• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

রোজা নিয়ে যা না জানলেই নয়

  • মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০১৮

মাহে রমজান মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে তার বান্দাদের জন্য একটি বিশেষ উপহার, একটি বিশেষ সুযোগ। যেমনিভাবে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সময়ে বিশেষ দ্রব্যের ব্যবসা অধিক লাভজনক হয়, তেমনি রমজানে ইবাদত একজন মুমিন বান্দার জন্য অধিক লাভজনক। মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজে আইন। অস্বীকার করলে কাফের ও না রাখলে ফাসেক হিসেবে গণ্য হবে। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ।’ (বোখারি : ১৯০৪)। ঢাল যেমন একজন যোদ্ধাকে তীর, গুলি বা যেকোনো রকম নিক্ষেপণ অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করে, তেমনি রোজাও একজন মুমিন ব্যক্তিকে সব ধরনের গুনাহ থেকে হেফাজত করে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে রোজাদারের মর্যাদা এত বেশি যে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য রাইয়ান নামক দরজা থাকবে, যার ভেতর দিয়ে কেবল রোজাদাররা বেহেশতে প্রবেশ করবে। এ ছাড়া অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না।’ (বোখারি : ৩৪০৪)। রমজান মাসে সারা দিন রোজা রেখে যখন বান্দা ইফতারি সামনে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করে, সেই দৃশ্য দেখে আল্লাহ পরম আনন্দ লাভ করেন। আর ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করতে থাকেন। সংযম এবং আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ হিসেবে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।

যাদের ওপর রোজা ফরজ :  ১. মুসলমান হওয়া। কোনো কাফেরের ওপর রোজা ফরজ নয়। ২. বালেগ হওয়া। নাবালেগের ওপর রমজানের রোজা ফরজ নয়। তবে অভ্যস্ত করার জন্য তাদের উৎসাহিত করা উচিত। তারা নামাজ রোজা পালন করলে তাদের মা-বাবা এর সওয়াব লাভ করবে। ৩. রমজানের রোজা প্রত্যেক বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির ওপর ফরজ হওয়ার কথা জ্ঞাত থাকা। ৪. রোজা রাখতে অক্ষম না হওয়া। ৫. সজ্ঞান হওয়া। পাগল বা উন্মাদের ওপর রোজা ফরজ নয়।

যে কারণে রোজার কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব হয় : ১. নিয়ত সহকারে রোজা রেখে স্বেচ্ছায় ভেঙে ফেলা। ২. কেউ কাম-উত্তেজনার সঙ্গে যৌনকর্মে বা সমকামিতায় লিপ্ত হলে। ৩. পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ নারীর গুপ্তাঙ্গের ভেতর প্রবেশ করলে, এমতাবস্থায় বীর্যপাত হোক বা না হোক। ৪. কোনো রুচিহীন ব্যক্তি যদি তার পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে প্রবেশ করায়, তাহলে উভয়ের রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। ৫. স্ত্রী যদি ঘুমন্ত বা বেহুশ অবস্থায় থাকে আর স্বামী তার সঙ্গে সঙ্গম করে, তাহলে স্বামীর ওপর কাজা কাফফারা ওয়াজিব হবে।

রোজার কাফফারা : ১. রমজান মাসের রোজার কাফফারা হলো, একটি রোজার জন্য কোনো প্রকার বিরতি ছাড়া ৬০ দিন ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখা। ২. যদি কারো কাফফারার রোজা আদায়ের শক্তি না থাকে, তাহলে একটি ফরজ রোজার জন্য ৬০ জন গরিব-মিসকিনকে দুবেলা পেটভরে খাওয়াবে। অথবা একজন মিসকিনকে ৬০ দিন দুবেলা খাওয়াবে। ৩. প্রত্যেক মিসকিনকে প্রত্যহ এক সদকায় ফিতরের পরিমাণ আটা বা গম দেবে কিংবা আটা বা গমের দাম দেবে। একই রমজান মাসে একাধিক রোজা ভেঙে থাকলে একটি কাফফারাই ওয়াজিব হবে।

যে কারণে রোজা মাকরূহ হয় : ১. বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছু চিবানো। ২. গিবত বা পরদোষ চর্চা করা। ৩. ঝগড়া-বিবাদ করা। ৪. অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করা। ৫. মিথ্যা বলা। ৬. কাউকে কষ্ট দেওয়া। ৭. টুথ পাউডার, পেস্ট, কয়লা বা মাজন দিয়ে দিনের বেলা দাঁত মাজা। ৮. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে থুতু জমা করে গিলে ফেলা। ৯. সারাদিন নাপাক অবস্থায় থাকা। ১০. বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করা। ১১. ঘাবড়ে যাওয়া বা অস্থিরতা প্রকাশ করা। ১২. কুলি বা নাকে পানি দেওয়ার সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা। ১৩. রোজা অবস্থায় এমন কোনো কাজ করা, যাতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোজা ভেঙে ফেলার আশঙ্কা হয়। ১৪. অশ্লীল গান-বাদ্য শ্রবণ করা। ১৫. কুদৃষ্টি থেকে চোখের হেফাজত না করা।

যে কারণে রোজা নষ্ট হয় না : ১. রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে। ২. জিহ্বা দ্বারা রান্না করা কোনো খাদ্যদ্রব্যের লবণের পরিমাণ পরীক্ষা করে থুতু ফেলে দেওয়া। ৩. অনিচ্ছাকৃতভাবে মশা-মাছি, ধুলাবালি ও গাড়ির ধোঁয়া গলার ভেতর প্রবেশ করলে। ৪. রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার বা যৌনাচার করলে। ৫. রোজা অবস্থায় শরীরে বা মাথায় তেল ব্যবহার এবং চোখে সুরমা লাগালে। ৬. আতর বা অন্য কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করলে। ৭. ডুব দিয়ে গোসল করলে।

ইসলামে নর-নারী সবার জন্য রমজানে রোজা ফরজ করা হলেও স্থান-কাল-পাত্র ও ক্ষেত্র বিশেষ এর মধ্যে শিথিলতা রয়েছে। যেমন- রুগ্ণ ব্যক্তি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গর্ভবতী নারী, ঋতুবতী নারী, প্রসূতি এবং প্রবাসী প্রমুখের ব্যাপারে রোজার বিধিবিধান অনেক সহজ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলাম রোজাদারকে অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন, উশকখুশক, উদাসীন, মানসিক অস্থিরতাসম্পন্ন থাকার অনুমতি দেয়নি। বরং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, আতর, সুগন্ধি, সুরমা ইত্যাদি ব্যবহার করা রোজাদারের জন্য বৈধ ও উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে মানুষের আত্মশুদ্ধি হয়ে থাকে। তবে রোজার ভূমিকা এখানে অপরিসীম। কারণ রোজা রিয়া বা লোকপ্রদর্শনী থেকে মুক্ত। আল্লাহ আমাদের মাহে রমজানের সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে রোজাগুলো ঠিকমতো পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : শিক্ষা সচিব, বাইতুন নূর মাদরাসা, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads