• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
চল্লিশের পর মস্তিষ্কে ক্ষয়

চল্লিশের পর মস্তিষ্কে ক্ষয়

ছবি : ইন্টারনেট

শারীরিক বিজ্ঞান

এক আজব কারখানা

চল্লিশের পর মস্তিষ্কে ক্ষয়

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দেহের বিকাশ ঘটে। আবার এক সময় মানুষের দেহের অঙ্গগুলোও আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে থাকে। বয়স ৪০-এর কোটায় পৌঁছাতেই মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্কের ক্ষয় হতে শুরু করে। বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকরা দেখেছেন, মানুষের বয়স ৪৫ থেকে ৪৯-এর মধ্যে থাকাকালে স্মৃতিশক্তি শতকরা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ লোপ পায়। গবেষকরা ১০ বছর ধরে ৪৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী সাত হাজার নারী-পুরুষের স্মৃতিশক্তি, শব্দভান্ডার ও কোনো কিছু বোঝার সক্ষমতার ওপর এ গবেষণা করেন। আবার এ-সংক্রান্ত আগের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ বছর বয়সের পর মানুষের বোঝার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমতে থাকে। গবেষণায় বলা হয়েছে, মাঝ বয়স থেকেই মানুষের মস্তিষ্ক কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে।

অভিজ্ঞতার কারণে পুরনো মস্তিষ্ক মন্থরতা!

মস্তিকের অসাধারণ ক্ষমতার দ্রুতগতি চোখকে তার পরবর্তী লক্ষ্যবস্তুর দিকে নির্দেশ করে এবং এটি হয় সেকেন্ডে তিন বার। যুক্তরাষ্ট্রের একদল স্নায়ুবিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন মানুষ চোখ দিয়ে যা দেখে মস্তিষ্ক তা মাত্র ১৩ মিলিসেকেন্ড সময়ে গ্রহণ করতে পারে। এত দ্রুত সময়ে প্রসেসিং করার এটাই প্রথম প্রমাণ। এটি পূর্বে রেকর্ডকৃত ১০০ মিলিসেকেন্ড সময় থেকে প্রায় ৮ গুণ দ্রুত। এক সেকেন্ডের কম সময়ে এক ডজন ছবি তোলাটা অসম্ভবই মনে হলেও মানুষের মস্তিষ্ক এই কাজটিই করতে পারে এমন অবিশ্বাস্য গতিতে। 

 

জ্ঞান বাড়লে মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে

সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যেতে থাকে। কিন্তু প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা বলছেন, বয়স বাড়ার কারণে জ্ঞান বাড়ে এবং এর ফলে পুরনো মস্তিষ্কের নতুন কিছু গ্রহণ করার সময় লাগে বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়া সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বাড়তে থাকে। এটা অনেকটা কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। মেধা হ্রাস পাওয়ার কারণে নয়, বরং অনেক বেশি অভিজ্ঞতার কারণে পুরনো মস্তিষ্ক মন্থর হয়ে যায়। জার্মানির তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাইকেল র্যামস্কারের নেতৃত্বে একদল গবেষক কম্পিউটার ব্যবহার করে দেখেছেন, যেসব কম্পিউটার সীমিত সামগ্রী ‘পড়েছে’ সেগুলোর চেয়ে একই মানের পুরনো যেসব কম্পিউটার বেশি ‘পড়েছে’ সেগুলোর চেয়ে বেশি কার্যক্ষম। তারই প্রেক্ষিতে তারা এমন সিদ্ধান্তে একমত হতে পেরেছেন।

 

মস্তিষ্কের সজীবতায়

পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, চকোলেট বা মিষ্টিজাতীয় খাবারগুলো যতই মুখরোচক আর সুস্বাদু হোক, মস্তিষ্কের জন্য তা উপকারী নয়। মস্তিষ্কের জন্য ভিটামিন এ, সি এবং ই-এর গুরুত্ব অপরিসীম। পুষ্টিবিদরা সতর্ক করছেন- চকোলেট, স্ন্যাকস এবং অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবার খুবই মুখরোচক বটে কিন্তু এ ধরনের খাদ্য মস্তিষ্কের জন্য খুব একটা উপকারী নয়। তাদের মতে, মস্তিষ্ককে সতেজ, চাঙ্গা ও স্থির রাখতে প্রয়োজন কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিন এ, সি ও ভিটামিন ই-জাতীয় খাবার। ভিয়েনার পুষ্টিবিজ্ঞানী ইনগ্রিড কিফার বলছেন, রক্তে সুগারের পরিমাণকে খুব দ্রুত বাড়িয়ে দেয় চকোলেট। ফলে এটি মস্তিষ্কে এক ধরনের সুখবোধ তৈরি করে। কিন্তু এই চাঞ্চল্য বা সুখবোধের অনুভূতি আবার বিলীনও হয়ে যায় খুব দ্রুততম সময়ে। অর্থাৎ চকোলেট থেকে পাওয়া কর্মচাঞ্চল্য খুবই ক্ষণস্থায়ী। ফলে, অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষ আবার শ্রান্ত, অবসন্ন ও উদ্যমহীন হয়ে যেতে পারে। তাই, দীর্ঘস্থায়ী কর্মচাঞ্চল্যের জন্য কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন কিফার।

কিফার আরো বলছেন, চকোলেট বা গ্লুকোজের মতো খাবার রক্তে খুব দ্রুত মিশে যায়। কিন্তু কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারগুলো পরিপাকতন্ত্রে একটু সময় নিয়ে হজম হওয়ার প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করে। এর ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ দীর্ঘ সময় ধরে স্থির থাকে এবং কাজে মনোযোগ ধরে রাখা যায় দীর্ঘ সময়। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শস্যকণা, যব, জই, আলু, গম, শিম, মটরশুঁটি, ফল এবং সবজিজাতীয় খাবারগুলো মস্তিষ্ককে প্রচুর পরিমাণ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস লওয়েলের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আপেলের রসও উপকারী। এ রস মগজের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার এসিটিলকোলিনের উৎপাদন বাড়ায়।

ফলে বাড়ে মস্তিষ্কের শক্তিও। আমরা ভাবি না মস্তিষ্কেরও যে খাদ্যের দরকার হয়। পরিমাণমতো খাদ্যের জোগান না পেলেই মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালিতেও বিপর্যয় আসাটা স্বাভাবিক।  তাই মস্তিষ্ক সজীব রাখতে প্রয়োজনীয় খাবার খেতে হয়। এ খাবারগুলো খুব যে দামি তা কিন্তু নয়। মস্তিষ্ক সজীব রাখতে সহায়তা করে যেসব খাবার—

১. যোগব্যায়ামে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে, চিন্তাশক্তি বাড়ে।

২. খোসা ছাড়িয়ে একটু পানি নিয়ে বাদাম পিষে নিন। দুধের মতো হলে তার সঙ্গে চিনি ও দুধ মিশিয়ে সকালে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেলে স্মৃতিশক্তি সতেজ থাকে।

৩. উত্তেজক খাবার এড়িয়ে চলুন। মেজাজটা যাতে বিগড়ে না যায় খেয়াল রাখুন।

৪. মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। মানসিক বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকলে তা মস্তিষ্ককে গ্রাস করে। ফলে ভুলে যাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

৫. চাপমুক্ত থাকার সহজ উপায় হলো, গান শোনা।

সূত্র : ডেইলি মেইল, দি সায়েন্স ম্যাগাজিন, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিবিসি অবলম্বনে

এস এম মুকুল, বিশ্লেষক ও কলাম লেখক, writetomukul36¦gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads