• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ইসলামে পরিবেশ  সংরক্ষণ ও বনায়ন

পৃথিবীর মূল সম্পদ হলো ভূমি, পানি ও পরিবেশগত বৈচিত্র্য

ছবি: প্রতীকী

ধর্ম

ইসলামে পরিবেশ  সংরক্ষণ ও বনায়ন

  • প্রকাশিত ২৭ জুলাই ২০১৮

প্রকৃতি মানুষ ছাড়া বাঁচতে পারে, মানুষ প্রকৃতি ছাড়া বাঁচতে পারে না। পৃথিবীর মূল সম্পদ হলো ভূমি, পানি ও পরিবেশগত বৈচিত্র্য। আর পরিবেশ-বৈচিত্র্যের অন্যতম কারিগর উদ্ভিদ। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ বৃক্ষ ছাড়া কল্পনা করা যায় না। আল্লাহতায়ালা প্রাকৃতিক পরিবেশকে মানুষের জন্য সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে পৃথিবীর মানুষকে প্রাকৃতিক-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দিকনির্দেশনা দিয়ে ঘোষণা করেছেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান। তখন তারা আনন্দিত হয়’। (সুরা রূম, আয়াত ৪৮)।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তাতে উদ্গত করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ। আল্লাহর অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশ স্বরূপ’ (আল কোরআন, ৭-৯) জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনে আমাদের বেশি করে বনায়ন করার নির্দেশ আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যিনি (অর্থাৎ আল্লাহ) তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে (শক্তি) আগুন উৎপাদন করে দিয়েছেন, সে মতে তোমরা তা থেকে (নিজেদের) আগুন জ্বালিয়ে নিতে পার।’ (সুরা রাসান, আয়াত-৮০) পবিত্র  কোরআনে আরো ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা যে অগ্নি প্রজ্বলিত কর তা লক্ষ করে দেখছ কি? তোমরাই কি অগ্নি উৎপাদন বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি? আমি একে করেছি নিদর্শন এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্ত্র। (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত,৭১/৭৩)। পবিত্র কোরআনে মানুষের জন্য আল্লাহপাকের অসংখ্য নিয়ামত প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে (ভালোভাবে) বিদারিত করি এবং আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, জায়তুন, খেজুর, বহুবৃক্ষ, বিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদিপশুর খাদ্য, এটা তোমাদের এবং তোমাদের পশুগুলোর ভোগের জন্য। (সুরা আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)

কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কিছু দৃশ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে এর বিচিত্র প্রকার বর্ণ, গন্ধ ও সৌন্দর্য দেখে মানুষ পুলকিত ও অভিভূত হয়। যেন সবকিছুর উন্নতি, অগ্রগতি ও সক্রিয়তা দেখে মানুষ আল্লাহর কুদরতের কথা স্মরণ করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য তা (পানি) দিয়ে জন্মান শস্য, জায়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা নাহল, আয়াত-১১)। হজরত রসুল (সা.) বৃক্ষরোপণকে সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হজরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, হজরত রসুল (মা.) বলেছেন, মানুষ, পাখি বা পশু তাদের আহার্য গ্রহণ করে তখন তা তার (রোপণকারী) পক্ষে একটি সদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয় (বুখারি-মুসলিম শরিফ)। বন ও বন্য পশু-পাখি আল্লাহপাকের দান ও প্রকৃতির শোভাবর্ধক। তাই রসুলুল্লাহ (সা.) এগুলোর সংরক্ষণের ওপরও বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি মক্কা মোকার্রমা ও মদিনা মনোয়ারার একটি বিশেষ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছিলেন। ওইসব এলাকায় গাছপালা কাটা এবং সেখানে বন্য পশু-পাখি শিকার করা আজো নিষিদ্ধ। মুসলিম বিজয়ীরা যে দেশে গেছেন, সে দেশকে গাছপালা দ্বারা সবুজ করে তোলার চেষ্টা করেছেন। প্রধানত কোরআন মজিদ ও হাদিস শরিফ থেকে তারা এ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। মুসলিম ইতিহাসে এর যথেষ্ট নজির রয়েছে। কৃষির উন্নয়ন ও সংরক্ষণের প্রতি মুসলিম খলিফাগণ সব সময় সজাগ ও সচেষ্ট ছিলেন। একসময় এক ব্যক্তি হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে অভিযোগ করেন, সিরিয়ায় একটি শস্যক্ষেত ছিল এবং মুসলিম সৈন্যরা এদিকে যাওয়ার সময় সেটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। হজরত ওমর (রা.)-এর অভিযোগ শোনামাত্র ওই ব্যক্তিকে তার শস্যক্ষেতের ক্ষতিপূরণস্বরূপ বায়তুল মাল থেকে দশ হাজার দিরহাম দান করেন (কিতাবুল খেয়াজ)।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

লেখক : সাংবাদিক ও সংগঠক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads