• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ও আল্লামা মাহমুদুল হাসান

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

তাবলিগ নিয়ে চলমান সঙ্কট নিরসনে দিকনির্দেশনা

  • প্রকাশিত ০৮ জুন ২০১৮

রমজানের রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম-অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো মাহে রমজান। উম্মতে মোহাম্মদীর নৈতিক চরিত্র উন্নত করে সাহাবায়ে কেরামের মতো আদর্শ জীবন গঠনের প্রশিক্ষণ এ মাসেই গ্রহণ করতে হবে। রোজা মানুষকে প্রকৃত ধার্মিক হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যাবতীয় অকল্যাণকর কাজকর্ম থেকে বিরত হয়ে সংযম সাধনার পথ ধরে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও মতভিন্নতা ভুলে সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ, ঐক্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে দাওয়াত ও তাবলিগের ভেতরে কিছু মতভিন্নতা নিয়ে বেশ অস্থিরতা চলছে। আল্লাহতায়ালা তার শেষ রসুলকে (সা.) যে মৌলিক চারটি কাজ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার মধ্যে একটি হলো দাওয়াতের কাজ। যুগে যুগে দাওয়াতের এই কাজ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চলে এসেছে। বিগত একশ বছর ‘দাওয়াত ও তাবলিগ’ নামে সারা পৃথিবীতে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। সময়ের পরম্পরায় আজ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাবলিগী চিন্তার কোটি মানুষ। কোটি মানুষের হƒদয়রাজ্য দখল করে আছে তাবলিগ। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঈমান ও কালেমার দাওয়াত নিয়ে পৃথিবীময় কাজ করে যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের দরদ নিয়ে এই মহৎ কাজ শুরু করেছিলেন হজরত ইলিয়াস রহমাতুল্লাহি আলাইহি। শতাব্দী ধরে চলে আসা এই কাজে মানুষ নিজের জান-মাল-সম্পদ ও সময় খরচ করে দ্বীন শিখছে এবং অন্যকে এই নির্মল কাজে শরিক করছে। সম্প্রতি তাবলিগের নীতিনির্ধারণী মহলে বেশকিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে মান-অভিমান, মনোমালিন্য এবং মতপার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। যা বর্তমানে চরম সঙ্কট হিসেবে সামনে আসছে। যার প্রভাব দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক মারকাজগুলোতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে দিল্লির তাবলিগের মূল মারকাজকে কেন্দ্র করে এর পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রুপ অবস্থান নিয়েছে। একপক্ষ চলে যাচ্ছে নিজামুদ্দিনের পক্ষে আর অপরপক্ষ এর বিরোধিতা করছে। যার জেরে বেশকিছু মারকাজে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। ফলে প্রশাসনের সেখানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো মারকাজ বন্ধও করে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগে কাকরাইল মসজিদে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে প্রশাসন তাবলিগে সাথীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় নিরাপত্তার স্বার্থে। ফলে সামগ্রিকভাবে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের প্রতি জনসাধারণের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

 

সবার উচিত মতপার্থক্য ভুলে একসঙ্গে কাজ করা : আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ

তাবলীগের সুরার পাঁচ উপদেষ্টার অন্যতম সদস্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ এ বিষয়ে বলেন, রমজান সংযমের মাস, আমি সবাইকে এই মাসে সংযমী হতে বলব। উভয় পক্ষ নিজেদের মতপার্থক্য ভুলে একসঙ্গে যেন কাজ করে। কিছু কিছু বিষয়ে ভিন্নমত ও মতপার্থক্য থাকবেই। এ মতপার্থক্যের মধ্যেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীনের এই কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর যে সমস্যাটা সামনে আসছে, এটা তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়। তারা নিজেরাই এর সমাধান করে নিলে ভালো হবে। আমি এক্ষেত্রে একটি কথা বলব যে, এক্ষেত্রে যেন তৃতীয় কোনো পক্ষ অনুপ্রবেশ ও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ উম্মতের একটি বড় কাজ। যা পৃথিবীময় ছড়িয়ে আছে। এটি কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা চলমান রাখবেন। তাবলিগের এই সঙ্কট সাময়িক। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি খাঁটি দ্বীনের মেহনত। কোটি মানুষের জীবন বদলের অন্যতম একটি মাধ্যম। আল্লাহতায়ালা এই মহান কাজকে নষ্ট করবেন না। ধীরে ধীরে সব সঙ্কট কাটিয়ে তাবলিগ তার নিজস্ব গতিতে স্বমহিমায় চলবে। সর্বোপরি মাহে রমজানের যে শিক্ষা, সংযমী হওয়া এটাকে ধারণ করে উভয় পক্ষ নিজেদের মতপার্থক্য ভুলে সবার অংশগ্রহণ, আন্তরিক সহযোগিতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এই কাজে মনোনিবেশ করবে। ঈমান ও কালেমার শাশ্বত বাণীকে দুনিয়াময় ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রতে উম্মাহর স্বার্থে সব মতপার্থক্য ভুলে এবং মনোমালিন্য ঘুচিয়ে সবাই সম্মিলিত হোক ঐক্য ও সম্প্রীতির প্লাটফর্মে।  

 

উভয় পক্ষই আন্তরিক ও সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছেন : আল্লামা মাহমুদুল হাসান 

জানতে চাইলে তাবলিগের সুরার পাঁচ উপদেষ্টার আহ্বায়ক জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও গুলশান আজাদ মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, এটা বড় কোনো সমস্যা মনে হচ্ছে না। এত বড় একটা কাজে ছোটখাটো সমস্যা হতেই পারে। তবে এটা স্থায়ী নয়। কিছু সমস্যা থাকলে সেটাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিটে যাবে। উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক এবং তাবলিগের সাথীরাও খুবই আন্তরিক। আল্লাহতায়ালার রহমতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ খুবই স্পর্শকাতর, তাই এ বিষয়ে তারা খুব বিচলিত হয়ে পড়ে। তবে এটা তেমন জটিল এবং স্পর্শকাতর কোনো বিষয় নয়। উভয় পক্ষই এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক এবং সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় কাজ। কিছু এদিক সেদিক হতেই পারে। মিল-মহব্বতের সাথে কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

 

লিখেছেন : আশরাফুল্লাহ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads