• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি চাঁদ

চাঁদ আল্লাহতায়ালার এক অপরূপ সৃষ্টি

ছবি: সংগৃহীত

ধর্ম

আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি চাঁদ

  • প্রকাশিত ২৭ জুলাই ২০১৮

চাঁদ আল্লাহতায়ালার এক অপরূপ সৃষ্টি। এটা বিশেষ নিয়মে মানব কল্যাণার্থে আসমানের মহাশূন্যে নির্দ্বিধায় বাধা বন্ধনহীন অবস্থায় সন্তরণ করছে। আলোকহীন চাঁদ সূর্যের আলোয় আলো আলোকিত হয়ে এ পৃথিবীর বুকে আলো বিকিরণ করছে। এ চাঁদের মাঝে দার্শনিকদের ভাবনা, কবিদের কল্পনা, বৈজ্ঞানিকদের আবিষ্কার লুক্কায়িত আছে। চাঁদ প্রাচীন কালের, জনগণের দেব বা দেবী নয়। এটা লা-শরিক আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা মানুষের পার্থিব জগতের জীব-জানোয়ারের উপকারার্থে স্রষ্টার আনুগত্য স্বীকার করে তার নির্ধারিত কক্ষে পরিভ্রমণ করছে। আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি-রহস্য বোঝা বড় কঠিন। মানুষ অতীত কাল থেকেই অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে অসীমের সন্ধানে তৎপর হয়েছে। জানতে চেয়েছে সৃষ্টি-রহস্য, খুঁজে পেতে বের করতে চেয়েছে সৌরজগতের গতিপ্রকৃতি। আসমান-জমিন, নক্ষত্র-তারকা, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহ, নীহারিকা, ছায়াপথ, সবুজ-বনানী, সাগর-নদী, পাহাড়-পর্বত প্রভৃতি যাবতীয় সৃষ্টির গতিপ্রকৃতি জানতে চেয়েছে। মানুষের অনুসন্ধিৎসার শেষ নেই। আদিকাল থেকে সে গবেষণা করেই চলেছে। বৈজ্ঞানিক তথ্যমতে, চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবী থেকে এর গড় দূরত্ব ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। এ ছাড়া পৃথিবী থেকে এর নিকটতম দূরত্ব ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪১০ কিলোমিটার। নিজ অক্ষরেখার চারদিকে চাঁদের অবর্তন কাল এবং পৃথিবীর চারদিকে এর পরিক্রমণকাল একই। এ কারণেই পৃথিবী থেকে চাঁদের কেবল এক পিঠই দেখা যায়। অপর পিঠ কখনোই দেখা যায় না। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অ্যাপোলো-৮ নভোযানযোগে চাঁদ প্রদক্ষিণকালে তিনজন মার্কিন নভোচারী সর্বপ্রথম চাঁদের অপর পিঠ দেখেন। চাঁদ সাড়ে ঊনত্রিশ দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। চাঁদ যখন পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে অবস্থান করে, তখন অমাবস্যা হয়। অন্যদিকে পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে অবস্থান করে, তখন পূর্ণিমা হয়। চাঁদের বুকে বেশকিছু সমভূমি, পাহাড়-পর্বত এবং বিরাট বিরাট গর্ত আছে। যে পরিমাণ সূর্যের আলো চাঁদের পিঠে পড়ে, তার শতকরা ৭ ভাগ প্রতিফলিত হয়। পৃথিবীর কেন্দ্র এবং পানির ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণের পার্থক্যের কারণে জোয়ার ভাটা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে অবশ্য সূর্যের আকর্ষণের চেয়ে চাঁদের আকর্ষণ সোয়া দুই গুণ বেশি। চাঁদের এ আকর্ষণ শক্তি স্থলভাগের কেন্দ্রস্থলে ও ভূপৃষ্ঠের জলরাশির ওপর কার্যকর। আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সামনে আসে, সেই অংশে এবং তার বিপরীত অংশে সমুদ্রের পানি ফুলে উঠলে জোয়ার হয়। স্থান দুটির মাঝামাঝিতে সমকোণে অবস্থিত অন্য স্থান দুটিতে পানি নেমে ভাটা হয়।

চাঁদ সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান বিভিন্ন তথ্যসূত্র দিলেও তাদের এ তথ্যসূত্র সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনই সর্বপ্রথম মানবজাতির সামনে তুলে ধরেন। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো বা জ্যোতি নেই। সূর্যের আলো গ্রহণ করে চাঁদ আলোকিত হয়। এই মহা সত্য কথাটি আল-কোরআনই সর্বপ্রথম মানবমণ্ডলীর সামনে তুলে ধরেন। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে পবিত্র আল-কোরআনে বলেন, ‘তিনি সূর্যকে প্রজ্বলিত ও চাঁদকে আলোকিত করে সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা ইউসুফ)।

এ ছাড়া আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘কত মহান তিনি, যিনি মহাকাশে সৃষ্টি করেছেন রাশিচক্র এবং এত সাপন করেছেন একটি প্রোজ্জ্বল ও একটি আলো বিকিরণকারী চন্দ্র’ (সুরা ফুরকান, ৬১ আয়াত)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি লক্ষ করো না, আল্লাহ কীভাবে সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে বিন্যস্ত আকাশমণ্ডলী এবং সেথায় চন্দ্রকে করেছেন আলোকিত ও সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপরূপে’ (সুরা নূহ : ১৫-১৬ আয়াত)।

সাম্প্রতিক কালের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এটা পরীক্ষিত সত্য যে, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। আমরা চাঁদ থেকে যে আলো পাই, তা মূলত চাঁদ কর্তৃক প্রতিফলিত সূর্যেরই আলো। মহাকাশ থেকে দেখলে পৃথিবীকেও চাঁদের মতো আলোকিত দেখা যায়, তবে নীলাভ আলোর বলয়ে দেখা যায়। সে আলোও পৃথিবী কর্তৃক প্রতিফলিত সূর্যেরই আলো, পৃথিবীর নিজস্ব আলো নয়। যাহোক, সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় হলো- বিজ্ঞান চাঁদ সম্পর্কে যে তথ্য দিচ্ছে, মহাগ্রন্থ আল-কোরআন সেই বিজ্ঞানময় তথ্য অনেক আগেই দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, চাঁদ ও সূর্য যে পৃথিবীর মতোই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে এবং সেই সঙ্গে নিজেরাও ঘুরপাক খাচ্ছে, এই ব্যাপারটি বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে একান্ত হাল আমলে। অথচ দেড় হাজার বছর আগেই পবিত্র কোরআনে এ কথাটাই বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু  মানুষ বিষয়টি বুঝতে পারেনি। চাঁদ নিয়ে কোরআন বিভিন্ন আলোচনা করেছে, চাঁদ সম্পর্কে বাইবেলেও বলা হয়েছে, চাঁদ ও সূর্য উভয়ই লাইট বা আলো তবে সূর্য হচ্ছে বড় আলো আর চাঁদ হচ্ছে ছোট আলো। কিন্তু চাঁদ বা সূর্যের আলো যে এক নয়—বিশেষত সূর্যের আলো যে তার নিজের আলো এবং চাঁদের আলো যে তার নিজের আলো নয়, সে কথা বাইবেলে বলা হয়নি। কিন্তু মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কোরআনের ভাষায় সূর্য হলো ‘দিয়া’ অর্থাৎ বাতি বা জ্বলন্ত প্রদীপ যেখানে আগুন রয়েছে, আর চাঁদ হচ্ছে নূর বা শুধু আলো। পবিত্র কোরআনে চাঁদকে মানুষের কর্মকাণ্ড এবং হজের তারিখ ও সময় নির্ধারণের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই তো আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘লোকে যদি তোমাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, বলো- এটা মানুষ এবং হজের জন্য সময় নির্দেশক।’ (২, ১৮৯) ইসলামী মাস চাঁদকে কেন্দ্র করেই হয়, যার কারণে নতুন চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্র মাস শুরু হয় এবং চাঁদের ক্রম পর্যায়ে চান্দ্র মাসের দিন বাড়তে থাকে। তাই বলা যায়, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন একটি সরল বর্ষপঞ্জি করেছেন, যা সহজেই দেখা ও বোঝা যায়। সহজ বোধ্যতার কারণেই এই ইসলামী ক্যালেন্ডারের গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনীন।

চাঁদকে নিয়ে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা- বিনে হারব ও আরদ ইবনে হুমায়দ (রহ.) আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কাবাসী লোকেরা প্রিয়নবী (সা.)-এর কাছে তাদের একটি নিদর্শন দেখানোর দাবি করল। তিনি তাদের দুবার চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার নিদর্শন দেখালেন (মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, ৩০০ পৃষ্ঠার ৬৮১৮ নং হাদিস)। চন্দ্র রসুল (সা.)-এর হাতের ইশরায় দিখণ্ডিত হয় আবার তা পরক্ষণেই জোড়া লেগে যায়। এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় ১৯৬৯ সালে মার্কিন নভোচারীরা চাঁদে গেলে। সেখানে গিয়ে চাঁদের ফাটল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা বুঝতে পারলেন ওই ফাটলের বয়স হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মুজিজা প্রদর্শনের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়। এ ঘটনাটি প্রথম নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং এবং জেমস আর উইনের মনে দারুণভাবে নাড়া দেয় এবং তারা ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ছিদ্দিকী

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads