• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন হেভিওয়েটরা

ছবি : সংগৃহীত

সংসদ

পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন হেভিওয়েটরা

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন মন্ত্রিসভায় ২৪ পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী ও তিন প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ৪৬ জন স্থান পাচ্ছেন। এদের মধ্যে টেকনোক্র্যাট কোটায় দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।

আজ মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে গতকাল রোববার যোগাযোগ করে তাদের শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এবারের মন্ত্রিসভায় নতুনরা প্রাধান্য পেয়েছেন। নতুনদের জায়গা দিতে গিয়ে বাদ পড়েছেন বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা। বিগত মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী, ৯ প্রতিমন্ত্রী ও দুই উপমন্ত্রীসহ মোট ৩৬ জন এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। তাদের মধ্যে বিতর্কিত মন্ত্রীসহ সফলরাও আছেন। এটাকেই এবারের মন্ত্রিসভার ‘বিশেষ চমক’ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলো। অবশ্য আগের মন্ত্রিসভার জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত ৩ জানুয়ারি মারা যান।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা পূর্ণাঙ্গ হলে আপাতত বাদ পড়া তালিকা থেকে কয়েকজনের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা হতে পারে ৫৫ থেকে ৬০। তখন মন্ত্রিসভায় যোগ হতে পারেন আরো অন্তত ১২ থেকে ১৪ জন। ফলে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শাহজাহান খান ও মোহাম্মদ নাসিমসহ আরো কারো কারো। শিগগিরই মন্ত্রিসভাকে পূর্নাঙ্গ রুপ দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আপাতত থাকছে ছয়টি মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভা পূর্ণাঙ্গ হলে জনপ্রশাসন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অন্যদের ঠাঁই হতে পারে।

বিশেষ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শেখ হাসিনার বিশেষ আস্থাভাজন কারো। এর আগের সরকারে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সদ্য প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়া নৌপরিবহন, পানিসম্পদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে কেউ আজ শপথ নিচ্ছেন না। শিগগিরই এসব মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নতুন মুখের সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের নেতা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচিত অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের নাম বেশি আলোচনা হচ্ছে।

সদ্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী-এই তিনমন্ত্রী থেকে একজনকে জাতীয় সংসদের উপনেতা করা হতে পারে। ফলে তাদেরকে নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি বলে জানায় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র। একজনকে সংসদের উপনেতা নির্বাচিত করার পর বাকি দুজনকে ফের দেখা যেতে পারে নতুন দুই মন্ত্রণালয়ে। তাদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসতে পারেন বলে আলোচনা আছে। দলের শীর্ষ পদেও তাদের দায়িত্ব দেওয়ার কথাও ভাবছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

দেশের ৬৪টি জেলা থেকে পর্যায়ক্রমে দল ও মহাজোটের শরিক দলের নেতাদেরকে এ সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সারা দেশে সমানতালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দল এ রকম পরিকল্পনা করছে। ফলে যেসব জেলা থেকে আপাতত মন্ত্রিসভায় কেউ নেই, সেসব জেলার দিকে সরকারের নীতিনির্ধারকদের নজর থাকবে। মন্ত্রিসভা থেকে রাখা না গেলে অনেকে পাবেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ অনেকে সংসদীয় কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন বলে ইতোমধ্যে ইঙ্গিতও পেয়েছেন। যারা যে মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, তাদেরকে সেসব মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আলোচিত ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে যারা মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন না, আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন তারা। দল পরিচালনায় তাদের কার্যক্রম বিবেচনা করে পরবর্তীতে দলের শীর্ষ পদ দেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব জানায়, মন্ত্রিসভায় আপাতত আওয়ামী লীগের বাইরে কেউ থাকছেন না। মহাজোটের শরিক দল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও  জাতীয় পার্টি (জেপির) কেউই মন্ত্রিসভায় নেই। আগের মন্ত্রিসভায় তিনটি দল থেকে তিনজন ছিলেন। মন্ত্রিসভা পূর্ণাঙ্গ রুপ পেলে সেসব দল থেকে নেতাদেরকে নতুন করে জায়গা দেওয়া হতে পারে। আগে যারা মন্ত্রী ছিলেন, শরিক দলের সেসব নেতারও মন্ত্রিসভার জন্য ডাক পড়তে পারে। তবে তারা নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন।

নতুন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির কেউ নেই। আগের মন্ত্রিসভায় দলটির তিনজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকার কারণে এবার তারা মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না বলে শপথের পরদিনই দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ জানান। তবে এটাই দলটির ‘স্থির সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করেন না আওয়ামী লীগের অনেকে। ফলে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি থেকে কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় যোগ হলে ‘বিস্ময়ের’ কিছু থাকবে না বলে জানায় সূত্র।

দলীয় সূত্র মতে, চলতি বছরই শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। তখনই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করার কথা এখনই ভাবছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সরকারের পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে এমন পরিকল্পনা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলের শীর্ষ পদে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। জনপ্রিয় ও একাধিকবার নির্বাচিত হলেও যেসব সংসদ সদস্যকে এবার মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে না, তাদের মধ্যে অনেককে তখন দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads