• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর লুটপাট কি কোনো শিক্ষার্থীর কাজ?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংরক্ষিত ছবি

সংসদ

সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর লুটপাট কি কোনো শিক্ষার্থীর কাজ?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৮

সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার অভিযোগে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, আন্দোলন হলেও তাদের ছাড়া হবে না। ক্যামেরা দেখে একটা একটা করে খুঁজে বের করা হচ্ছে। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত শুধু তারাই গ্রেফতার হচ্ছে এবং তদন্ত চলছে। এর মধ্যে অনেকে অপরাধ স্বীকারও করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলন করছে ভালো কথা, কিন্তু ভিসির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর) বাড়িতে আক্রমণ করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ভাঙচুর এবং লুটপাট করা, এটা কি কোনো শিক্ষার্থীর কাজ? এমন কাজ কি কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে? ভিসির আতঙ্কগ্রস্ত পরিবার লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এটা কি আন্দোলন নাকি? এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এই উচ্ছৃঙ্খলতা বরদাস্ত করা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আক্রমণকারীরা ভিসির বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভেঙে ‘মেমরি চিপ’ নিয়ে গেলেও তারা জানত না, ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় আরো অনেক ক্যামেরা ছিল।

সংসদ নেতা আরো বলেন, তারা (আন্দোলনকারীরা) যে কি চায় বার বার জিজ্ঞেস করা হয়েছে, সেটা কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী গতকালই (বুধবার) বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা হাইকোর্টের রায়ে রয়ে গেছে। আমরা হাইকোর্টের রায় কীভাবে লঙ্ঘন করব? তবু আমরা  কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখছেন। এরপরও এদের (আন্দোলনকারীদের) অসুবিধাটা কোথায়, সেটাই আমার প্রশ্ন? প্রকৃত মেধাবীরা ঠিকই চাকরি পাচ্ছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সহযোগিতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ একটু সুখের মুখ দেখেছে। কোনো অশুভ শক্তি দেশের জনগণের এই সুখটা কেড়ে না নিতে পারে সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশে যেন আবারো মারামাটি, খিস্তিখেউর, আগুন দিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো পরিবেশ ফিরে না আসে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ নেতা বলেন, মাত্র ১৫ টাকা হলের সিট ভাড়া, আর ৩০ টাকার খাবার পৃথিবীর কোথায় আছে? আজকে যারা হলে থাকে, তাদের জন্য নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টাকার সিট ভাড়া দিয়ে আর ৩০ টাকার খাবার খেয়ে যারা লাফালাফি করে, তাহলে সিট ভাড়া আর খাবার যে বাজার দর আছে সেইভাবেই দিতে হবে তাদের। সেটা না করে তারা হলের গেট ভেঙে ফেলবে, মধ্যরাতে ছাত্রীরা বের হয়ে যাবে- এটা কী আন্দোলন? উচ্ছৃঙ্খলতা তো বরদাস্ত করা যায় না। 

বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা দখল করে উপকারের বদলে দেশের সর্বনাশ করে গেছে। মতিঝিলে এক সময় ঝিল ছিল। আইয়ুব খান তা বন্ধ করে দেয়। সেগুনবাগিচা ও পান্থপথে আগে খাল ছিল। জেনারেল এরশাদ সাহেব এসে সেই খাল বন্ধ করে দিয়ে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করেন। এতে করে পানি এখন আর নামতে পারে না। জিয়া এয়ারপোর্ট থেকে দীর্ঘ রাস্তায় দু’ধারে থাকা সকল কৃষ্ণচূড়া গাছ কেটে ফেলে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমরা সব বক্স কালভার্ট ভেঙে নিচে খাল এবং উপর দিয়ে এলিভেটেড রাস্তা করে দেব।

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরো ২৫ বছর বাড়ানোর সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের কারণে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরো ২৫ বছর বাড়াতে সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এতে করে কোনো নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে আসার পথে কোনো বাধা হবে না। কিন্তু এটা নিয়েও নারী আন্দোলনের অনেকে সমালোচনা করেন। তাদের বলব এত কথা না বলে আগামী নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিন, জনগণের কাছে যান, ভোট নিয়ে সংসদে আসুন। কিন্তু ভালো একটা কাজ করার পরও কেন জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন?

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে পালনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিক-কামার-কুমার-বেদে-হিজড়া-নৃগোষ্ঠীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে দেশের একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে না, একটি মানুষও অবহেলিত ও গৃহহারা থাকবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলবই। বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ কোনো দিন দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads