• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সংসদ

আইন প্রণয়ন আলোচনায় অনাগ্রহী সংসদ সদস্যরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০১৯

সংসদ সদস্যরা আইনপ্রণেতা। তবে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নসংক্রান্ত আলোচনাতেই সবচেয়ে কম সংখ্যক সংসদ সদস্য অংশ নেন। আইন-সম্পর্কিত আলোচনা পর্বে তাদের অংশ নেওয়ার বিষয়ে খুব অনাগ্রহ। ফলে দশম জাতীয় সংসদে ৭১ শতাংশ বিল পাস হয়েছে ১ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে। ৬০ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে পাস হয়েছে মাত্র একটি বিল। দশম জাতীয় সংসদ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন ‘পার্লামেন্ট ওয়াচে’ এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার টিআইবির রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে সংসদের আইন প্রণয়ন কার্যাবলি সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, ৪৬ শতাংশ বিল পাস হতে সময় লেগেছে ১ থেকে ২০ মিনিট। ২১  থেকে ৪০ মিনিট সময়ের মধ্যে পাস হয়েছে ৪৫ শতাংশ বিল। ৮ শতাংশ বিল পাস হতে সময় লেগেছে ৪০ থেকে ৬০ মিনিট। এতে বলা হয়, সংসদের মোট ব্যয়িত সময়ের মধ্যে ১২ শতাংশ ব্যয় হয়েছে আইন প্রণয়নের কাজে। তবে এ সময়ের মধ্যে বাজেট বিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল ও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে আইন পাস হওয়ার ফলে সংসদ সদস্যরা আইনটি সম্পর্কে ভালোভাবে পড়েছেন কি না তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আইন প্রণয়নে খুব কম সময় ব্যয় করা হয়েছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে অনেক বেশি সময় ব্যয় করা হয়।’ দশম জাতীয় সংসদ সম্পর্কে সার্বিক পর্যালোচনায় তিনি বলেন, ‘আশা জাগানিয়ার মতো কিছু দেখিনি।’

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে আইন প্রণয়নে ব্যয় হয় ৪৮ শতাংশ সময়। ভারতের লোকসভায় এই হার ৩২ শতাংশ। দশম সংসদে সব মিলিয়ে ১৯৩টি বিল পাস হয়েছে। টিআইবির গবেষণা বলছে, প্রতিটি বিল পাস হতে গড়ে সময় লেগেছে ৩১ মিনিট করে। অন্যদিকে ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাস হতে গড়ে ১৪১ মিনিট সময় লাগে। দশম জাতীয় সংসদের কার্যকাল ছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। টিআইবির প্রতিবেদন দশম জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে ২৩তম অধিবেশনের ওপর পর্যালোচনা।

টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, দশম সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে আইন প্রণয়ন (বাজেট ব্যতীত) আলোচনায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ৯৪ জন। তাদের মধ্যে সরকারদলীয় সদস্য ৭১ জন (২৯০ জনের মধ্যে), প্রধান বিরোধী দলের ১৯ জন (৪১ জনের মধ্যে) এবং অন্যান্য বিরোধী দলের ৪ জন (১৯ জনের মধ্যে)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন প্রণয়ন কাজে মোট ব্যয়িত সময়ের মধ্যে ১১ শতাংশ সময় সরকারি দলের সদস্য, ৬৭ শতাংশ সময় প্রধান বিরোধী দল ও ২২ শতাংশ সময় অন্যান্য বিরোধী দলের সদস্যরা ব্যয় করেছেন। এসব বিলের ওপর সংশোধনী ও যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাবে বিরোধী দলের সদস্যদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে সক্রিয় ছিল। আগের বিভিন্ন সংসদের মতোই বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে গেছে। কয়েকটি আলোচিত বিলে অংশীজনের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন বিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল, সড়ক পরিবহন বিল এবং সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল।

গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন নিহার রঞ্জন রায় ও মোরশেদা আক্তার। এ দুজনই গতকাল প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads