• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
মালিক-শ্রমিকের শাস্তি কমিয়ে শ্রম বিল পাস

জাতীয় সংসদ

ছবি : সংগৃহীত

সংসদ

মালিক-শ্রমিকের শাস্তি কমিয়ে শ্রম বিল পাস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর ২০১৮

শ্রমিকদের জন্য উৎসব ভাতা, শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, নারী শ্রমিকদের প্রসূতি ছুটি, মালিক-শ্রমিক-সরকারের ত্রিপক্ষীয় পরিষদ, ছয় মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি, ২৫ জন শ্রমিক হলে কারখানায় খাবার কক্ষের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এতে মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন অপরাধের শাস্তিও কমানো হয়েছে। গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এর আগে বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। তবে এই বিলটি ইপিজেড এলাকার কারখানার জন্য প্রযোজ্য নয়। বিশ্ব শ্রম সংস্থার (আইএলও)  কনভেনশন অনুযায়ী শ্রম আইনকে আপডেট করার জন্য অর্থাৎ শ্রমবান্ধব পলিসি সব জায়গায় যাতে নিশ্চিত হয় সে জন্যই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে সংসদকে জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী।

শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য ২০০৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে শ্রম আইন করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে আইনটির ব্যাপক উদ্যোগের মাধ্যমে ৯০টি ধারা সংশোধন করা হয়েছিল। বর্তমান শ্রম আইনে ৩৫৪টি ধারা রয়েছে। সংশোধিত বিলে নতুন দুটি ধারা, চারটি উপধারা ও আটটি দফা সংযোজন, ছয়টি উপধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে। সংশোধিত শ্রম বিলে মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণ বা বিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগে শাস্তি ছিল ২ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

বল প্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, কোনো স্থানে আটক বা উচ্ছেদ, শারীরিক আঘাত এবং পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অথবা অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে মালিককে নিষ্পত্তিনামায় দস্তখত করতে বা কোনো দাবি গ্রহণ বা মেনে নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করতে পারবেন না শ্রমিকরা। করলে এটা অসদাচরণ হবে। অন্যদিকে কোনো মালিক শ্রমিকের চাকরির চুক্তিতে ট্রেড ইউনিয়নে যোগদান নিষেধাজ্ঞা, কোনো ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য পদ চালু রাখার অধিকারের ওপর কোনো বাধা সংবলিত কোনো শর্ত আরোপ করতে পারবেন না। মালিক এই বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তি পাবেন। বেআইনি ধর্মঘট ডাকার দণ্ড আগে এক বছর ছিল, এখন ৬ মাস করা হয়েছে। জরিমানা আগের মতোই ৫ হাজার টাকা রয়েছে।

কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শ্রমিকদের তাদের স্ব স্ব ধর্মীয় উৎসবের প্রাক্কালে বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে উৎসব ভাতা দিতে হবে। শ্রমিকরা এতদিন উৎসব ভাতা পেলেও শ্রম আইনে এ বিষয়ে কোনো বিধান ছিল না। সংশোধিত বিলে অপ্রাপ্তবয়স্ক শব্দটি শ্রম আইন থেকে বাদ দিয়ে সেখানে কিশোর শব্দটি যোগ করা হয়েছে। আগে ১২ বছর বয়সী শিশুরা কারখানায় হালকা কাজের সুযোগ পেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ১৪-১৮ বছর বয়সী কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে। কোন ব্যক্তি কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান সরকারের পূর্ব মেয়াদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির আলোকে ২০১৩ সালের ২২ জুলাই ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬’ সংশোধন করা হয়। বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কর্মস্থলে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি সুরক্ষা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ, শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষা এবং জাতীয় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পূরণের লক্ষ্যে উক্ত আইন পুনরায় সংশোধন করার প্রয়োজন হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads