• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আসছে যক্ষ্মার জীবন্ত টিকা!

সংগৃহীত ছবি

শারীরিক বিজ্ঞান

আসছে যক্ষ্মার জীবন্ত টিকা!

  • আসিফ খান
  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০১৮

যক্ষ্মা হলে ফুসফুস ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ফলে ফুসফুস থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায় রক্ত। আর এর মাধ্যমে যক্ষ্মার জীবাণু মস্তিষ্ক, হাড় বা শরীরের যেখানেই রক্ত প্রবাহিত হয় সেখানে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে পৃথিবীতে বছরে ১৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এর কারণেই যক্ষ্মাকে এককালে বলা হতো রাজরোগ, বলা হতো ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই’। আসলে হাতের কাছে এই রোগের টিকা ও ওষুধ না পাওয়ায় এমন বলা হতো। যক্ষ্মা রোগের একমাত্র টিকা আবিষ্কার হয় তাও প্রায় শত বছর আগে। তবে এবার যক্ষ্মার নতুন একটি প্রতিষেধক আনতে কাজ করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একদল গবেষক। গবেষকরা নতুন একটি প্রকল্পে যক্ষ্মার ‘জীবন্ত’ টিকা তৈরিতে কাজ করছেন।

নতুন টিকাটি যক্ষ্মা রোগের জীবাণুর একটি দুর্বলতর সংস্করণ। তবে নতুন টিকা আরো বেশি নিরাপদ ও কার্যকর হবে বলে গবেষকদের আশা।

টিউবারকুলোসিস বা টিবি রোগ নির্ণয়ে সহায়তার জন্য বেলজিয়ান বেসরকারি সংস্থা আপোপো বিশেষ প্রজাতির ইঁদুরের প্রজনন করাচ্ছে। একটি টিবি হাসপাতালের পাশেই একটি বায়ো-ফার্মাসিউটিক্যাল ল্যাবরেটরিতে চলছে এই পরীক্ষা। আফ্রিকার তানজানিয়ার মোরোগোরো শহরের পরীক্ষাগারে এক খাঁচায় মানুষের থুথুর নমুনা রাখা হয়। দেখা যায়, ইঁদুরগুলো গন্ধ শুঁকেই জানিয়ে দেয় থুথুতে সংক্রমণ হয়েছে কি না। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচেভেলের খবর অনুসারে, দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পটিতে গবেষকরা যক্ষ্মা রোগের নাটকীয় ফলশ্রুতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন।

গবেষকদের দাবি, সংক্রমণ সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। থুথুর নমুনায় ইঁদুর যতবার তার সামনের থাবা দিয়ে আঁচড় কাটে, ততবারই তাকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় কলা আর মটরশুঁটি মেশানো খাবার। খাবার পেলে নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করে ইঁদুর। ল্যাবরেটরিতে একজন মানুষ সারাদিনে যতগুলো থুথুর নমুনা পরীক্ষা করতে পারে ইঁদুর তা করে ফেলে মাত্র সাত মিনিটে। আর গবেষকরা এই ইঁদুরকেই বলছেন যক্ষ্মার নতুন ‘জীবন্ত টিকা’। এই টিকা নিয়ে সুইজারল্যান্ডের লোসান শহরে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে প্রথম ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ শুরু হয়েছে। দেখা হচ্ছে, টিকাটা কতটা নিরাপদ এবং দেহের যে অণুগুলো আমাদের যক্ষ্মা থেকে বাঁচায়, সেগুলো এই টিকার ফলে সক্রিয় হচ্ছে কি না। ইমিউনোলজিস্ট ফ্রাঁসোয়া স্পের্তিনির মতে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে এই রক্ষাকারী অণুগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া গেলে বোঝা যাবে বাস্তব রোগীদের ক্ষেত্রে যাদের এই অণুগুলো আছে, তারা অধিকতর সুরক্ষা পাবেন। বৈজ্ঞানিক বৈধতা পাবার জন্য নতুন টিকাকে তিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পাস হতে হবে। তার দশ বছরের মধ্যেই বাজারে ছাড়ার জন্য টিকা তৈরির কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে গবেষকদের আশা।

সারাগোসা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট কার্লোস মার্তিন জানান, আশির দশকে তিনি যখন চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ছিলেন তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০০ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করার কথা ভাবছিল। এর পরে এর সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ২০৫০ সালের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেজন্য আরো প্রতিরোধের ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ধরনের কার্যকর ওষুধ ও টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads