• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বছরের মাথায় সংশোধন হচ্ছে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প

প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে

সংরক্ষিত ছবি

ধর্ম

অর্থ দিচ্ছে না সৌদি আরব

বছরের মাথায় সংশোধন হচ্ছে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প

·নিজস্ব অর্থায়নেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ · কাল একনেকে উঠছে প্রস্তাব

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৫ জুন ২০১৮

প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে নেওয়া প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছিল গত বছরের এপ্রিলে। ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ৮ হাজার ১৬৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সৌদি আরব থেকে সহায়তা হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল সরকারের। তবে একটি পয়সাও পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় অনুমোদনের মাত্র এক বছরের মাথায় প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার এর সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে উপস্থাপনের কথা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুমোদনের কয়েক বছরের মাথায় বাস্তবায়নের গতি পর্যালোচনা করে প্রকল্প সংশোধনের রেওয়াজ। সাধারণত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে ও বড় কোনো অঙ্গ যোগ-বিয়োগে ব্যয় সমন্বয় করতে প্রকল্প সংশোধন করা হয়ে থাকে। তবে এ প্রকল্পটির সংশোধন প্রক্রিয়া অভিনব। এক বছরের মাথায় প্রকল্প সংশোধনের নজির পরিকল্পনা কমিশনে খুব কম আছে বলে দাবি করছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ আবদুল হামিদ জমাদ্দার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সৌদি আরব থেকে অর্থ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। এতে মসজিদের সংখ্যা, মসজিদগুলোর মৌলিক কাঠামোর উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তা ছাড়া প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পটির মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে ব্যয় অপরিবর্তিত থাকবে।

অবশ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (উন্নয়ন) মো. সাখাওয়াত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ব্যয় কিছুটা কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। মূল প্রকল্পে মসজিদগুলোয় লিফটের ব্যবস্থা থাকলেও সংশোধিত প্রকল্পে তা আর থাকছে না। পরে টাকা মিললে লিফট স্থাপন করা হবে। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় ৪৫০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকা কমবে বলে তিনি মনে করেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে ১০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। পরে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এগুলো নির্মাণ করবে গণপূর্ত অধিদফতর।

২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে কাগজে-কলমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছর এর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তবে সৌদি সরকার অর্থছাড় না করায় সংশোধিত বাজেটে এর আওতায় বরাদ্দ নামিয়ে আনা হয় ৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকায়। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা এ প্রকল্পে ৩৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। একনেকে সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এর কাজ শেষ করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলা সদর ও পাঁচ সিটি করপোরেশনে চারতলা এবং ৪৭৫ উপজেলা সদরে তিনতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া উপকূলীয় ১৬টি এলাকায় নিচতলা ফাঁকা রেখে চারতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা হবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রক্রিয়াধীন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোয় বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় নিচতলা দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে। এসব মসজিদে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৪০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ নারী নামাজ পড়ার সুবিধা পাবেন।

মসজিদে ৩৪ হাজার পাঠকের জন্য পাঠাগারের সুবিধা রাখা হয়েছে। এসব পাঠাগারে প্রতিদিন ৬ হাজার ৮০০ গবেষক গবেষণা করতে পারবেন। প্রতিদিন ৫৬ হাজার মুসল্লির জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধা থাকবে। প্রতিবছর ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর কোরআন হিফজ করার সুবিধা ছাড়াও ১৬ হাজার ৮০০ শিশুর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। এ ছাড়াও ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসনের সুবিধাও থাকবে এসব কেন্দ্রে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের অধিকাংশ স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান সরকারের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে লাইব্রেরি, গবেষণা কক্ষ, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, শিশুশিক্ষা কার্যক্রম, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক নামাজ কক্ষ, দেশি-বিদেশি মেহমানদের আবাসনব্যবস্থা, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইত্যাদি সুবিধাসংবলিত মডেল মসজিদ নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৬ সালে জুনে সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশটির বাদশাহর সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সৌদি সরকার এ প্রকল্পে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। পরে ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে এ প্রকল্পের অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ১৬৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সৌদি সরকারের দেওয়ার কথা। বাকি ৮৯২ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads