• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বালিকা মাদরাসা

দেশের আনাচে-কানাচে দ্বীনের আলো পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই এ মাদরাসার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

সংরক্ষিত ছবি

ধর্ম

নারীদের দ্বীন শেখার আদর্শ প্রতিষ্ঠান

খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বালিকা মাদরাসা

  • প্রকাশিত ১০ আগস্ট ২০১৮

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ

ইসলাম জ্ঞানের ধর্ম। কোরআনের প্রথম বাণী ‘ইকরা’ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘পড়’। প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) জ্ঞানচর্চাকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত ঘোষণা করেছেন। জ্ঞান বা ইলমের প্রকৃত উৎস মহাগ্রন্থ কোরআন ও হাদিসে নববী (সা.)। নারী-পুরুষ নিবিশের্ষে জ্ঞান শিক্ষা করা ফরজ। ইসলামের এ বিধান বাস্তবায়নে নারীদের কোরআন ও সুন্নাহর জ্ঞানে আলোকিত করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বালিকা মাদরাসার।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : কোরআন-হাদিস তথা ইসলামী শরিয়তের ইলম শিক্ষা দিয়ে মুসলমান সন্তানদের যোগ্য আলেম, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন আদর্শ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। অশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির কুড়াল গ্রাসে আক্রান্ত এই সমাজের ঘরে ঘরে দ্বীনের আলো পৌঁছে দিয়ে ইসলামী সমাজ গঠনে অবদান রেখে দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদরাসা/মক্তব স্থাপন করা এবং এমন যোগ্যতাসম্পন্ন আলেমা, শিক্ষিকা তৈরি করা, যারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে দ্বীনের আলো পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই এ মাদরাসার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। 

প্রধান পাঠ্যভুক্ত বিষয় : ১. কোরআন (বিশুদ্ধ পাঠ, অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও তাফসির)। ২. হাদিস ও উলূমুল হাদিস। ৩. সিরাতুন্নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামসহ আকাবিরে উম্মাহর জীবনী। ৪. ফিকাহ ও উসূলে ফিকহ। ৫. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। ৬. আল লুগাহ আল-আরাবিয়্যাহ ওয়াল আদাব।

বিশেষ প্রশিক্ষণ : ঘরের কাজ : নারীদের প্রধানত যে কাজটি করতে হয়, সেটা হচ্ছে ঘরের কাজ। ঘরের কাজের মধ্যে রান্নার কাজটা অন্যতম একটি কাজ। এই মাদরাসায় ঘরের কাজ শেখানোর জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। সেলাই প্রশিক্ষণ : ঘরের কাজের অন্যতম একটি বিষয় হলো সেলাই। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কাজটা যেন শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে শিখতে ও করতে পারেন, সেজন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হামদ-নাত প্রশিক্ষণ : ছাত্রীদের মধ্যে যারা হামদ-নাত শিখতে চায়, তাদের জন্য হামদ-নাত শেখার ব্যবস্থা রয়েছে। যাদের গলার কণ্ঠ খুবই সুন্দর এবং তারা হামদ-নাত শিখতে আগ্রহী- মাদরাসার পক্ষ থেকে তাদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

IMG_4405

হাফেজ মাওলানা মাসুম বিন আবুল ফাতাহ

প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল

মাদরাসার অর্জন : দীর্ঘ ৬ বছরে মাদরাসার রয়েছে বেশকিছু অর্জন। প্রতিষ্ঠানের হিফজ বিভাগের ছাত্রীরা ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ হুফ্ফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশনের দক্ষিণ ভোলা, চরফ্যাশন শাখার অধীনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। ঐ বছর প্রতিযোগিতায় পাঁচ পারা গ্রুপে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রতিযোগিতায় দশ পারা গ্রুপে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছে এবং ২০১৮ সালে প্রতিযোগিতায় পাঁচ ও দশ পারা গ্রুপে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়সহ মোট ১২টি পুরস্কার অর্জন করেছে।         

বিশেষ বৈশিষ্ট্য : ১. খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বালিকা মাদরাসা হেদায়া জামাত পর্যন্ত। যাদের কোরআন পড়া সহিহ-শুদ্ধ নয়, তাদের প্রথম সহিহ-শুদ্ধ করে কোরআন পড়া শিক্ষা দেওয়া হয়। এরপর অন্য কিছু পড়ানো শুরু করা হয়। ২. আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রত্যেক সোমবার মাদরাসায় বিভিন্ন মাদরাসার মুহতামিমরা আসেন এবং মাদরাসার ছাত্রীদের উদ্দেশে ইসলামী বয়ান করেন। একজন মা শিক্ষিত ও ভালো হলে একটি পরিবার ভালো হতে বাধ্য। তাই এই মাদরাসার ছাত্রীদের জন্য এ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন যারা : ১. মাওলানা ফয়জুল্লাহ্ (দা. বা.), মুহতামিম, দারুল উলুম মাদানীনগর মাদরাসা, ঢাকা। ২. মাওলানা আবদুর রহমান (দা. বা.), ইমাম প্রভাতিবাগ জামে মসজিদ, ঢাকা। ৩. মাওলানা আনাছ (দা. বা.), সভাপতি ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া আঞ্চলিক বোর্ড, ভোলা।

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল যা বললেন : খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বালিকা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মাসুম বিন আবুল ফাতাহ। তিনি বাংলাদেশ তাবলীগ জামাতের অন্যতম মুরুব্বি মাওলানা আবুল ফাতাহ সাহেবের সুযোগ্য সাহেবজাদা। মাদরাসা প্রসেঙ্গ তিনি বলেন, আমাদের বাড়ির সঙ্গেই বাবার প্রতিষ্ঠিত হেদায়া পর্যন্ত একটি মাদরাসা আছে। সেখানে শুধু ছেলেরা লেখাপড়া করে। তাই আমার মায়ের ইচ্ছায় একটি বালিকা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করলমা। তিনি তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে আমাকে দিয়েছেন, যেন আমি একটি বালিকা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করি। মায়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আমার বোনেরাও তাদের সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। মূলত মায়ের এই ইচ্ছা ও সবার সহযোগিতা থেকেই আমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দিই। প্রথমে আমার ইচ্ছা ছিল ঘরোয়াভাবে একটি মাদরাসা করব; কিন্তু এখন আমি স্বপ্ন দেখছি এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্বমানের হাফেজা ও আলেমা তৈরি হবে। তাদের বিশ্বমানের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাবো। আল্লাহ যেন আমার ইচ্ছা কবুল করেন- এটাই আমার কামনা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads