• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
দায় নিচ্ছেন না কেউ

জাতীয় সংসদ

সংরক্ষিত ছবি

সংসদ

দায় নিচ্ছেন না কেউ

রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া সংসদে সড়ক আইন বিল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’র খসড়া সংসদ সচিবালয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার নজিরবিহীন ঘটনার দায় নিচ্ছেন না কেউ। গুরুতর এই ভুল কার কারণে ঘটল সেটি নিয়ে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চলছে তোলপাড়। তবে শেষ অবধি অর্থ মন্ত্রণালয় খসড়াটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা প্রশাসনিক অদক্ষতা, সংশ্লিষ্টদের অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংবিধানের ৮২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো আইনের সঙ্গে যদি অর্থ ব্যয়ের বিষয় সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে তার খসড়া সংসদে উত্থাপনের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়। অর্থ মন্ত্রণালয় সেটিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেয়। পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেটি সংসদ সচিবালয়ে পাঠায়। কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’র ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, খসড়ায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে এমন কোনো পরামর্শ ছিল না। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে টেলিফোনে বলেন, থেকে আমাদের কাছে খসড়াটি বিল আকারে উত্থাপনের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের পর কারো কিছু করার থাকে না। আমরা দ্রুত সেটা সংসদ সচিবালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। তদুপরি এক্ষেত্রে বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আইনের খসড়া সংসদে বিল আকারে উত্থাপনের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মন্ত্রণালয় বিধি মোতাবেক ভেটিং শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খসড়া অনুমোদন দিলে এটি যে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট, আইনটি সেই মন্ত্রণালয়ে যাবে। আইনের সঙ্গে যদি অর্থ ব্যয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া। অর্থ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে খসড়াটি পাঠিয়ে দেয়। এরপর ওই মন্ত্রণালয় সংসদ সচিবালয়ে সেটি পাঠায় বিল আকারে উত্থাপনের জন্য। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া সংসদে যাওয়ার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। সংসদে সেটি উত্থাপনের আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে এটিই নিয়ম। আইন মন্ত্রণালয় কোনো আইনের বিষয়েই কোনো পরামর্শ দেয় না। এটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিষয়।

আলোচিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই সংসদ সচিবালয়ে চলে যাওয়ার ঘটনাকে সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা ও চরম অজ্ঞতা বলে অভিহিত করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, এটি সুশাসনের ঘাটতির কারণে ঘটেছে। তাড়াহুড়ো করলে এ ধরনের ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। আমরা বরাবরই বলে আসছি, গুরুত্বপূর্ণ আইনটি প্রণয়নের আগে অংশীজনদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। গোঁজামিলের আইনে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটি ভুল নাকি উদ্দেশ্যমূলক সেটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখার বিষয়। সংশ্লিষ্টদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কারণ, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা এটি জানবেন না- এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।    

প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের জাবালে নূর পরিবহনের বাস চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। পরের দিন থেকে রাজধানীর সড়কে অবস্থান নিয়ে বেপরোয়া বাস চালকের ফাঁসি, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো বন্ধসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এরপর আইনটি চূড়ান্ত করে সাজা ও জরিমানা বাড়ানো হয়। আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদন পাওয়ার পর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই সেটি সংসদে পাঠিয়ে দেয়। পরে সংসদ সচিবালয় সেটি সংশ্লিষ্ট দফতরে ফেরত পাঠায়। বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে এলে সোমবার থেকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং আইন মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads