• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
গণতান্ত্রিক স্পেস চাইলেন মেনন

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন

সংগৃহীত ছবি

সংসদ

গণতান্ত্রিক স্পেস চাইলেন মেনন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০১৯

নিজের পায়ে দাঁড়াতে গণতান্ত্রিক স্পেস চাইলেন ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন ব্যবস্থাকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনারও আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের শরিকদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। কিন্তু যদি গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকে তাহলে কেউ সংগঠন নিয়ে, আন্দোলন নিয়ে বা ভোট নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। সেই স্পেস তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের আন্দোলন করে সফলতা অর্জন করেছিল। তা যেন এভাবে হারিয়ে না যায়। এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণারোপ করে তাহলে রাজনৈতিক দল কেবল নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। এটা যেমন আমাদের জন্য প্রযোজ্য, সরকারি দলের জন্যও তা প্রযোজ্য। নির্বাচনকে তাই যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে মেনন বলেন, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকে। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং দলীয় নেতারা যখন ভোটারদের বলেন- ভোট তো দেখেছো, ভোট দিতে যেতে হবে না। তখন সেই ভোট সম্পর্কে কী মনোভাব সৃষ্টি হয়? একটি সামগ্রিক অনাস্থার জন্ম হয়। নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধাদান, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা, ঊর্ধ্বমহলের ক্লিয়ারেন্স আছে কি-না, সেই নিয়ে প্রার্থীদের পুলিশের প্রশ্ন এবং টাকা ছড়ানোর উদ্বেগজনক খবর আসছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় যেতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন কমিশনের আইন মেনে চলতে। কিন্তু সরকার ও দলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে নিশ্চয়তা বিধান না করা হয় তাহলে মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়েছে তা রয়ে যাবে। এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করতে উপজেলা নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপমুক্ত করতে হবে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন উভয়কেই এই নিশ্চিয়তা বিধান করতে হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, জনগণ শেখ হাসিনার ওপর সঠিকভাবে আস্থা রেখেছে। তার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি নির্বাচনে দিয়েছে। তাকে বাস্তবায়ন করা, এগিয়ে নেওয়াই এখন আমাদের কাজ। ১৪ দল সেই রাজনৈতিক অবস্থানকেই ধারণ করে।

তিনি বলেন, দেশের উন্নতি হচ্ছে। তবে এই উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য গবেষণার দরকার নেই। খালি চোখেই আমরা দেখছি। দেখতে পাচ্ছি উন্নয়নের ফলাফলের অসম বণ্টন হচ্ছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি অতি ধনীর সংখ্যা চীন থেকেও বেশি বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তবে এর সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছর আট লাখ মানুষ বেকারের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকির বিষয়।

আর্থিক খাতের সমস্যার কথা তুলে ধরে রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশের অর্থনীতির ওপর লুটেরাদের আধিপত্য আরো দৃঢ়ভাবে চেপে ধরেছে। এর পরিণতি হচ্ছে বিনিয়োগ না করে অর্থ বিদেশে পাচার করা, ঋণখেলাপির সংস্কৃতি, ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি ইত্যাদি। এসব বিষয় প্রতিবিধানে বিভিন্ন আইন হলেও তা কার্যকর হয়নি। বরং দেখা গেছে, ব্যাংক সেক্টরে পারিবারিক মালিকানাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়াই ব্যাংক খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই ব্যক্তি এখন ৬৭ ব্যাংকের মূল শেয়ারহোল্ডার। প্রকৃত উদ্যোক্তাদের পরিবর্তে এই মালিকরা নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে যান। দেশে একটি নতুন শ্রেণি গড়ে উঠেছে, যারা সেকেন্ড হোম করছেন কানাডায়, থাইল্যান্ডে। আর নিচতলার মানুষগুলো চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এখন প্রাইমারি স্কুলের টিচারের দুর্নীতিকে আমলে নেয়, কিন্তু বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। বেসিক ব্যাংকের সেই সাবেক চেয়ারম্যান দুদকের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

মেনন বলেন, নদীদূষণ, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ এগুলো আমরা ঠেকাতে পারছি না। বনাঞ্চল ধ্বংস করে আমরা শিল্প স্থাপন করছি। আমরা সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করেছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা শোনা হয়নি। এখন ওই স্থানকে কেন্দ্র করে পরিবেশ দূষণকারী নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠছে।

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, বহুদিন পরে আমরা ‘জাতীয় শিক্ষানীতুি ২০১০’ প্রণয়ন করেছিলাম। সেই শিক্ষানীতি ৮ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন শতভাগ পাস, জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি, এমবিএ-বিবিএকে আমরা শিক্ষার সুফল করে গর্বভরে তুলে ধরি। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তার প্রতিবেদনে বলেছে, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা জীবনের ১১ বছরের ৪ বছর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা বাংলাও লিখতে-পড়তে পারে না। অঙ্কও তারা করতে পারে না।

তিনি বলেন, আমাদের পাঠ্যক্রমগুলোকে ধর্মীয়করণের প্রচেষ্টা, তেঁতুল হুজুরের আবদারে এটা করা হয়েছে। কুসুম কুমারী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দিজেন্দ্র লালের কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। হয়তো পাকিস্তান আমলের মতো ‘সজীব করিব মহাশ্মশান’-এর স্থলে ‘সজীব করিব গোরস্থান’ আবৃত্তি করতে হবে। কওমি শিক্ষাকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আজকে তেঁতুল হুজুরের দল প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক না হলে বুঝতে হবে আমরা কোন বিষবৃক্ষ রোপণ করতে যাচ্ছি।

মেনন বলেন, জামায়াত নিবীর্য হয়েছে। তাদের নেতারা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছে। কিন্তু জামায়াতের রাজনীতির পরাজয় হয়নি। তারা এখন এরদোগানের মতো নতুন করে দলকে সংস্কার করে নতুনভাবে হাজির করতে চাচ্ছে। তারা সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চাচ্ছে। হেফাজতের মোল্লাতন্ত্র দেশে চরম পশ্চাৎপদ ধারণা সৃষ্টি করছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই। কিন্তু সেখানে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বিস্তৃতি ঘটছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads