিটি প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যের জন্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি ঘোষিত হয়েছিল।

স্বায়ত্তশাসনের বিকল্প হিসেবে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা চালানো ও জনমত সংগঠিত করা ছিল মওলানা ভাসানীর পরিচালিত আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। স্বায়ত্তশাসনসহ প্রদেশের বিভিন্ন দাবিসংবলিত ২১ দফার ভিত্তিতে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মওলানা ভাসানী একজন প্রধান নেতার ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু নিরংকুশ বিজয় অর্জন করা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র এবং যুক্তফ্রন্টে নেতৃত্বের কোন্দলে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। এ সময় থেকেই মওলানা ভাসানী স্বাধীনতার কথা বলতে শুরু করেছিলেন। ১৯৫৫ সালের ১৭ জুন এবং ১৯৫৬ সালের ৭ ও ১৫ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত তিনটি জনসভায় তিনি ঘোষণা করেছিলেন, স্বায়ত্তশাসন না দেওয়া হলে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতার কথা চিন্তা করবে। বলা দরকার, ওই দিনগুলোতে স্বাধীনতার কথা বলা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। কিন্তু দুর্দান্ত সাহসী নেতা মওলানা ভাসানী কোনো কিছুকে পরোয়া করেননি। সে কারণে পাকিস্তানিরা, এমনকি তাঁর নিজের দলের অনেকেও তাকে ‘হিন্দুস্থানের দালাল’ বানিয়ে ছেড়েছিল।

অন্যদিকে ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বায়ত্তশাসন না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হিসেবে আয়োজিত ‘কাগমারী সম্মেলনে’ মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ তথা বিদায় জানানোর এবং পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিষয়টি সাধারণ ছিল না। কারণ, মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তখন কেন্দ্রে ও প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল। প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এদিকে মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানসহ প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায়ও আওয়ামী লীগের নেতারাই ছিলেন। তাদের প্রায় সবাই সে সময় পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানানোয় মওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরিণতিতে মওলানা ভাসানীকে তার নিজের হাতে গড়া আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল, তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে নতুন একটি দল গঠন করেছিলেন (জুলাই, ১৯৫৭)। এরপর মওলানা ভাসানী ন্যাপের মাধ্যমে তার স্বাধীনতামুখী স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন।

১৯৬৯-এর যে গণ-অভ্যুত্থান পাকিস্তান সরকারকে স্বায়ত্তশাসন স্বীকার করে নিতে বাধ্য করেছিল, সে গণ-অভ্যুত্থানের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন মওলানা ভাসানী। সেটা এমন এক সময় যখন শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে ছিলেন। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে মওলানা ভাসানী ‘ঘেরাও’ নামের এক নতুন ধরনের আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এই ঘেরাও আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত হয়েছিল ছাত্রসমাজের ১১ দফা আর ১১ দফাভিত্তিক গণ-অভ্যুত্থানেই মুক্তি পেয়েছিলেন শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক বন্দিরা। মওলানা ভাসানী পরিস্থিতিকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যখন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। যখন স্বাধীনতার দাবি এসে গিয়েছিল মানুষের মুখে মুখে। স্বাধীনতামুখী এই অবস্থান থেকে জনগণকে আর কখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। বস্তুত ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ছিল সরাসরি পাকিস্তানবিরোধী সফল অভ্যুত্থান এবং তার প্রধান নির্মাতা ছিলেন মওলানা ভাসানী।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে ১২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার যথারীতি চরম উপেক্ষা দেখিয়েছে। অন্যদিকে মওলানা ভাসানী নিয়েছিলেন দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতার অবস্থান। হাসপাতালের বিছানা থেকে তিনি ছুটে গেছেন উপদ্রুত অঞ্চলে। ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ ভাসানী এরপরই সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের ৩০ নভেম্বর এক প্রচারপত্রের মাধ্যমে আহ্বান জানানোর পরপর ৪ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানের জনসভায় মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে পবিত্র কোরআনের সুরা ‘কাফেরুন’ থেকে আয়াত উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘লাকুম দিনুকুম ওয়া লিয়া দিন’ (তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আর আমাদের জন্য আমাদের ধর্ম)। অর্থাৎ তোমার রাস্তায় তুমি যাও, আমাকে আমার রাস্তায় চলতে দাও। এটা ছিল সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা। এর ভিত্তিতেই মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল। প্রমাণিত হয়েছে, ন্যাপ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলেই আওয়ামী লীগের পক্ষে নিরংকুশ বিজয় অর্জন করা এবং শেখ মুজিবের পক্ষে প্রধান নেতায় পরিণত হওয়া সম্ভব হয়েছিল।

নির্বাচনের পর ১৯৭১ সালের ৭ জানুয়ারি মওলানা ভাসানী স্বাধীনতা সংগ্রামের পাঁচ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ৯ জানুয়ারি তার উদ্যোগে সন্তোষে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সম্মেলন থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। ৩ মার্চ থেকে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে আরো একবার স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বানমুখে সোচ্চার হয়েছিলেন মওলানা ভাসানী। ৪ মার্চ এক বিবৃতিতে তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। ৯ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি ২৫ মার্চের মধ্যে পূর্ববাংলার স্বাধীনতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইয়াহিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার উচিত এমন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা, যার কাজ হবে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রাপ্য সম্পদ পূর্ব পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দেওয়া। শেখ মুজিবের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ইয়াহিয়ার সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করার পরিবর্তে তার উচিত বাংলার সংগ্রামী নেতার ভূমিকা পালন করা। সর্বশেষ এক বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী ২৩ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার অভিযান শুরু হয়েছিল, ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সন্তোষে মওলানা ভাসানীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তিনি আসামের ফুলবাড়ি হয়ে ১৫ এপ্রিল ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। স্বাধীনভাবে তৎপরতা চালাতে না পারলেও মওলানা ভাসানী দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে একজন প্রধান দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিবৃতি ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে তিনি জনগণের প্রতি স্বাধীনতাযুদ্ধ এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারের কাছে বংলাদেশকে সমর্থন করার ও স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারবার্তা পাঠিয়েছেন। কলকাতায় গঠিত মুজিবনগর সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো এবং ওই সরকারের বিরুদ্ধে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়া ছিল মওলানা ভাসানীর বিশেষ অবদান। মুজিবনগর সরকার তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি বানিয়েছিল এবং সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত পরিষদের একমাত্র সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেছিলেন।

এভাবে পর্যালোচনায় দেখা যাবে, স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের প্রস্তুতি পর্ব থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জন পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে মওলানা ভাসানী আপসহীন ও অগ্রবর্তী অবস্থানে থেকেছেন। সরকারের নির্যাতন, দলের ভাঙন ও সহকর্মীদের পক্ষ ত্যাগের মতো কোনো বাধা বা প্রতিকূলতাই তাকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। স্বাধীনতার পরও তার সে দেশপ্রেমিক ভূমিকা অব্যাহত ছিল। প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তিনিই প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

এখানে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে কিছু ঐতিহাসিক সত্য উল্লেখ করা দরকার। মওলানা ভাসানী শুধু দেশ ও জাতির স্বার্থে আজীবন সংগ্রাম করে যাননি, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবেরও প্রত্যক্ষ নেতা ছিলেন। প্রকাশ্য রাজনীতিতে মতপার্থক্য ও বিরোধিতা থাকলেও জীবনের শেষ দিনগুলো পর্যন্তও এই দুই মহান জাতীয় নেতার সম্পর্ক ছিল পিতা ও পুত্রের মতো। দুজনের রাজনৈতিক বিরোধিতার মধ্যে যেমন অভিনয়ের বা লোক দেখানোর কোনো উপাদান ছিল না, তেমনি তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল নিখাদ। পিতা ও পুত্রের মতো ওই সম্পর্কে কোনো রকম কপটতা বা অসততা ছিল না। এজন্যই দেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও শেখ মুজিব প্রকাশ্যে মওলানা ভাসানীকে যথাযথ সম্মান দেখিয়েছেন, পরামর্শের জন্য রাতের অন্ধকারে একাকী গিয়ে হাজির হয়েছেন সন্তোষে।

এ বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তমসহ অনেকেই লিখেছেন। আমার নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পরবর্তী কোনো নিবন্ধে জানানোর ইচ্ছা রয়েছে। এখানে শুধু একটি ঘটনার উল্লেখই সম্ভবত যথেষ্ট হবে। ‘হক-কথা’ সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী তার ‘ভাসানী সমীপে নিবেদন ইতি’ গ্রন্থে জানিয়েছেন, ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের এক গভীর রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব সন্তোষে গিয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। দুজনের কথা হয়েছিল বর্তমান মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনের দক্ষিণ সারির একটি কক্ষে। বঙ্গবন্ধু মওলানা ভাসানীকে জানিয়েছিলেন, তাকে শেষ পর্যন্ত জরুরি আইন বলবৎ এবং বাকশাল গঠন করতে হচ্ছে। আলোচনার একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘হুজুর, আপনি বাকশালের সভাপতি হন, আমি সেই আগের মতো সেক্রেটারি (হব)।’ ইরফানুল বারী লিখেছেন, ‘হুজুর বললেন, না, তা হবার নয়। বরং তুমি নজরুল-তাজউদ্দীনদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে আমার কাতারে চলে আস। চল, দুজনে দেশ গড়ি।’

এখন যেখানে মওলানা ভাসানীর মাজার, সেখানে দাঁড়িয়ে বিদায় দেওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুকে তার ‘পোলাপানের লাগি’ নিজের ক্ষেতে চাষ করা কয়েকটি মুলা দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী। সেখানে উপস্থিত দুজন ভাসানী অনুসারীর নাম উল্লেখ করে ইরফানুল বারী জানিয়েছেন, ‘আবার টুকটাক দুজনের কথা। মুলা গাড়ির বনেটের ভেতর দেওয়া হলো। এখন বঙ্গবন্ধু গাড়িতে উঠবেন। জিজ্ঞেস করলেন, মুলা কোথায়? গাড়ি চালক বললেন, পেছনে রাখা আছে। (বঙ্গবন্ধু) বললেন, তা হবে কেন? হুজুর দিয়েছেন। সামনে আন। সিটে রাখ। তা-ই হলো। নিশুতি রাতে গাড়ি সন্তোষ ছেড়ে চলে গেল। কারো হাতে ঘড়ি ছিল না যে দেখবে, কয়টা বাজে।’

বলা দরকার, এটাই মহান দুই জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মধ্যে শেষ সাক্ষাৎ ছিল না। আগেও যেমন হয়েছে, তেমনি সাক্ষাৎ হয়েছে এরপরও। এখানে ছোট্ট হলেও ঘটনাটি উল্লেখের কারণ একথাই জানানো যে, দুজনের সম্পর্ক শেষ পর্যন্তও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। ছিল পিতা ও পুত্রের মতো।

 

লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads