• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয় সংসদের অধিবেশন

পুরোনো ছবি

সংসদ

সংরক্ষিত নারী আসন আরো পঁচিশ বছর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৮

সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য নির্বাচনের বিধান আরো পঁচিশ বছর বহাল রাখতে সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮ পাস হয়েছে।  

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আজ রোববার বিকেল চারটা আট মিনিটে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। সংসদে উপস্থিত ২৯৮ সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে ছয়টা ছয় মিনিটে বিভক্তি ভোটে এটি পাস হয়।  

কোনো সংসদ সদস্য বিলটি পাসের বিরোধিতা না করলেও ৫০ জন উপস্থিত না থাকায় ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেননি। এর আগে বিকেল তিনটার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে বিলটি পাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে বিলের উপর বিরোধী দলের আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। এরপর বিলের ওপর আনা সংশোধনীগুলো বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। প্রথমে সংশোধনীগুলো হ্যাঁ, না ভোটে দেওয়া। পরে উপস্থিত সংসদ সদসদের লবিতে গিয়ে বিভক্তি ভোট দেন। দু’টি সংশোনীর বাতিলের পক্ষে ভোট পড়ে ২৯৫টি। এক্ষেত্রেও কোনো ‘না’ ভোট পরেনি।

আইন প্রণয়নকাজে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংবিধানে বিশেষ কোটা চালু হয়েছিল ১৯৭২ সালেই। সেই থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ থাকছে।  

বিলের জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, রুস্তম আলী ফরাজী, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, সেলিম উদ্দিন, রওশন আরা মান্নান, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী। কাজী ফিরোজ রশিদ সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বলেন, নারীরা এই পঁচিশ বছরে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তাই ২৫ বছর নয় বিলটি ১০ বছর করে পাস করা উচিত। তবে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, নারীদের জন্য ৫০টি আসন না হওয়া উচিত কমপক্ষে ৭৫টি। যদিও আমি দাবি করছি ১৫০টি আসন। তানাহলে ৭৫টি আসন করে দেন।

আইনমন্ত্রী তাদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, এখানে শুধু রাজনীতি দলের সদস্যদের কথা বলা হয়নি। আজকে যেটা করা হচ্ছে সেটা হচ্ছে মেয়াদ বৃদ্ধি। এর আগে গত ১০ এপ্রিল সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের বিধানে সংশোধনী এনে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়। উত্থাপিত সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮, আরও ২৫ বছর সংরক্ষিত আসন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় সংসশোধনী এনে বলা হয়েছে- ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন ২০১৮ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া পঁচিশ বৎসরকাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাংগিয়া না যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশটি আসন কেবল মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং তাঁহারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তন্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন।‌’

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে-স্বীধনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আইন প্রণয়নে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তদানীন্তন গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত ১৯৭২ এর মূল  সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ এর দফা (৩) এর বিধানে জাতীয় সংসদে মহিলা সদস্যদের জন্য সংবিধান প্রবর্তন হতে ১০ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে সংসদ ভেঙ্গে না যাওয়া পর্যন্ত ১৫টি আসন সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষিত মহিলা আসনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার কারণে সমাজে সকল ক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। সবশেষ সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ এর দফা (৩) এর বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ১০ (দশ) বছর মেয়াদ ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ শেষ হবে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে উক্ত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য কোন আসন সংরক্ষিত থাকবে না। সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ সংরক্ষিত আসনের মহিলা-সদস্যদেরকে নিয়ে গঠন করতে হলে দশম সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় সংবিধানে এ সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা আবশ্যক।

সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী পাস হবে আজ। সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এ কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নির্বাচনের বিধানের মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত এ বিল পাসের সময় অধিবেশনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ সংসদ সদস্যদেও প্রতি অনুরোধ করেছেন।

বাংলাদেশের সংবিধান ২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত নারী সদস্যের ৪৫টি আসন সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন এর মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় পরবর্তী সংসদের অর্থাৎ, নবম সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে দশ বছর।  ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।  সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি।  সেই হিসাবে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের মেয়াদ আছে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।  ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ এ উত্তীর্ণ করা হলেও ওই সময় আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।  সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বছরখানেক হাতে থাকতেই আইন সংশোধনের এই উদ্যোগে নেয় সরকার। ড়্গত এপ্রিলে এ সংক্রান্ত বিল সংসদে উত্থাপিত হয়। সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগে। সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাতে আছে ২৩২টি আসন। সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধন হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই সংশোধনে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। পরে সর্বোচ্চ আদালত ওই সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেয়।  

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads